
মোঃ আকবর হোসেন, তালা: ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নাকের ডগায় সাতক্ষীরা তালা কুমিরায় জনবহুল এলাকায় কৃষি জমিতেই গড়ে উঠছে এমকে ব্রিকস(মনুর ভাটা)ইটভাটা। এর মালিক খায়রুল ইসলাম। ইট ভাটার কালো ধোয়ায় ফলে পরিবেশ দূষণ ও লোকালয়ে জনবসতির মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানায়, শুরু থেকেই ভাটার মালিক জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে খননকৃত কপোতাক্ষের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাটি কর্তন, নদী তীরের অগভীর মাটি কর্তন থেকে শুরু করে কৃষকদের প্রলুব্ধ করে কৃষি জমির মাটি কেটে ভাটা পরিচালনা করে আসছে। এতে একদিকে যেমন অবাধ মাটি কর্তনে এলাকা বিরান ভূমিতে রূপ নিচ্ছে, অন্যদিকে এলাকায় পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। ইতোমধ্যে এর কুফলও ভোগ করতে শুরু করেছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের জনবহুল এলাকার ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে এমকে ব্রিকস(মনুর ভাটা)ইটভাটা। ইটভাটার কারণে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এলাকাবাসীর মধ্যে রীতিমত আতংক বিরাজ করছে। তারা তদন্তপূর্বক এসব ভাটার কার্যক্রম বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কপোতাক্ষ নদীর ১০ থেকে ১৫ ফুট দুরত্বে নদীর ভেড়ী বাধের ধারে ২৫/৩০ ফুট হতে শুরু করে ৪০/৫০ ফুট গর্ত করে কয়েক একর জমিতে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি খনন করছে। এতে যে কোন সময় নদী ধসে যেতে পারে। তাছাড়া ভাটা হতে ২০/৩০ফুট দুরত্বে জনবসতি এলাকা থাকায় ভাটার ধোয়ায় শিশুসহ মানুষের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি চারিপাশে গাছপালা পুড়ে যাচ্ছে। এলাকায় পরিবেশ চরম বিপর্যয় ঘটছে। এলাকাবাসীর দাবি, জনবহুল এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের ফলে এলাকার সামগ্রিক পরিবেশ বিপর্যয়ের ঘটছে।
এছাড়া ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ৫৯ নং ধারা এবং পরবর্তীতে অধ্যাদেশ নং ০২/২০১৮ সংশোধিত) এর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সম্পূর্ণ ভুল বুঝিয়ে তারা সেখানে ইটভাটার লাইসেন্স নিয়েছেন বলে দাবি করছেন। আইনের ৮ এর (১) ধারায় আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষিজমি, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, ডিগ্রেডেড এয়ার শেড এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। একই ধারার উপধারা (২) অনুযায়ী এই আইন কার্যকর হবার পর নিষিদ্ধ এলাকার সীমানার অভ্যন্তরে ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো আইনের অধীন কোনরূপ অনুমতি বা ছাড়পত্র বা লাইসেন্স, যে নামেই অভিহিত হোক প্রদান করতে পারবে না।
আইনের ৩ নং ধারার ক) উপধারায় বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ এলাকার সীমারেখা হতে ন্যূনতম ১ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে, ঙ) উপধারায় বিশেষ কোনো স্থাপনা রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান হতে ১ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যেসহ নানা শর্তানুযায়ী ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এ সকল কোন আইন এর তোয়াক্কা না করে প্রশাসনসহ এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর মোঃ খায়রুল ইসলাম ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে ভাটার ম্যানেজার মোঃ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ভাটার বৈধতা বা কাগজপত্র আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবকিছুই ঠিক আছে। তাছাড়া এস্কেভেটর দিয়ে গভীর করে মাটি কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, গর্ত করে মাটি কেটে দিচ্ছে জমির মালিকরা। ভাটার পাশে বসতবাড়ী থাকলে পরিবেশ অধিদপ্তর কিভাবে ছাড় পত্র দিলো। এব্যাপারে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিলো তো।
এ বিষয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান, এখনো পর্যন্ত এ নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।