
= মিডিয়ায় খবর প্রকাশ ও পাল্টাপাল্টি ফেসবুক লাইভ সম্প্রচার।
= পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও পদত্যাগের ঘোষণা।
= মহিলা মেম্বর কর্তৃক চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে শাস্তি দেয়ার হুংকার।
= নোংরা রাজনীতির দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়ার ঘোষণা চেয়ারম্যানের।
= ঘোড়ার সাথে ভেড়ার তুলনা করেন মেম্বর।
= মেম্বরদের আয়ের উৎস্য নিয়ে চেয়ারম্যানের প্রশ্ন উত্থাপন।
= উপ-নির্বাচন নিয়ে মেম্বরের প্রশ্নবোধক বক্তব্য।
= প্রমাণ না দিতে পারলে আইনানুগ ব্যবস্থা।
= ভাতা বানিজ্যের সুযোগ না পেয়ে মেম্বররা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধাচারন করছে।
= মেম্বররা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে।
= সঠিক তদন্ত চায় উভয় পক্ষই।
= ১ সঠিক নাকি ১২ সঠিক ? জানতে চায় জনগন।
নিজস্ব প্রতিবেদক: (পূর্ব প্রকাশিতের পর) বিগত কিছুদিন ধরে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার ৩নং কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদে চলছে হুলুস্থুল কান্ড। ইউনিয়ন পরিষদের ১২ মেম্বর কর্তৃক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ দাখিলের খবর বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইন মিডিয়ায় প্রচার হওয়ায় গুঞ্জন দেখা দেয় ঐ ইউনিয়নবাসী সহ সচেতন মহলে। অভিযোগ সমুহের ব্যাপারে তাৎক্ষনিকভাবে ফেসবুকে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান। পাশাপাশি মেম্বরদের প্রতিও কিছু অভিযোগ তুলে ধরেন তিনি। প্রতিক্রিয়া স্বরুপ মেম্বররা একাধিকবার পাল্টা ফেসবুক সম্প্রচারে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগের কথা বিস্তারিত প্রকাশ করেন। এ সময় নিজের/ নিজেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে উভয় পক্ষই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
মেম্বরদের একটি অভিযোগও সঠিক নয় বলে দাবী করেন চেয়ারম্যান। আর প্রত্যেকটি অভিযোগের বিষয় প্রমাণ করে দেবেন বলে বলেন মেম্বররা। চেয়ারম্যানকে নিজে জনসম্মুখে শাস্তি দেয়ার হুংকার দেন এক মহিলা মেম্বর। আর নোংরা রাজনীতির দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানকে ভেড়ার সাথে তুলনা করেন এক মেম্বর। আর মেম্বরদের আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন চেয়ারম্যান। উপ-নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নবোধক বক্তব্য দেন এক মেম্বর। আর অভিযোগের প্রমাণ দিতে না পারলে মেম্বরদেও বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুশিযারী দেন চেয়ারম্যান। ভাতা বানিজ্য করতে না পেরে তার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হয়েছে বলে দাবী করেন চেয়ারম্যান আর নিজেরা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নয়; দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলে উল্লেখ করেন এক মেম্বর। সঠিক তদন্ত চায় উভয় পক্ষই আর ১ (চেয়ারম্যান) সঠিক, নাকি ১২ (মেম্বররা) সঠিক জানতে চায় ইউনিয়নবাসী।
উল্লেখ্য, গত ১ জুন’ ২০ তারিখে কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের ১২ জন ইউপি সদস্য ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছত আল হারুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ৮টি অভিযোগ এনে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
