অনলাইন ডেস্ক :
করোনা ভাইরাসে এখন টালমাটাল বিশ্ব। জীবন নিয়ে উৎকণ্ঠায় বিশ্বের সব মানুষ। ঠিক এ সময় তৈরি পোশাকশিল্প উদ্যোক্তারা দেশের মানুষের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। করোনা মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বা সুরক্ষা পোশাক তৈরিতে। ইতোমধ্যে ১২টি পোশাক কারখানায় পুরোদমে পিপিই তৈরি শুরু হয়েছে। দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। পিপিই তৈরির বিষয়ে সমন্বয় করছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশের সংকটকালে নিজ নিজ উদ্যোগেই পিপিই তৈরি কাজে হাত দিয়েছে বিভিন্ন কারখানা। তবে এ পোশাক তৈরির কাঁচামাল আমাদের দেশে তৈরি হয় না। আমদানি করতে হয়। প্রধানত চীনই এ কাঁচামালের জোগানদাতা। আমদানি-রপ্তানিতে কিছু সমস্যা থাকায় আস্তে ধীরে এগোতে হচ্ছে।
বিজিএমইএ বলছে, দেশে কোভিড ১৯ তথা করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশে পিপিইর চাহিদা বেড়েই চলছে। কিন্তু এ মুহূর্তে পিপিই স্যুটের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। পিপিই শুধু ডাক্তার এবং নার্সদের জন্যই প্রযোজ্য নয়, এটা হাসপাতালের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য প্রযোজ্য। এ ছাড়া দুর্যোগময় এমন পরিস্থিতিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানে পিপিইর চাহিদা তৈরি হয়েছে।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক আমাদের সময়কে বলেন, পোশাক কারখানায় পিপিই স্যুট তৈরি করতে নতুন মেশিনারিজ ও টুলস স্থাপন করতে হবে, যা করতে ন্যূনতম ৬ মাস লাগবে। দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যই বিশ্বের কাছে পিপিই রপ্তানি এবং তা দ্রুতই করার চেষ্টা করছি। এ নিয়ে ইতোমধ্যে আইএলও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এ বিষয়ে তাদের কাছে প্রযুক্তিগত জ্ঞানসহ অন্যান্য সহযোগিতা চেয়েছি। তারা আশ্বাস দিয়েছে।
গ্রহণযোগ্য এবং মানসম্মত পিপিই উৎপাদন বিজিএমইএর একটি চলমান প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, বর্তমানে বিজিএমইএ ২০ হাজার পিপিই অনুদান করার চিন্তা করছে। এগুলো স্থানীয় কারখানায় উৎপাদন করা হবে যা মেডিক্যাল গ্রেড-১ এর সমমানের, যদিও রোগীদের চিকিৎসারত ডাক্তার এবং নার্সদের প্রয়োজন গ্রেড ৩-৪ সমমানের। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পিপিই ১০০ শতাংশ পানি রোধক এবং মান অনুযায়ী অনেকটা প্রফেশনাল পিপিইর কাছাকাছি।
রুবানা হক বলেন, সম্প্রতি বিজিএমইএ তাদের ফেব্রিক্স ও অন্য বিষয়গুলোর ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসের (ডিজিএইচএস) অনুমোদন পেয়েছে। তারা এটাকে লেভেল-১ এর মর্যাদা দিয়েছে।
বিজিএমইএর অনেক সদস্যই ইতোমধ্যে ফেব্রিক্স তথা কাপড় পাঠানো শুরু করেছে। যদিও একটি ফান্ড তৈরি করেছি পিপিই তৈরির ফেব্রিক্স ক্রয় করার জন্য। এ বিশেষ মুহূর্তে সংহতি প্রকাশ স্বরূপ কিছু ফেব্রিক্স মিল, যারা বিজিএমইএর সদস্য তারা স্বল্পমূল্যে ফেব্রিক্স সরবরাহ করছে।
পিপিই তৈরির কারখানাগুলো হলো আজমি ফ্যাশন, অ্যালায়েন্স অ্যাপারেলস, জেএম ফেব্রিকস, লাক্সমা ইনওয়্যার, উর্মি গার্মেন্টস, স্নোটেক্স আউটারওয়্যার, টিআরজেড গার্মেন্টস, ফোরএ ইয়ার্ন অ্যান্ড ডায়িং, ডেকো ডিজাইন লিমিটেড, ইসলাম গার্মেন্টস লিমিটেড, অ্যারিস্টোক্র্যাট গ্রুপ ও মোহাম্মদী শার্টেক্স লিমিটেড। তবে অনেক পোশাক কারখানা কাপড় দিয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
জানা গেছে, স্নোটেক্স আউটারওয়্যার প্রাথমিকভাবে বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য ১৭ হাজার পিপিই বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে। গত শনিবার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার করে পিপিই উৎপাদন করছে। ৫ এপ্রিল কারখানা পুরোদমে খুললে তাদের পিপিই উৎপাদনক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে প্রতিদিন ৫-১০ হাজার পিস।
মোহাম্মদী গ্রুপের পরিচালক ও বিজিএমইএর পিপিই সমন্বয়ক নাভিদুল হক আমাদের সময়কে বলেন, দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানির চিন্তা রয়েছে। কারণ এ পোশাক এখন পুরো বিশ্বেরই প্রয়োজন। করোনা চলে গেলেও এর চাহিদা থাকবে। তাই এ চিন্তা। তবে এখনই রপ্তানির চিন্তা করছি না। সে ক্ষেত্রে অন্তত ৬ মাস থেকে ১ বছর সময় লেগে যাবে।
এফবিসিসিআই সহসভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে পিপিই পোশাকের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করতে পারলে ভালো। তবে আগে নিজেদের দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে।