
আলহুসাইন অমি:
বৃহত্তর সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি হিসেবে অখণ্ড বন যা বিশ্বে সর্ববৃহৎ। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের প্রায় ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকীটা ভারতে।
সুন্দরবনে প্রতি মৌসুমেই সাধারণত দেড় থেকে ২ লাখ পর্যটকের আগমন ঘটে। এ থেকে ২ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আদায় হয়। সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরই সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৪৯০ জন এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ লাখ ২১ হাজার ৯৬৯ জন পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সুন্দরবন ভ্রমণ করেন ২ লাখ ৫১ হাজার ৯৬৯ জন পর্যটক। গত বছর পর্যটন খাত থেকে সুন্দরবন বিভাগের রাজস্ব আয় হয় ২ কোটি টাকা।
মোঘল আমলে (১২০৩-১৫৩৮) স্থানীয় এক রাজা পুরো সুন্দরবনের ইজারা নেন। ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই অঞ্চলের নদীপথে পর্তুগিজ জলদস্যুদের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। সেসময় পর্তুগিজ জলদস্যুদের অত্যাচারে সুন্দরবনের অনেক সমৃদ্ধশালী জনপদ জনশূন্য হয়ে যায়।
চার’শ বছর পর এখনও সুন্দরবনে দস্যুদের দৌরাত্ম যেন থামছেই না। তাই সুন্দরবন রক্ষার্থে এবং স্থানীয় জেলে, মৌয়াল ও পর্যটকসহ সর্বস্তরের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বনদস্যু ও জলদস্যুসহ সকল অপরাধমূলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ। এ ব্যাপারে সাতনদীর সাথে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার) এর সাক্ষাৎকার-
সাতনদী: হঠাৎ সুন্দরবনে স্বশস্ত্র পুলিশি মহড়া/অভিযান কেন?
পুলিশ সুপার: জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সুন্দরবনে সকল অপরাধের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স এবং অপরাধীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত কঠোরতা ঘোষণা করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত শনিবারে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে স্বশস্ত্র পুলিশি মহড়া এবং অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
সাতনদী: সাতক্ষীরা রেঞ্জে কত সংখ্যক জলদস্যু থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে?
পুলিশ সুপার: এ বিষেয়ে অনুসন্ধান চলছে। জড়িতদের সকলকে আইনের আওতায় এনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও সুন্দরবনে পুলিশি অভিযান অব্যহত থাকবে।
সাতনদী: দস্যুরা আত্মসমার্পন করতে আগ্রহী হলে প্রশাসন তাদের প্রতি কতটা উদারতা দেখাবে?
পুলিশ সুপার: আত্মসমার্পন একাধিকবার করেছে, কোনো লাভ হয়নি। পরবর্তীতে পুনরায় তারা অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ে। তাই এবার আর কোনো সুযোগ নয়। তাদের স্যারেন্ডার করতে হবে, অন্যথায় পুলিশ সরাসরি এ্যাকশনে যাবে।
সাতনদী: বিগত কিছু দিনের মধ্যে কোনো বনদস্যু আটক বা আত্মসমার্পনের ঘটনা ঘটেছে কি না?
পুলিশ সুপার: কিছুদিন আগে বনবিভাগের এক ট্রলার চালককে হত্যা করা হয়। এ বিষয়ে একটি মামলা রেকর্ড হয়েছিল। মামলার আসামীকে গ্রেফতার করে জেলাহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
সাতনদী: দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সত্বেও এখনো কেন তারা দস্যুবৃত্তির পথ বেছে নিচ্ছে বলে আপনার মনে হয়?
পুলিশ সুপার: আসলে কেউ অভাবে করে কেউবা আবার স্বভাবে। এরা একসময় অভাবের তাড়নায় দস্যুবৃত্তির সাথে জড়িয়ে পড়লেও এখন সেটা স্বভাবে পরিণত হয়েছে। তাই এ কাজ তারা ছাড়তে পারে না। তবে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা তাদের আহ্বান জানাচ্ছি।
সুন্দরবনকে সুন্দর ও আতঙ্কমুক্ত রাখতে দস্যুবৃত্তির সাথে জড়িতদের তথ্য পুলিশকে জানানোর জন্য স্থানীয়দের প্রতি আহ্বান জানান পুলিশ সুপার। তথ্য সরবরাহকারীদের নাম ঠিকানা গোপন রাখার বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিভিন্ন সময় জেলে, মৌয়াল এবং পর্যটকসহ স্থানীয় জনগণ দস্যুদের কবলে পড়ে সহায়সম্বলহীন হয়ে পড়ে আবার কেউবা হারায় প্রাণ। তাই পুলিশকে তথ্য দিয়ে জীবনকে ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য স্থানীয়দের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।