মন্তব্য প্রতিবেদন- হাবিবুর রহমান
প্রিয় ডাক্তার, নার্স ও সেবাদানে নিয়োজিত সকল স্বাস্থ্যকর্মী ভাই-বোনদের স্যালুট। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সেদিন গ্রাম-গঞ্জ থেকে সাধারণ মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল অনেকটা খালিহাতে। পাকিস্তানিদের সামরিক শক্তিকে সেদিন যেমন মুক্তিযোদ্ধা ভাইরা ভয় পায়নি, আজকে তেমনি ভাবে ডাক্তার-নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী সকল ভাই ও বোনেরাও করোনাযুদ্ধে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ৪০০ জনের অধিক ডাক্তার এবং ৬’শতাধিক নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনাক্রান্ত। এত অধীক সংখ্যাক ডাক্তার নার্স করোনাক্রান্ত হওয়ার মূলে ডাক্তার-নার্সদের প্রয়োজনীয় মান সম্পন্ন ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করতে না পারা। চীনে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয় ডিসেম্বর মাসে। দীর্ঘ প্রায় তিন মাস সময় পেলেও এ দেশের ডাক্তার-নার্সদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি। আনা হয়নি তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট। এ ঘটনা এখন পুরোনো। পত্র পত্রিকায় ও টেলিভিশনে এসব নিয়ে বিস্তর কথা-বার্তা ও লেখালেখি হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের ব্যার্থতার বিষয় প্রসঙ্গে কথা হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, প্রয়োজনে বিদেশ থেকে ডাক্তার নার্স আনা হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে ডাক্তার নার্সদের বরখস্তাদেশ জারী করা হলো। পরিপত্র জারী করে বলা হলো ডাক্তারদের অবহেলার বিষয় নজরে আসলে পুলিশ বিভাগ ও সেনা বাহিনীর নজরে আনতে। এসব করে ডাক্তার নার্সদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মুখোমুখি করা হলো। এরপর সংশ্লিষ্ট বিভাগের কিছুটা বধোদয় হলো। পরিপত্র বাতিল করা সহ নমনীয় হলো তারা। সর্বশেষ ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিডিএফ এর হিসাব মতে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ন হওয়া ৪০০ জনের অধিক ডাক্তার করেনাক্রান্ত। নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী আরও অন্তত ছয়’শ হবে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় অধিকাংশ ডাক্তার নার্সরা করোনাক্রান্ত হবে এবং সঙ্গত কারনে হাসপাতালও লকডাউন হবে। ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য।
এ দায় কে নেবে? মান সম্পন্ন প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট ডিমান্ড করায় এই সেবাদানকারী কমিউিনিটিকে যারপরনাই গালমন্দ করা হলো। এত অধীক সংখ্যক ও ডাক্তার নার্স করোনাক্রান্ত হওয়ার কারন হলো মান সম্পন্ন ইকুইপমেন্ট না থাকা।
ইতোমধ্যে সিলেট মেডিকেলের একজন খ্যাতিমান চিকিৎসকের প্রানহানী ঘটেছে। তিনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবাও পাননি।
এখন মুল কথা হলো যেহারে ডাক্তার নার্স করোনাক্রান্ত হচ্ছে তাতে স্বাস্থ্য সেবা ভেঙ্গে পড়লে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। পরিস্থিতি রুখতে না পারলে দায় সরকারের ওপর বর্তাবে। সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর, প্রযুক্তি সম্পন্ন উন্নতচিকিৎসা সেবা প্রদান কারী দেশগুলো দিশেহারা। সেখানে আমাদের দেশের স্বাস্থ্য বিভাগকে এখনও যদি প্রয়োজনীয় মান সম্পন্ন ইকুইপমেন্ট না পায় তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে যেতে বাধ্য।
ডাক্তার নার্স ভাইবোনেরা অনেকটা ৭১ সালের মত খালি হাতে যুদ্ধে নেমেছেন। তারা মান সম্পন্ন ইকুইপমেন্ট ছাড়াই সম্মুখ যুদ্ধে। ফলে দ্রুত বেড়ে চলেছে তাদের করোনাক্রান্তের সংখ্যা। এ অবস্থা চলতে থাকলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার ও নার্সরা একে একে সবাই আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে। এ আশংকা কোন ভাবেই বাস্তবরূপ নিক তা আমরা চাইনা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ নিয়ে ডাক্তার নার্সদের আক্রান্ত হওয়ার হার শুন্যের কোটায় নামিয়ে আনবেন এ প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।