মো. কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ পতেঙ্গা এলাকায় কয়েকজন ইয়াবা-মাদক গডফাদারদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নুরুল আবছার নামের এক ব্যক্তি কর্ণফুলী নদীর নৌকার মাঝি হিসেবে সাধারণ জীবন যাপন করলে অল্প সময়ে মাদক, ইয়াবাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলককর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে বনে যান গাড়ি, বাড়িসহ কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদক ও ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য পদ থেকে তাকে বহিস্কারও করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানায়, নগরীর দক্ষিণ পতেঙ্গা এলাকার মো. নুরুল আবছার মৃত বদিউল আলমের পুত্র। নুরুল আবছার কিছুদিন আগেও মৎস্য দপ্তরের তালিকাভুক্ত একজন নৌকার মাঝি হিসেবে নৌকা চালিয়ে সংসার চালিয়ে আসছিল। কর্ণফুলী নদীতে নৌকার মাঝি হিসেবে কাজ করার সুবাধে জড়িয়ে পড়ে ইয়াবা,মদ, চোরাকারবারীসহ কয়েকটি অবৈধ ব্যবসার সাথে। নৌকার মাঝি থাকায়-বিভিন্ন দেশী বিদেশী জাহাজ থেকে গনহারে তেল চুরির সময় বিদেশী নাবিক এবং দেশীয় নৌ-শ্র্রমিকদের কাছে ইয়াবা, মদ বিক্রয় করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলা গাছ বনে যান বলে দক্ষিণ পতেঙ্গার বাসিন্দার জানিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে ইয়াবা আবছার নগরীতে মাদক, ইয়াবা সিন্ডিকেটে গড়ে তোলে নগর জুড়ে। নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে নগরীর পতেঙ্গা থানাসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মাদক ও ইয়াবার মামলা রয়েছে। সিএমপি ও র্যাবের তালিকায় ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল আবছারের নাম রয়েছে।
বিভিন্ন সময় নুরুল আবছারের সহযোগীরা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে রিমান্ডে নুরুল আবছারের নামটি উঠে আসে। বিজয় নগরের শহিদ মিনারের উপরে যুবক আদিল নামের এক যুবক ইয়াবাসহ গ্রেফতার হন। ২০১৯ সালে সিএমপি পতেঙ্গা থানার মাদক ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকায় ৫৩ জনের মধ্যে প্রথম নাম্বারে রয়েছে নুরুল আবছারের। নুরুল আবছার ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে পতেঙ্গা এলাকার ইলিয়াছ সওদাগর নামের এক ব্যক্তি পুলিশ মহাপরিদর্শক, র্যাব প্রধানসহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক লিখিত অভিযোগ করেছেন। গত ২৫ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় জননিরাপত্তা বিভাগ আইন শাখা-২ তৎকালিন সহকারী সচিব দিলরুবা খাতুনের স্বাক্ষরিত একটি পত্র সিএমপি কমিশনারের নিকট পাঠানো হয় এতে নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানার জন্য অভিযুক্ত নুরুল আবছারের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে স্থানীয় মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে মাদক, ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার বিষয়টি এলাকায় সবাই জানে, আমি তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে লিখিতভাবে বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে পতেঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ উৎপল বড়ুয়া বলেন, নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে মাদক ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে একটি মামলায় চার্জসীট দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
আরও জানা যায় যে,চট্টগ্রাম পতেঙ্গায় মাঝি থেকে কোটিপতি ইয়াবা আবছার সিটি কর্পোরেশনে কাউন্সিলর নির্বাচন করতে যাচ্ছে। তার বিষয়ে বিগত সময় একাধিক অনুসন্ধনে সংবাদ প্রচারিত হলেও মাদক দ্রব্য অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। যার প্রেক্ষিতে একজন চিহ্নিত মাদক চোরাচালানের গডফাদার ইয়াবা আবছার সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। তাকে নির্বাচনে উৎসাহিত করার জন্য বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের কিছু সুবিধাবাদী নেতাকর্মী মাঠে নেমেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী আবছারের অপকর্মের স্বাক্ষী মো: ইলিয়াছ ইয়াবা আবছারের সাথে নতুনভাবে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। তারা বিগত সময় বাঘে মহিষে লড়াইয়ে অবতীর্ন থাকলেও আবছারের বিরুদ্ধে আমি বিগত সময় ইলিয়াছের তথ্যে ভিত্তিত্বে সংবাদ প্রকাশ করার পর রাতারাতি রহস্যজনকভাবে দু’জন একত্রীত হয়ে যায়। তবে তারা দু’জন রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় হয়।
ইয়াবা আবছারের অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া ও দলীয় পদ পদবী ব্যবহারের বিষয়ে উক্ত এলাকার একাধিক সচেতন মানুষের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, এদেশে কালো টাকা থাকলে কালো মানুষও সাদা হয়ে যায়। আবছারের অবস্থাও তেমন। আবছারের অবৈধ আয়ের সম্পদের হিসাবের বিষয় দুর্ণীতি দমন বিভাগের এক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যথা সময় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাদক দ্রব্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারীর কাছে ইয়াবা আবছারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন নির্বাচন আচরণবিধির কারণে তার বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্যর সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকার পরও গ্রেফতার করা যাচ্ছে না।