# সুন্দরবনের জেলে পল্লিতে দস্যুআতঙ্ক।
# এক মাসের ব্যবধানে ১৫ জেলে অপহরণ।
# চুনকুড়ি নদীর তক্কাখালী এলাকায় ১০ জেলেকে উদ্ধার।
এস কে সিরাজ শ্যামনগর সাতক্ষীরা থেকে।।
সুন্দরবনে দীর্ঘদিন পর ফের বনদস্যুদের উৎপাত বেড়েছে। সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জে গত আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১৩ জেলে অপহরণের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১০ জেলেকে উদ্ধার করেছে বনবিভাগ। নতুন করে বিভিন্ন ডাকাত দলকে বনের বিভিন্ন এলাকায় বিচরণ করতে দেখেছে স্থানীয়রা। জানা যায়, ছয় বছর আগে বনদস্যুদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালের নভেম্বরে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হয়। জেলে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, মাছ ছিনতাই, চাঁদা আদায়সহ নানা ধরনের অপরাধ ঘটছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাতে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে বাড়ি ফিরেছে সুন্দরবনে বনদস্যু মজনু বাহিনীর হাতে অপহৃত এক জেলে। জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে আসা জেলে আতাহার হোসেন (৩৫) ও রুহিন সানা যথাক্রমে খুলনার কয়রা উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের শফিকুল বিশ্বাস ও রহিম সানার ছেলে। একই বনদস্যু দলের সদস্যরা আতাহার ও রুহিনকে মুক্ত করে দেওয়ার সময় আবু বক্কার গাজী নামে অপর এক জেলেকে জিম্মি করেছে বলে জানা গেছে । এর আগে গত ৪ নভেম্বর রাতে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের চুনকুড়ি নদীর তক্কাখালী এলাকায় বনদস্যুর কবল থেকে ১০ জেলেকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। উদ্ধার হওয়া জেলেরা হলেন উপজেলার চুনকুড়ি গ্রামের আলিম গাজী, নুরুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, হাফিজুর রহমান, মফিজুর রহমান, মুছাক সানা, শফিকুল গাজী, নজরুল ইসলাম ও রফিকুল মল্লিক। এ সময় রীতিমতো দুপক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয়। বনদস্যুদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়ে তিনটি নৌকা, সোলার প্যানেল ও এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে বন বিভাগ। এদিকে, গত ২০ আগস্ট রাত সাড়ে ১২টার দিকে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে শফিকুল গাজী (৪৫) নামে এক জেলেকে অপহরণ করে বনদস্যুরা। পরে গত ১০ নভেন্বরের অভিযানে শফিকুলকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। সাম্প্রতি মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা ও বনদস্যুদের হাত থেকে উদ্ধার হওয়া জেলেদের কাছ থেকে জানা যায়, খুলনার কয়রা, দাকোপ ও সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলাজুড়ে বিস্তৃতি পশ্চিম সুন্দরবনে আসাবুর বাহিনী, শরীফ বাহিনী, আবদুল্লাহ বাহিনী, মঞ্জুর বাহিনী, দয়াল বাহিনী নামে বনদস্যুদের নতুন কয়েকটি দল তৎপরতা শুরু করেছে। গত ৪ নভেম্বর বন বিভাগের উদ্ধার সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে অপহরণের শিকার জেলেরা জানান, তাদের কয়েক জনকে টগিবগি এলাকা থেকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে দস্যুরা। এরপর হাত-মুখ বেঁধে আটকে রাখে। তাদের পরিবারের কাছে ফোন করে এক লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করে। এ বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ৩০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠান। পরে একজনকে ছেড়ে দিয়ে বাকি টাকা দিলে অন্যদের ছাড়ার কথা বলে। জেলেরা জানান, সুন্দরবনে ১০-১২ জনের একটি ডাকাত দল জেলেদের কাছে যা পাচ্ছে সব নিয়ে নিচ্ছে। তারা প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। বনবিভাগের কদমতলা ফরেস্ট স্টেশনের এসও সোলায়মান বলেন, ‘গত ৩ নভেম্বর সুন্দরবনের চুনকুড়ি নদীর তক্কাখালী এলাকায় অভিযান চালানো হলে বনদস্যু বাহিনীর সদস্যরা বন বিভাগের সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। জবাবে বন বিভাগের সদস্যরাও পাল্টা গুলি করে। এ সময় প্রতিরোধের মুখে বনদস্যুরা পালিয়ে যায়। ধ্বংস করা হয় বনদস্যুদের একটি আস্তানা।’ বন কর্মকর্তা বলছেন, ‘দীর্ঘদিন সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জ বনদস্যুমুক্ত থাকার পর অতিসম্প্রতি আবারও বনদস্যুদের কয়েকটি বাহিনী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এই বাহিনীর অত্যাচারে জেলে-বাওয়ালিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ভিন্ন নামে ভিন্ন পরিচয়ে ভারতে বসে এই বনদস্যু গ্রুপটি জেলেদের কাছে মোবাইল ফোনে চাঁদা দাবি করছে বলে জেলে-বাওয়ালিরা অভিযোগ করেছেন।’ এ বিষয়ে সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ জে এড হাছানুর রহমান জানান, ‘সম্প্রতি বনদস্যুদের অপতৎপরতা প্রতিরোধে সম্প্রতি বন বিভাগ একটি অভিযান পরিচালনা করে ১০ জেলেকে উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে অপহরণের কথা শোনা গেলেও আমাদেরকে ভূক্তভোগীর পরিবার তেমন কোনো তথ্য দিচ্ছে না। যে কারণে আমাদের কাজ করতে সমস্য হচ্ছে। তবে আমরা সবসময় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করছি।’