
নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. শিহাবউদ্দীনের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির তহবিল থেকে কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ, নথিপত্র চুরি, দায়িত্বে গাফিলতি ও প্রশাসনিক স্বৈরাচারের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা প্রশাসন ও কলেজ গভর্নিং বডি যৌথভাবে তদন্ত শুরু করেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশোধিত চাকরির শর্তাবলী রেগুলেশন ২০১৯-এর ১৭(ঘ) ধারা অনুসারে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি আগামী ৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয়ে প্রথম বৈঠক করবে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে মো. শিহাবউদ্দীন অনুপস্থিত থাকেন। পরদিন ভোরে কলেজের অফিস সহায়ক মতিয়ার রহমান ও সুসংকর রায়ের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র চুরি হয় বলে রাতের পাহারাদাররা জানান। দীর্ঘদিন ছুটি না নিয়ে এবং উপাধ্যক্ষকে দায়িত্ব না দিয়ে তিনি নিয়ম অমান্য করে অফিসে হাজির হননি। অডিট রিপোর্টে উঠে এসেছে, সাবেক অধ্যক্ষ কলেজ তহবিল থেকে মোট ৮৫,৪২,৩১১ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি কোনো নির্দিষ্ট ক্যাশবহি রাখেননি; ব্যক্তিগত ডায়েরিতে হিসাব রাখার চেষ্টা করেছেন। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষাসফরের নামে ১৬ হাজার টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সম্মানী বাবদ ৪,৯৫,০০০ টাকা ও বিএম কোর্স থেকে ১৮,২৫০ টাকা গ্রহণ করেও কোনো ভাউচার জমা দেননি বা সংশ্লিষ্ট বিভাগে অর্থ প্রদান করেননি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মো. আব্দুস সামাদ ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর দাখিল করা রিপোর্টে উল্লেখ করেন, মো. শিহাবউদ্দীন ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, বড় অংকের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এবং দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সাবেক অধ্যক্ষকে তিন দফায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি জবাব না দেওয়ায় ৫ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর কলেজ গভর্নিং বডি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন, যেটিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা প্রশাসন, কলেজ প্রতিনিধি ও শিক্ষকরা আছেন। মো. শিহাবউদ্দীনের কাছে কলেজ তহবিল থেকে আত্মসাতকৃত অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য ২০২৫ সালের ২২ জুন ও ১০ জুলাই দুই দফা তাগাদা পত্র পাঠানো হয়েছে।
তবে শুধু অর্থ আত্মসাত নয়, ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলায় ঘটে যাওয়া ত্রিপল হত্যা মামলায় মো. শিহাবউদ্দীন ১ নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখিত। এ ছাড়া চাকরি দেওয়ার নামে কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে। আশাশুনি থানায় রুজু থাকা সিআর মামলা নং ৩৯২/২৪-এ তিনি প্রধান আসামি।
অধ্যক্ষ মো. শিহাবউদ্দীন হাইকোর্টে রিট দায়ের করলে তিন মাসের জন্য বরখাস্তাদেশ স্থগিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সরকার পক্ষের আপিলেই সুপ্রিম কোর্ট ২০২৫ সালে হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করে দেন (আপিল মামলা নং-৮৭/২০২৫)। বর্তমানে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও তদন্ত কমিটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধির আলোকে তার স্থায়ী বরখাস্ত, এমপিও বাতিল এবং আত্মসাতকৃত অর্থ ফেরতের জন্য আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে।