
খুলনা প্রতিনিধি: খুলনার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে চিকিৎসা না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগী ও তার স্বজনরা। সেই সাথে করোনা উপসর্গ জ্বর, সর্দি-কাশির চিকিৎসায় ব্যবহৃত সব ধরনের ওষুধের দাম বেড়েছে। বেসরকারি ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নীরিক্ষা ও অপারেশন ব্যয়ও বেড়েছে কয়েকগুন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ রোগীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত গৃহবধূ আবিদা বেগম (৪২) গত তিনদিন ধরে ভর্তি ছিলেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু করোনার কারণে ওয়ার্ডে বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক না আসায় স্বজনরা তাকে বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে সকাল থেকে রোগীর গায়ে জ্বর থাকায় কেউ ভর্তি নিতে রাজি হচ্ছিল না। পরে বেলা দেড়টার দিকে তাপমাত্রা ১০২’র নীচে নামলে ‘করোনা নেই’ সনদ দেওয়ার শর্তে খুলনার গাজি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে ভর্তি নেওয়া হয়। স্বজনদের অভিযোগ, তিনদিন আগে খুমেক হাসপাতালে এই রোগীর সিটি স্ক্যান করা হয়েছিল, কিন্তু তার রিপোর্ট এখনো তারা হাতে পাননি। এভাবে খুলনার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগী ও তার স্বজনরা। জানা যায়, খুমেক হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা না পেয়ে অন্তত: ৬১ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল একদিনেই করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যায় চারজন। অভিযোগ রয়েছে, এই ওয়ার্ডে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকেন না। করোনা ইউনিট হওয়ায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও আসেন না। ফলে এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।
জানা যায়, চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্রাকটিস বন্ধ করে দেওয়ায় অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি প্রায় বন্ধ রয়েছে। ঝামেলা এড়াতে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি আইসিইউ সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে কয়টি ক্লিনিকে অপারেশন চালু আছে, সেখানে নানা সংকটের কথা জানিয়ে রোগীর নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে।
নগরীর শেখপাড়া এলাকার বাসিন্দা কামরুল হোসেন বলেন, খুলনায় করোনা উপসর্গ জ্বর, সর্দি-কাশিতে ব্যবহৃত প্যারাসিটামল ও অ্যান্টিবায়োটিকের দাম কয়েকগুন বেড়েছে। ‘ওষুধের সরবরাহ নাই’ জানিয়ে ফার্মেসীগুলোতে দাম বেশি রাখা হচ্ছে। রোগীর সিটি স্ক্যানসহ সব ধরনের পরীক্ষা-নীরিক্ষায়ও ব্যয় বেড়েছে। উপায় না থাকায় বাধ্য হয়েই হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে নিঃস্ব হচ্ছে রোগীরা স্বজনরা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন’র জেলা সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং না থাকায় বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবায় এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর পিছনে বানিজ্যিক মানসিকতা কাজ করছে। বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকের চিত্রটা আরও ভয়াবহ। চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্রাকটিস বন্ধ করে দেওয়ায় করোনা আক্রান্ত না হয়েও অসংখ্য রোগী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।