আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ, নাটোর থেকে ফিরে: নাটোর জেলা শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার উত্তরে এক নয়নাভীরাম পরিবেশে ঐতিহাসিক দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি অবস্থিত। বর্তমান এটি উত্তরা গনভবন নামে পরিচিত। নাটরের রানী ভবানী তার অধীনস্থ নায়েব দয়ারামের উপর সন্তষ্ট হয়ে তাকে দিঘাপতিয়া পরগনার জমিদারী উপহার দেন। ১৭৩৪ সালের স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শন এই দিঘাপতিয়া রাজ প্রাসাদটি দয়ারাম রায় নির্মান করেন। ১৮৯৭ সালে ভ‚মিকম্পে রাজ প্রাসাদটি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেলে রাজা প্রমদানাথ রায় রাজপ্রাসাদটি পুণঃনির্মান করেন। দিঘাপতিয়া রাজাগন ১৭১০ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত রাজ্য শাসন করেন। এই রাজ বংশের যারা ইতিহাসের পাতায় এখনো অমর হয়ে আছেন তারা হলেন দয়ারাম রায়, জগন্নাথ রায়, প্রাননাথ রায়, প্রমথনাথ রায়, প্রমদানাথ রায় এবং প্রতিভানাথ রায়। এ রাজবংশের রাজকুমারী ইন্দুপ্রভা দেবী একজন কবি ছিলেন। তার কাব্যগ্রন্থ, তার দিনলিপি ও অনেক গুলো পত্র রয়েছে যা সংগ্রহ শালায় প্রদর্শন করা হচ্ছে এবং যার সাহিত্য মুল্য অনেক। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর দিঘাপতিয়ার শেষ রাজা প্রতিভানাথ রায় সপরিবারে রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করে কলকাতায় চলে যান। পরবর্তিতে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত রাজ প্রসাদটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় থাকে। ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে এবং সরকারী ভবন হিসাবে গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক সংস্কর করা হয়। ১৯৬৭ সালের ২৪ জুলাই এটিকে দিঘাপতিয়ার গর্ভনর হাউস হিসাবে উদ্বোধন করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এটিকে উত্তরা গণভবন হিসাবে ঘোষণা করেন। চার দিকে সুউচ্চ প্রাচীর ও সুগভীর পরিখা পরিবেষ্টিত এই রাজবাড়ি ছোট-বড় ১২টি কারুকার্য খচিত ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যকলা নিয়ে ৪১.৩৯ একর জমির উপর অবস্থিত।
দিঘাপতিয়া রাজবাড়ির ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রধান প্রাসাদ ভবন, কুমার প্যালেস, প্রধান কাচারি ভবন, তিনটি কর্তারানী বাড়ি, রান্নাঘর, মটরগ্যারেজ, ড্রাইভার কোয়ার্টার, স্টাফ কোয়ার্টার, ট্রেজারি বিল্ডিং ও সেন্ট্রিবক্স। মূল ভবন সহ অন্যান্য ভবনের দরজা-জানালা এবং আসবাবপত্রগুলো মুল্যবান কাঠের নির্মিত। প্যালেসের দক্ষিণে রয়েছে ইতালিয়ান গার্ডেন নামের ফুলের বাগান। যাতে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন মূল্যবান মার্বেল পাথরের কারুকাজ করা ভাস্কর্য এবং দেশী-বিদেশী নানা জাতের দুর্লভ শোভাবর্ধনকারী গাছ ও ফুলের সমারোহ। প্রাধান প্রাসাদ ভবনের সামনে ১৮৫৪ সালে ব্রিটিশদের নির্মিত ২টি কামন সহ রাজ বাড়িতে মোট ৬টি কামান রয়েছে। মূল রাজপ্রাসাদের প্রবেশ পথে সিঁড়ির দু’পাশে আছে ২টি কাল কৃষ্ণমূর্তি। রাজপ্রাসাদের উত্তর পাশে ছিল রাজার নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র যা রাজপ্রসাদকে আলোকিত করার কাজে ব্যবহৃত হতো। মূল ফটকের উপরে আছে ইতালির ফ্লোরেন্স থেকে আনা বিশালাকার ঘড়ি যা এখনো সঠিক সময় দিচ্ছে। আজো এর ঘন্টাধনি বহুদূর থেকে শোনাযায়।
স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন নাটোরের গণভবন
পূর্ববর্তী পোস্ট