সচ্চিদানন্দদেসদয় : অবহেলিত আশাশুনির জনপদের কয়েক লাখ মানুষের নিরাপত্তায় দুর্যোগ এর আগাম পূর্বাভাস জানানোর জন্য স্বাধীনতার এত বছরেও নির্মিত হয়নি কোনো ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র। ফলে কাল বৈশাখি ও বর্ষা মৌসুম এলেই দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা আশাশুনির উপকূলের এ বৃহৎ জনগোষ্ঠির মধ্যে বিরাজ করে আতঙ্ক। এই আতঙ্ক শুরু হয় বৈশাখ মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গে। আর এ আতঙ্ক চলে প্রায় সারা বছর ধরে। বৈশাখ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত কয়েকটি নিম্ন চাপ সৃষ্টি হয়েছে।ফলে সঠিক দুর্যোগ আদান প্রদ্রানের জরুরি ব্যবস্থা না থাকায় আতঙ্কে দিন কেটেছে আশাশুনি উপকুল বাসির। সাতক্ষীরা সহ নিকট বর্ত্তী কোন জেলায় সতর্কীকরণ কেন্দ্র না থাকায় হঠাৎ বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় দেখা দিলে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস উপকূলে সতর্কবার্তা পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিসগুলোর দাবি, এ অঞ্চলে ঝড়ের পূর্বাভাস জানানোর জন্য একটি ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র স্থাপন অত্যন্ত জরুরি। যথাসময় পূর্বাভাস উপকূলবাসীর কাছে পৌঁছাতে পারলে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে।
গত ৫ বছরে এ জনপদে আইলা-সিডরের মতো কোনো ঝড়-জলোচ্ছ্বাস দেখা না দিলেও নদীভাঙন ও বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায়ই নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগে পড়ছেন উপকূলের মানুষ। বৈশাখ মাসে নদীর গর্জন আর আকাশে কালো মেঘ দেখলেই ভয়ঙ্কর আইলা-সিডরের কথা ঘূরপাক খায় তাদের মনে। চরম আতঙ্কে দিন কাটে আশাশুনি ও শ্যামনগর সহ সুন্দরবন সংলগ্ন আইলা বিধ্বস্ত এলাকার মানুষের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই সুন্দরবন সংলগ্ন আইলাবিধ্বস্ত আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার নদ-নদীর বাঁধে ব্যাপক ভাঙন ও ফাঁটল দেখা দিয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এ দুই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রমতে শ্যামনগর ও আশাশুনির বেতনা, খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ নদের প্রায় ৫০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ২৩ কিলোমিটার রয়েছে চরম ঝুঁকিতে।
আনুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জানান, এখন নদ-নদীর পানি এখন উত্তাল। যে কোনো সময় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কায় রাত কাটছে উপজেলার এ ইউনিয়নের মানুষের। ঝড়ের পূর্বাভাস জানানোর জন্য এখানে কোনো ঘুর্ণিঝড় কেন্দ্র না থাকায় আইলায় সাতক্ষীরায় প্রাণহানি হয়েছিল।
পরিবেশবীদরা মনে করেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম জনপদের মানুষের নিরাপত্তার জন্য বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন কেন্দ্রিক একটি ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র অত্যন্ত জরুরী। কারণ স্থানীয় আবহাওয়া অফিসগুলো তাৎক্ষণিক ঝড়ের গতি-প্রকৃতি ও পূর্বাভাস দিতে পারছে না। স্থানীয় অফিসগুলো শুধুমাত্র বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা ও বায়ুর গতিবেগ রেকর্ড করে ঢাকার কেন্দ্রীয় আবহাওয়া অফিসে পাঠায়। বড় কোনো দুর্যোগ বা ঝড়ের পূর্বাভাস থাকলে ঢাকা অফিস কর্তৃক প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে স্থানীয়ভাবে জানানো হয়ে থাকে বলে জানা গেছে।