অভিযোগের মধ্যে রয়েছে মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে বরাদ্ধকৃত ত্রাণ ও অর্থ সামগ্রী চেয়ারম্যানের নিজের লোকদের মাঝে বিতরণ, ইউনিয়ন পরিষদের মাঠ ভরাটের নামে ৭ মে: টন চাউল আত্মসাৎ, মহাজনপুর বিলগামী রাস্তা প্রকল্পের নামে ৭ মে: টন চাউল আত্মসাৎ, জন্ম নিবন্ধনের টাকা আত্মসাৎ, ট্রেড লাইসেন্সের টাকা আত্মসাৎ, অডিট খরচ বাবদ মেম্বরদের নিকট থেকে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ, সুপেয় পানি সরবরাহের ট্যাঙ্কির অনুকূলে টাকা আত্মসাৎ ও ত্রান আনার পরিবহন খরচ বাবদ মেম্বরদের নিকট থেকে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ।
দায়িত্ব গ্রহনের ৯ মাসের মাথায় তার বিরদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠায় এর প্রভাব পড়ে জনমনেও। নিজেদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে চলতে থাকে উভয় পক্ষের বাকযুদ্ধ। যে বাকযুদ্ধ সরাসরি সম্প্রচারিত হয় অনলাইন সাতক্ষীরা, এস কে হাসান ও বর্ন টিভির ফেসবুকে। দৈনিক সাতনদীর ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ৩য় পর্বে আজ সেই বাকযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ/চম্বুক অংশ তুলে ধরা হলো।
কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের ১২ মেম্বর কর্তৃক গত ১ জুন জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিল করা অভিযোগের বিষয়টি ১ জুন তারিখে বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ায় এবং ২ জুন তারিখে বিভন্ন প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইন মিডয়ায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়। এতে করে জনমনে প্রশ্ন দেখা দেয়ায় সঠিক বিষয়টি তুলে ধরার লক্ষ্যে ইউপি চেয়ারম্যান গত ২ জুন তারিখে ইউনিয়ন পরিষদে বসে কাজ চালানো প্রকল্প হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। এক ঘন্টা আট মিনিট ১০ সেকেন্ডের সেই বক্তব্যে তিনি বলেন,
মেম্বররা মহাজনপুর বিলগামী রাস্তা প্রকল্পের নামে ৭ মে: টন চাউল আত্মসাতের যে অভিযোগ করেছেন সেই প্রকল্পের বরাদ্দ এখনো ছাড় হয়নি। আর যে প্রকল্পের বরাদ্ধ এখনো ছাড়ই হয়নি সেখানে আমি (চেয়ারম্যান) কিভাবে দুর্নীতি করলাম আমাকে বুঝিয়ে বলতে হবে।
তিনি বলেন, এখানে প্রধানমন্ত্রীর সেই কথাই বলতে হয়-“বিশ্ব ব্যাংকের মাথা মনে হয় খারাপ হয়ে গেছে, যে পদ্মা সেতুর কাজ শুরুই করলাম না; দুর্নীতি হয়ে গেছে।” তিনি বলেন, আমি দুর্নীতি করিনি, কোন দুর্নীতিকে প্রশ্রয়ও দেইনি।
করোনা ভাইরাস উপলক্ষ্যে প্রাপ্ত ত্রান সামগ্রীর বর্ননা দিয়ে তিনি বলেন, যা কিছু পেয়েছি রেশিও অনুয়ায়ী প্রত্যেক মেম্বরকে প্রদান করেছি। প্রধানমন্ত্রীর অত্র ইউনিয়নে ৭শ’ পরিবারকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা করে প্রদান করেছেন। আমি চেয়ারম্যান হিসেবে সেখানে মাত্র ১শ’ ৬২ টি নাম দিতে পেরেছি। বাকী ৫শ’ ৩৮টি নাম মেম্বর-মহিলা মেম্বররাই দিয়েছেন।
অডিটের নামে মেম্বরদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে আত্মসাতের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমার কাছে কেউ (কোন সদস্য) টাকা দেননি। যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারে আমি ইস্তফা দেব।
তিনি বলেন, উনারা (মেম্বররা) বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা- এই ভাতা ভাতা বানিজ্য করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, আমি রাজি হইনি। আমি রাজি না হওয়ায় উনারা আমার বিরুদ্ধে, ইউনিয়নের মানুষের কাছে আমাকে হেয় করার জন্য বিভিন্নভাবে অপপ্রচার করে বেড়াচ্ছেন।
সুপেয় পানির ট্যাঙ্কি দেয়ার জন্য টাকা নেয়ার ব্যাপারে ১নং ওয়ার্ড মেম্বর আব্দুল মাজেদ গাজীর উদ্দ্যেশ্যে চেয়ারম্যান বলেন, “মাজেদ সাহেব আপনাকে তো ১টি ট্যাঙ্কি দিয়েছি। আপনি বলেন; আপনি আমাকে কত টাকা দিয়েছেন ? যদি টাকা দিয়ে থাকেন বলতে পারেন, আাপনি আসেন, কোথাও কমপ্লেন দেয়া লাগবে না, আমি রিজাইন দেব।”
তিনি বলেন, দুর্নীতি আমি করব না। আমাকে দুর্নীতির কাজে সহযোগিতা করতে হবে এমন চেয়ারম্যানি আমি করতে চাই না।
মেম্বররা ৬ মাস আগে থেকে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা নিয়েছেন। সাংবাদিক ভাইয়েরা সরেজমিনে যেয়ে তদন্ত করলে অভিযোগের পাহাড় পাওয়া যাবে।
করোনা ভাইরাস বিষয়ে ডিসি, ইউএনও’র নির্দেশে কাজ করতে যেয়ে বিএনপি-জামায়াত পন্থীরা আমার উপর হামলাও করেছে। মেম্বরদের নানাবিধ ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমার বিরুদ্ধে এ জাতীয় অভিযোগ করেছেন।
মেম্বরদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আপনারা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, আপনারা আমার ভুল ধরবেন এটা অস্বাভাবিক কিছু না। এতে আমি আপনাদের ওয়েলকাম জানাবো। কিন্তু আপনারা মিথ্যা তথ্য দেবেন, যে তথ্যের কোন ভিত্তি নেই সেই তথ্য দিয়ে আপনারা বিএনপি জামায়াতের নোংরা রাজনীতি করবেন এই ইউনিয়নে সেই রাজনীতি করতে দেয়া হবে না, সে যেই হোক না কেন, তার কড়া দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, আপনার বলেছেন, ১০/১৫ বছর মেম্বরি করলেও কোন দিন ট্রলি ভাড়া দেয়া লাগেনি। আপনারা গরীব মানুষের জিআর এর চাউল বিক্রি করে আমাকে ট্রলি ভাড়া দেয়ার কথা বলেছেন। আমরা যেদিন ত্রাণ/চাল এনেছি সেদিনই বিতরণ করা হয়েছে, একটি দিনও অতিবাহিত করা হয়নি। অথচ আপনার অভিযোগ করেছেন, রাতের অন্ধকারে আমি চাল বিক্রি করেছি। কার কাছে বিক্রি করেছি- প্রমাণ দিতে হবে। না দিতে পারলে আপনাদের বিরুদ্ধে আমি আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
আমি যদি আপনাদের ১২ মেম্বরের সাথে সবকিছু ভাগাভাগি করে নিতাম, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ হতো না। আমি হতাম আপনাদের সোনার চেয়ারম্যান। সবকিছুতো আপনাদের রেশিও অনুযায়ী দেয়া হয়। মেম্বররা আপনারা ভাগ করে নেন ৫৫%, মহিলা মেম্বর ২২%, আমাকে ২২% দেয়া হয়। এটা আগের চেয়ারম্যানের আমল থেকেই চলছে, আমি এটায় সম্মতি দিয়েছি। আমার নামে যে মিথ্যাচার করা হয়েছে তার প্রমাণ দিতে হবে। কারন কুল্যা ইউনিয়নে যে আগুণ আপনারা জে¦লে দিয়েছেন তা কোন ছেলে খেলা নয়, জনগণের কাছে জবাব দিতে হবে। এ সময় অধিকাংশ ইউপি সদস্য দুর্নীতিগ্রস্থ বলে দাবী করেন তিনি।
আক্ষেপের সুরে চেয়ারম্যান হারুন চৌধুরী বলেন, উনারা বলেছেন, আপনি (চেয়ারম্যান) তালিকা করে আমাদের (মেম্বরদের) কাছে দেবেন। মনে হয় উনারা চেয়ারম্যান আর আমি মেম্বর।
জন্ম নিবন্ধনের ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর সরকারি ফিস ছাড়া অতিরিক্ত কোন টাকা নেয়া হয়নি। কারো কাছ থেকে ১০০ টাকার বেশি নেয়া হয়েছে প্রমাণ করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, দাবী দাওয়া থাকলে আমাকে না বলে আপনারা ফাঁকা জায়গায়, বেল তলায় মিটিং করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চেয়ারম্যানকে বোগলের তলায় রাখতে চান- এই স্বপ্ন দেখা থেকে বিরত থাকুন। আমি যতোদিন চেয়ারম্যান থাকব ১টি টাকাও দুর্নীতি করব না, কাউকে করতেও দেব না।
করোনার সময় কে কতটুকু কাজ করেছেন জনগণ দেখেছে। ত্রাণের চাল ভাগাভাগির সময় আপনারা অধীর হয়ে যান, মহামারী, সামাজিক সমস্যার সময় পাওয়া যায় না। আমি যখন হ্যান্ড মাইকিং করি আমাকে হেয় করা হয়।
