আবু হাসান, কেশবপুর (যশোর) থেকে:
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে কপোতাক্ষ নদের ওপরে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও নির্মিত হয়নি একটি সেতু। ফলে এই এলাকার হাজার হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র বাহন এখনো নৌকা।
কেশবপুরের সাগরদাঁড়ি, তালা ও কলারোয়ার মানুষ তাদের নিজ উদ্যোগে কপোতাক্ষ নদের ওপর তৈরি করেছিলেন একটি বাঁশের সাঁকো। বয়সের ভারে সেটিও ভেঙে পড়েছে। তাই দুপাড়ের হাজারো মানুষের একমাত্র ভরসা খেয়া পারাপার। তারা অর্ধেক পথ খেয়ায় এবং বাকি অর্ধেক ভাঙা বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন।
বাঁশের সাঁকো দিয়ে কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি, শেকপুরা, বগা, চিংড়া, নেহালপুর, রেজাকাটি, হাসানপুর, মহাদেবপুর, তালা উপজেলার ধানদিয়া, সারশা, সেনেরগাতী, ফুলবাড়ি, পাঁচপাড়া, সুটিঘাটা, সরুলিয়া শানতলা, নগরঘাটসহ অন্যান্য গ্রাম এবং কলারোয়া উপজেলার জয়নগর, নীলকন্ঠপুর বাটার, সিগনাল, কয়লা শংকরপুর অঞ্চলের মানুষ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে।
মাইকেল মধুসূদন ইন্সটিটিউটশন, সনেট নিম্নমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, সাগরদাঁড়ি আলিয়া মাদ্রাসা, আবু শারাফ সাদেক কারিগরি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আবু শারাফ সাদেক কারিগরি ও বাণিজ্য মহাবিদ্যালয়, মদিনসতুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রজাপতি কিন্ডারগার্ডেনসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন যাতায়াত করে এ ভাঙা সাঁকো দিয়ে।
২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে যায় নদের শ্রোতে আসা শেওলা ও কচুরিপানার চাপে।
১৯৯৪ সালে তৎকালিন রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস সাগরদাঁড়িতে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মোৎসবে অংশ নিয়ে সেতু তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিভিন্ন সময় মন্ত্রীরাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেতু তৈরি করে দেওয়ার। তবে সেসব প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে।
কপোতাক্ষ নদের ওপর সেতু নির্মাণের দাবিতে সাগরদাঁড়ি অঞ্চলের মানুষ কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে যশোর জেলা প্রশাসক বরাবর ২০০৮ সালের ১৬ নভেম্বর লিখিত আবেদন দেন।
সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মোস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত জানান, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি যশোরের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর এক স্মারকে কেশবপুর উপজেলা প্রকৌশলী সাগরদাঁড়ির কপোতাক্ষ নদের ওপর সেতু নির্মাণের ম্যাপসহ কারিগরি প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। এরপর সেতু নির্মাণের আর কোনো অগ্রগতি নেই।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন জানান, কপোতাক্ষ নদের ওপর সেতু নির্মাণের দাবিতে সাগরদাঁড়ি অঞ্চলের মানুষ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে যশোর জেলা প্রশাসক বরাবর ২০০৮ সালের ১৬ নভেম্বর একটি আবেদন করেছিলেন। এখানে একটি সেতু নির্মাণের সবধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।