আশাশুনি প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা ৩ আসনের সংসদ সদস্য পদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আনুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার বিকালে উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক স, ম হেদায়েতুল ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আনুষ্ঠানিকভাবে এবং মঙ্গলবার উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আশাশুনি উপজেলা বিএনপি’র সাবেক আহবায়ক রুহুল কুদ্দুস তার নিজ বাসভবনে এক প্রেস কনফারেন্সে এ ঘোষণা দিলেন। ঘোষনাকালে উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ, কৃষকদল, যুবদল, শ্রমিকদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, জাসাস, ছাত্রদল সহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলন থেকে বিএনপি’র আহবায়ক হেদায়েতুল ইসলাম উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনান্তে বিগত আওয়ামী সরকারের দুঃশাসনে হামলা-মামলার শিকার, বাড়ীঘর ভাংচুর, আগুনে পুড়িয়ে তছনছ, বাড়ীর মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট, মৎস্যঘের জবরদখল সহ অমানবিক নির্যাতনের শিকার, ত্যাগী নেতা হিসেবে রুহুল কুদ্দুসকে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন প্রদানের জন্য দলের নীতি নির্ধারক সহ উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের কাছে উদাত্ত্ব আহ্বান জানান। এ ব্যপারে রুহুল কুদ্দুস মঙ্গলবার দুপুরে তার বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে এক প্রেস ব্রিফিং-এ তিনি ঘোষনা দিলেন। তিনি বলেন, আমার আশাশুনি সদরে বাসাবাড়ী থাকলেও স্থায়ী বাড়ী আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের মধ্যম একসরা গ্রামে। আমি ইউনাইটেড একাডেমী প্রতাপনগর থেকে এসএসসি পাশ, এরপর খুলনা বিএল বিশ্ববিদ্যালয় এইচএসসি ও স্নাতক ডিগ্রী লাভ করি, পরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং নর্দান ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি পাস করেছি। ১৯৮৬-৮৭ সালে বিএল কলেজের জাতীয়তাবাদী ছাত্র সংসদের মানবিক শাখার শ্রেণী প্রতিনিধি হিসেবে ছাত্রদলের হয়ে রাজনীতিতে মাঠে নেমেছিলাম। এরপর ওই কলেজে ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি ১৯৮৬-৯০ পর্যন্ত। ১৯৯০-৯৩ পর্যন্ত খুলনা জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে তৎকালীন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। সেই সময়ে শিবিরের ক্যাডার বাহিনীর গুলিতে আহত হয়ে জীবন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়েছি। ১৯৯৭-২০০২ পর্যন্ত উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। এরপর ২০০২-০৮ সাল পর্যন্ত উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব এবং ২০০৯-২০২১ সাল পর্যন্ত বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করেছি। এরই মধ্যে তৎকালীন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কুল্যা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করলে ২০২১-২২ পর্যন্ত আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছি। আনুলিয়া ইউপি থেকে ২০০৩ সাল থেকে তিন তিনবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। আওয়ামী দুঃশাসন ও প্রহসনের নির্বাচনেও আমাকে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী পরাজিত করতে পারেনি। আমি মিথ্যা মামলায় জেলে থেকেও নির্বাচনে জয়লাভ করেছি। আমার স্ত্রী জাহানারা খাতুন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী শক্তির পক্ষে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী মজিদা খানমকে পরাজিত করেন। শহীদ জিয়ার আদর্শের রাজনীতি করতে নেমে ২০১৩ সাল থেকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দুঃশাসনে তার দোসরদের নির্মম নির্যাতন সহ ৬৮টি মিথ্যা নাশকতা মামলায় জড়িয়ে আমাকে জেলে পাঠানো হয়েছে। ২০১৩, ১৪ ও ১৬ সালে এবং যতবার প্রহসনের নির্বাচন এসেছে ততবারই আমাকে প্রশাসন ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে নির্যাতিত হতে হয়েছে। এরই মধ্যে দুই বার ক্রসফায়ারে নিয়ে গুলি করে হত্যার নীল নকশা তৈরি করা হয়েছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে ও জনগণের দোয়ায় আবার সে নকশা ভেদ করে ফিরে এসেছি। কমপক্ষে ৩ বার আমার বসত ঘর ভাংচুর, তছনছ, লুটপাট ও আগুনে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। বিএনপি করার অপরাধে আমার পিতাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে ২০১৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারী। তৎকালীন পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দাপটে সেদিন আমি আমার বাবার জানাজা নামাজও আদায় করতে পারিনি। স্বৈরাচারের দোসররা দক্ষিণ একসরা মৌজায় আমার ৭২ বিঘা ধানের জমি ও ৮০ বিঘা মৎস্য ঘের জবর দখল করে বেদখল করে দেয়। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়েও আমাকে তারা এলাকায় ঢুকতে দেয়নি। এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়েও দলের নির্যাতিত নেতাকর্মীরা কে কোথায় কিভাবে আছে সব সময়ই খোঁজ খবর নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আওয়ামী হামলা মামলায় আমরা যারা জীবনের বেশিরভাগ সময় জেলখানায় এবং আদালত চত্বরে কাটিয়েছি সে সব নেতাকর্মীরা তার সাক্ষ্য দেবে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমি আমার এলাকায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দিনরাত পরিশ্রম করেছি। অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশী অদৃশ্য কোন নেতাকে ৫ আগস্টের আগে এবং পরে এখনও আশাশুনিতে কেউ আসতে দেখেনি। তাদের ধারণা জনগণের কাছে যাওয়া লাগবে না তারা উল্টে জনগণের কাছে ভোট পাবে। একটা নির্যাতিত, জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী ও পরীক্ষিত পরিবার হিসেবে উপজেলার মানুষ আমাকে এবং আমার পরিবারের প্রতি সব সময়ই আস্থা রেখেছেন। তাই আমি ও আমার উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ বিশ্বাস করে যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে সাতক্ষীরা ০৩ আসনে সংসদ সদস্য পদে আমাকে মূল্যায়ন করে দলীয় মনোনয়ন প্রদান করবেন। তিনি আরো বলেন, অতীতে দেখেছি এ আসনে বিএনপির কোনো সংসদ সদস্য নির্বাচিত না হওয়ায় আশাশুনি এখনও অবহেলিত ও বঞ্চিত। তাই আশাশুনিতে পরিপূর্ণ উন্নয়ন তথা জাতীয়তাবাদী শক্তির উন্নয়ন চাইলে আশাশুনি উপজেলার মানুষ এবং বিএনপি মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করার কোন বিকল্প নেই। চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস সাতক্ষীরা ৩ নির্বচনী এলাকার সকল শ্রেনী পেশার মানুষের দোয়া ও আশির্বাদ কামনা করেছেন।
সাতক্ষীরা-৩ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী রুহুল কুদ্দুস
পূর্ববর্তী পোস্ট