আপনারা বিভিন্ন সময় বক্তব্য দেন- এবার চেয়ারম্যান কি করে পাস করে দেখা যাবে। মনে হয় ভোট সব আপনারা ১২ জন পকেটে করে নিয়ে ঘুরে বেড়ান, জনগণ আর কিছুই না।
তিনি বলেন, বিধবা না হয়েও এই ইউনিয়নে বিধবা ভাতা পায়।
তিনি বলেন, আমি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পেলে বলব না যে উমুক মেম্বর সাহেব এতো টাকা নিয়েছেন কারন ইজ্জত সম্মান সবারই আছে। আমার বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ তার একটাই কারন- যদি কি না আজকে আমি আপনাদের (মেম্বরদের) তালে তাল দিতাম, যদি একসাথে মিলে রাতের আঁধারে বলতাম জিআর এর যে চাল বিতরণ করা হয়েছে ৪ টন। ১ টন গ্রামের মানুষদের দেন আর ৩ টন বিক্রি করে দেন, টাকা ভাগ করে নেন। আমাকে ১ টন দেন আর ২ টন মেম্বর সাহেবরা ভাগ করে নেন- তাহলে আমি আপনাদের সাথে ঠিক থাকতাম।
যে চাল বিতরণ করা হয়েছে তার মাস্টার রোল তৈরী করা আছে। সেখানেতো আপনারাও ছিলেন, মাস্টাররোলে আপনাদেরও স্বাক্ষরও আছে। আপনারা না জানলেতো স্বাক্ষর করার কথা না, চেয়ারম্যানকে তো এক বিন্দুও ছাড় দেয়ার কথা না। অথচ বলছেন আমি চাল আত্মসাৎ করেছি। তাহলে কি আপনারাও আমার সাথে দুর্নীতি করেছেন ?
তিনি বলেন, ঘূর্নিঝড় আম্ফানের আগে পরে আমি কোন মেম্বর সাহেবকে রাস্তায়/ পাশে পাইনি। অথচ ত্রাণ আসলে উনাদের ঠিকই পাওয়া গেছে।
বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, মেম্বররা ডিসি স্যারের কাছে যে ৮ টি অভিযোগ করেছেন তার সবগুলোই মিথ্যা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। শুধুমাত্র বিভিন্ন কার্ড বিক্রির জন্য আমি তাদের সাথে না থাকায় রাগের বশঃবর্তী হয়ে তারা এই অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন যে মিথ্যাচার করা হয়েছে তার তদন্ত ও শাস্তি হওয়া উচিৎ। আমি চেয়ারম্যান হারুন চৌধুরীও যদি অন্যায় করে থাকি আমারও শাস্তি হওয়া উচিৎ, কারণ আমরা কেইউ আইনের উর্দ্ধে নই।
সরেজমিন প্রতিবেদন: বিধবা ভাতা বিষয়ে চেয়ারম্যানের উক্ত বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করতে গেলে ইউনিয়ন পরিষদের এক দায়িত্বশীল ব্যক্তি নিশ্চিত করেন যে, বর্তমান চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেয়ার আগের তালিকাই এখনো বলবৎ আছে। সে তালিকায় ৫নং ওয়ার্ডে ২ জন মহিলা এবং ৭নং ওয়ার্ডে ১ জন মহিলা বিধনা না হয়ে বিধবা ভাতার তালিকায় রয়েছেন এবং তারা যথারীতি ভাতাও ভোগ করছেন।
সরেজমিনে ঐ ইউনিয়নের বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, মেম্বরদের অভিযোগের ব্যাপারে চেয়ারম্যান হারুন চৌধুরী ফেসবুকে তার বক্তব্য তুলে ধরলে বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে দূলতে থাকে ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এ পতিবেদককে বলেন, অধিকাংশ সচেতন মহল চেয়ারম্যানের পক্ষে তার সততা-নিষ্ঠার কথা বলতে থাকলে নিজেরদের অভিযোগ জনগণ ভালভাবে নিচ্ছে না আঁচ করতে পেরে খানিকটা কোনঠাসা হওয়ার দুঃশ্চিান্তায় পরদিনই (৩জুন-২০২০) পাল্টা ফেসবুক লাইভে নিজেদের অভিযোগের কথা বিস্তারিত তুলে ধরেন মেম্বররা।
চেয়ারম্যানের ফেসবুক লাইভের প্রতিবাদে ইউনিয়নের আগরদাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত নিজেদের ৫০ মিনিট ২০ সেকেন্ডের সেই ফেসবুক লাইভে বক্তব্য রাখেন ইউপি সদস্য আঙ্গুর হোসেন, উত্তম কুমার দাশ, নজরুল ইসলাম ও ইব্রাহিম গাজী। তাদের সেই বক্তব্যে গুরুত্বপূর্ন অংশ এখানে তুলে ধরা হলো।
আঙ্গুর হোসেন: শুরুতেই ৭নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন আঙ্গুর বলেন, চেয়ারম্যান, মেম্বর, সচীবকে নিয়ে আমাদের পরিষদ। কিন্তু চেয়ারম্যান কোন বিধি অনুযায়ী না করে নিজের মতো করে পরিষদ চালান। তিনি বলেন, আমি মহিলা মেম্বর সহ ওয়ার্ডের সরকারি প্রতিনিধিকে নিয়ে আমাদের মাল বিতরণ করেছি। কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেবের ২৩% কার মাধ্যমে বিতরণ করেছেন ? সরকারি প্রতিনিধি নয়, গ্রাম পুলিশ নয়, উনার নিজস্ব লোক দ্বারা বিতরণ করেছেন। এমনকি আমার জানা মতে বন্টন হয়নি। উনি কালকে বলেছেন, দূর্নীতি করে থাকলে পদত্যাগ দিবেন। আমাদের উর্দ্ধতন ডিসি, ইউএনও স্যার আছেন উনারা একটা তদন্ত দিক, আমরা যদি সুস্পষ্ট প্রমাণ দিতে না পারি ইনশাল্লাহ আমিও এখান থেকে পদত্যাগ দেব।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কুল্যার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম এস এম রফিকুল ইসলাম সম্পর্কে চেয়ারম্যানের উদ্বৃতি প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, “উনি ২৩ বছর ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনা করেছেন। ঘোড়ার সাথে ভেড়ার তুলনা করলে হবে না। কনে রফিকুল ইসলাম আর কনে হারুন চৌধুরী, আসমান-জমিন পার্থক্য। উনার মতো হতি গেলি আরও কয়েকশ’ বছর জীবন যাপন করতে হবে। রফিক চেয়ারম্যানের সাথে হারুন চৌধুরীর তুলনা হয়না। রফিক সাহেব ছিলেন জনগণের প্রতিনিধি, জননেতা। এই নির্বাচন ( উপ-নির্বাচন) যে কিভাবে হয়েছে আমরা জানি !”
আমি বলব, আমাদের যারা উর্দ্ধতন কর্মকর্তা আছেন আপনারা আসুন, আমরা প্রমাণ করে দেব আমাদের চেয়ারম্যান দুর্নীতি করেছেন কি না। যদি দুর্নীতি-অনিয়ম না করে থাকেন আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার ওয়ার্ড থেকে পদত্যাগ করব।
উত্তম কুমার দাশ: ৫নং ওয়ার্ড মেম্বর উত্তম কুমার দাশ তার বক্তব্যে বলেন, চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে এক কাচ্চাও মাটি ফেলেননি। মহাজনপুর বিলগামী যে রাস্তার যে বরাদ্ধ হয়েছে সেখানে সামান্য কাজ করেছেন। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদে কোন কাজ তিনি করেননি।
শুধু তাই নয় ইউনিয়ন পরিষদের যে আয়ের উৎস আছে সেই উৎস থেকে ইউপি যে টাকগুলো তিনি সেক্রেটারীর ( ইউপি সচীব) মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন তারও কোন হিসাব আজ পর্যন্ত মেম্বরদের জানাননি বা দেননি। আমরা চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চাই।
সরেজমিন প্রতিবেদন: মেম্বর উত্তম কুমার দাশের বক্তব্যের সূত্র ধরে সরেজমিনে যেয়ে তার বক্তব্যেও সাথে বাস্তবের কোন মিল পাওয়া যায়নি। ইউনিয়ন পরিষদে যেয়ে দেখা গেছে সেখানে কিছু মাটি ভরাট দেয়া হয়েছে। মহাজনপুর বিলগামী রাস্তারও কাজ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহাগ খান বলেন, কুল্যা ইউনিয়ন পলিষদের মাঠের কাজের জন্য বরাদ্ধকৃত ৭ মেঃটন চাউলের এখন পর্যন্ত অর্ধেক ছাড় দেয়া হয়েছে। বাকীটা এখনো ছাড় দেয়া হয়নি। তাছাড়া উক্ত কাজের মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত কাজের মেয়াদ আছে। আর মহাজনপুর বিলগামী রাস্তার জন্য এখনো কোন বরাদ্ধ ছাড়ই দেয়া হয়নি। শুনেছি ঐ রাস্তার কাজ চেয়ারম্যান হারুন চৌধুরী নিজের পকেটের টাকা দিয়ে করেছেন।
টাকা আত্মসাতের বিষয়ে ইউপি সচীব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ট্রেড লাইসেন্সের টাকা চেয়ারম্যানের কাছে যায় না। এটা আমি দেখভাল করি। সরকারি কোর্ডে এ টাকা জমা করা হয়। আমার মাধ্যমে চেয়ারম্যান কোন টাকা আত্মসাৎ করেননি।
আর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি বলেন, মেম্বরের বক্তব্য আসলে হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়। টাকা আত্মসাৎ করে কেউ আবার হিসাব দেয় নাকি ?
আব্দুল মাজেদ গাজী: ১নং ওয়ার্ড মেম্বর আব্দুল মাজেদ গাজী তার বক্তব্যে বলেন, চেয়ারম্যান আমার কাছ থেকে ড্রামের জন্য নাম নিয়েছেন কিন্তু ড্রামতো আমাকে দেননি পায়াও (ড্রাম বসানোর জায়গা) করে দেননি। কয়েক জায়গায় চেয়ারম্যান ড্রাম দিয়েছেন। গাবতলা আগরদাড়ি সব জায়গায় দেয়া হয়ে গেছে। তাদের সব পায়া করা এবং কিছু কিছু জায়গায় ড্রামও পৌছে গেছে।
সরেজমিন প্রতিবেদন: মেম্বরের উক্ত বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করতে গেলে দেখা যায় ১৭টি ড্রাম যাদেও নামে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে তার মধ্যে মেম্বরের নিজ ওয়ার্ডের কুল্যা গ্রামের রুস্তম সরদারের নামও রয়েছে। এ ব্যাপারে মেম্বর মাজেদ গাজীর সাথে কথা হলে রুস্তম সরদার তার ওয়ার্ডেরই লোক বলে নিশ্চিত করেন। তবে এটি পরিবর্তীত তালিকা বলে তিনি দাবী করেন। এ সময় আর দেখা যায় যে কোথাও এখনো একটাও ড্রাম দেয়া হয়নি। তবে কিছু জায়গায় ড্রাম বসানোর ভীত করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য: এ ব্যপারে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, তালিকা অনুযায়ী কুল্যা ইউনয়নে ড্রাম বসানোর জন্য পাকা ভীত তৈরী করে দেয়া হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোথাও ১টাও ড্রাম দেয়া হয়নি।
নজরুল ইসলাম: ৩নং ওয়ার্ড মেম্বর নজরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, বুলবুলের ত্রান আপনার চৌকিদার দ্বারা আমার খাটের তলায় কেন রাখলেন ? আমি বললাম চেয়ারম্যান সাহেব আমার খাটের তলায় ত্রাণ কেন ? আপনি আমাকে যেকোনভাবে রস্ত করলেন। আমারটা আমার ওয়ার্ডের গরীব মানুষকে দিতে বললেন। আমি রাত ১২টার সময় ঐদিন মোটরসাইকেলে করে জেলে পাড়ায় রাখাল নামে একজন গরীব মানুষকে দিয়েছিলাম।
সরেজমিন প্রতিবেদন: এ ব্যাপারে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য জেলে পাড়ার ঐ ব্যক্তির সাথে যোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে না পাওয়ায় সঠিক তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি।
ইব্রাহিম গাজী: ২নং ওয়ার্ড মেম্বর ইব্রাহিম গাজী তার বক্তব্যে বলেন, আমরা পোস্টারের তলায় লিখি“ মানুষের সেবা করার সুযোগ দিন।” সেবাতো বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দিয়ে শুরু করি আর শেষ করি দুর্নীতি দিয়ে। এইতো আপনার আচরণ, এইতো আপনার কাজ।
তিনি বলেন, আমি প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি যেয়ে নগদ টাকা পৌছে দিয়েছি। চেয়ারম্যান বার বার বলেছে ১২ মেম্বর আমার বিরুদ্ধে। আমরা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে না, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আপনি ইউনিয়ন পরিষদের মাঠ ভরাটের জন্য ১ ঝুড়িও মাটি ভরাট করেননি। আপনি ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা উদ্যোক্তা রবিউলের চাকরি নষ্ট করে দেয়ার জন্য, অনেক লোকের পয়সা নেবেন এ রকম বিভিন্ন কাজ করেছেন। কিন্তু মেম্বরদেরও কাছে জানাজানি হওয়ায় আপনি রবিউলকে সরাতে পারেননি। সেই মাধ্যমে ৮০ হাজার টাকা রবিউল আসের মাধ্যমে নিয়েছেন জন্ম নিবন্ধনের জন্য। ট্রেড লাইসেন্স বাবদ সচীব ভাইয়ের কাছ থেকেও ৩০/৩৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। আপনি ভাটা থেকে টাকা নিয়ে এসেছেন। বিভিন জায়গা থেকে দুর্নীতি করেছেন কি না প্রমাণ হোক কারা দুর্নীতির সাথে জড়িত। আমরা চাই ইউনিয়ন পরিষদ সুষ্ঠ সুন্দরভাবে চলুক। আপনি-আমরা সবাই মিলে সুষ্ঠভাবে ইউনিয়ন পরিষদকে চালাই। ডিসি, ইউএনও এস এটা তদন্ত করুক। তদন্ত করে যদি আমাদেও ভুল হয় আমরা ইস্তফা দিয়ে চলে যাব। যদি উনার ভুল হয়, উনিও বলেছেন উনি ইস্তফা দিবেন। দেখা যাক আমরা অপেক্ষায় থাকলাম, খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
সরেজমিন প্রতিবেদন: সরেজমিনে দেখা যায় ইউনিয়ন পরিষদেও মাঠে কিছু জায়গা মাটি ভরাট দেয়া আছে। আর তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার কিছু সমস্যার কারনে আমি কিছুদিন দায়িত্বপালন করা তেকে বিরত ছিলাম। চেয়ারম্যান সাহেব আমার চাকরি নষ্ট করার কোন চেষ্টা করেননি, তাকে বিভিন্ন ব্যক্তি ভুল বুঝিয়েছিলেন। তাছাড়া চেয়ারম্যান আমার কাছ থেকে জন্ম নিবন্ধন বাবদ কোন টাকাও তিনি নেননি। আর ইউপি সচীব বলেন, ট্রেড লাইসেন্স বাবদ চেয়ারম্যান আমার কাছ থেকে কোন টাকা নেননি।
এভাবে চলতে থাকে কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বরদের বাকযুদ্ধ। এই সময়ে চেয়ারম্যান নিয়মিত তার পরিষদে অফিস করলেও মেম্বরার পরিষদে উপস্থিত হওয়া থেকে নিজেদেও গুটিয়ে রাখেন। এরই মধ্যে চেয়ারম্যান তার বক্তব্য প্রিন্ট মিডিয়ায় তুলে ধরলে গত ৮ জুন’২০ তারিখে মেম্বররা আবারও ফেসবুক লাইভে তাদের অভিযোগের কথা পূনর্ব্যক্ত করেন। এবার তারা বেছে নেন মেম্বর রফিকুল ইসলাম পান্না’র বাড়িকে। সেখানে ৩১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের ফেসবুক লাইভে বক্তব্য রাখেন মেম্বর আঙ্গুর হোসেন, মহিলা মেম্বর পারভীন সুলতানা ও আব্দুল মাজেদ গাজী।
আঙ্গুর হোসেন: এদিন শুরুতেই মেম্বর আঙ্গুর হোসেন ইউনিয়ন পরিষদের ৭ মেঃ টন আত্মসাতের কাজ চেয়ারম্যান পূনরায় শুরু করেছেন অথচ তিনি বলেছেন আমি আত্মসাৎ করিনি ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে সাড়ে ৯শত মৃত নিবন্ধন করেছেন। প্রত্যেকের কাছ থেকে ১শ’ টাকা করে নিয়েছেন।
তিনি বলেন, করোনার মালামাল আমরা সিপিপি সদস্য, গ্রাম পুলিশ, সরকারি প্রতিনিধির মাধ্যমে বন্টন করেছি। চেয়ারম্যান তার মালামাল কার মাধ্যমে বিতরণ করেছেন কেউ জানে না। আমরা চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চাই।
পারভীন সুলতানা: ১,২ ও ৩ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বর পারভীন সুলতানা তার বক্তব্যে বলেন, চেয়ারম্যান জনগণের কাছে বলে বেড়াচ্ছেন আমি (পারভীন) কার্ড বিক্রি করেছি। উনি যদি প্রমাণ করতে পারেন আমি কার্ড বিক্রি করেছি তাহলে আমি পদত্যাগ করব। না পারলে উনি পদত্যাগ করুক।
চেয়ারম্যানও উপনির্বাচনে নির্বাচিত, আমিও উপনির্বাচনে নির্বাচিত। মাত্র ৯ মাস হয়েছে। এই সময়ে আমি দুর্নীতি করেছি যদি চেয়ারম্যান প্রমাণ দিতে পারেন, আমার ৩টি ওয়ার্ডে যতো জনগণ আছে তাদের একটিও জনগণের কাছে যদি উনি প্রমাণ করতে পারেন, ১টি, ১টিও যদি প্রমাণ করতে পারেন আমি কার্ড বিক্রি করেছি তাহলে আমি উপযুক্ত শাস্তি নেব। আর যদি না পারে তাহলে আমি উনাকে উপযুক্ত শাস্তি দেব; তাই পরিষদে হোক; বাজারে হোক আর যেখানেই হোক।
আব্দুল মাজেদ গাজী: ১নং ওয়ার্ডের মেম্বর আব্দুল মাজেদ গাজী তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেন ০৪/০৬/২০ তারিখে আমরা ১২ জন মেম্বর উপস্থিত হয়ে ইউএনও কার্যালয়ে ইউএনও’র কাছে অনাস্থা দাখিল করি। ১৭টি ড্রাম, আমার ওয়ার্ডে ১টিও দেয়নি। ৫নং, ৭নং ওয়ার্ডে দেয়নি। আমাদের সাথে সমন্বয় না করে বিতরণ করেছেন। গুনাকরকাটি ৪টি, আগরদাড়ি ৩টি, মহিষাডাঙ্গা ৩টি, কচুয়া ১টি, কাটাখালি ১টি, মাদারবাড়িয়া ২টি ও বাহাদুরপুর ১টি। ৬টি মাতৃ ভাতা আমাদের না জানিয়ে উনি দিয়ে দিয়েছেন। ৬টি টিউবওয়েল কাকে দিয়েছেন বলতে পারব না। উনি সমন্বয় না করে বিতরণ করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা গত ২৮/০৫/২০ তারিখে ইউএনও স্যারের কাছে গিয়েছিলাম এই দরখাস্ত দেয়ার জন্য। উনি বললেন, “চাচা আমি নতুন মানুষ, আমি আপনার দিকনির্দেশনায় চলব। হিস্যানুযায়ী আমরা তালিকা দিলাম। চেয়ারম্যান আমাদের তালিকা বাদ দিয়ে নিজের মনগড়া তালিকানুযায়ী বিতরণ করলেন।
তিনি বলেন,আমি যা বলছি, প্রমাণ ছাড়া কোন কথা বলব না। আমি যেগুলো এই সামনে বলছি, মিডিয়া ভাইদের সামনে- আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বলব; তদন্ত মাফিক আমরা যদি কোন অন্যায় করে থাকি আমাদের ১২ জনকেই সাসপেন্ড করেন। আর যদি চেয়ারম্যান অন্যায় করে থাকে তাহলে আমরা চাই তাকে সাসপেন্ড করার জন্য।
সরেজমিন প্রতিবেদন: তবে যাচাই করে দেখা গেছে মেম্বর আব্দুল মাজেদ গাজীর উপস্থাপিত তথ্যের সাথে এলাকাভিত্তিক বরাদ্ধকৃত ড্রামের সংখ্যার কিছুটা তারতম্য আছে। এমনিকি তার ওয়ার্ডে একটিও দেয়া হয়নি বলে তিনি যে দাবঅ করেছেন তা সঠিক নয়। তার ওয়ার্ডে একটি পানির ড্রাম তালিকাভুক্ত আছে। তবে সেটি পরিবর্তীত তালিকা বলে তিনি দাবী করেছেন।
এই যখন চেয়ারম্যান-মেম্বরদের অবস্থা তখন জনগণ চাইছে সঠিক তদন্ত। জনমনে প্রশ্ন উভয় পক্ষইতো তাদের বক্তব্যেও স্বপক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন তাহলে কার কথা সত্য ? কে সঠিক ? এক চেয়ারম্যান নাকি ১২ মেম্বর ? দাবী সঠিক না হলে উভয় পক্ষইতো পদত্যাগের ঘোষণাদিয়েছেন। তদন্তে উভয় পক্ষইতো আর সঠিক প্রমানিত হবে না। যে পক্ষই সঠিক হোক অপর পক্ষ তাদের কথা রাখবেন কি ? তদন্তে সত্যতা যাচাই সাপেক্ষে সত্যি সত্যিই যদি কথা রাখে অপর পক্ষ ? চেয়ারম্যান বা মেম্বরবৃন্দ যদি সত্যি সত্যিই পদত্যাগ করেন তাহলেতো ইউনিয়ন পরিষদে দেখা দেবে আরেক শুন্যতা।
তবে ভবিষ্যৎ যাই হোক; অভিযোগের তদন্ত, তদন্ত শেষে ফলাফল আর কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের অজানা আরও তথ্য জানতে আগামী ৪র্থ পর্বে আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন আর চোখ রাখুন দৈনিক সাতনদী পত্রিকার পাতায় ও অনলাইন মিডিয়ায়।