দীর্ঘ দুই মাস পর রোববার (৩১ মে) থেকে চালু হচ্ছে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ সার্ভিস। সোমবার থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালু হতে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে চলমান লকডাউন আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে সীমিতভাবে অফিস চালুর পাশাপাশি নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলবে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ।
পাশাপাশি খুলে দেওয়া হচ্ছে হাটবাজার, দোকানপাট ও শপিংমল। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তা খোলা রাখা যাবে।
৩১ মে থেকে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত চলাচল সীমিত করে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে এসময়ে গণপরিবহনগুলো কীভাবে চলবে সে বিষয়ে নির্দেশনা জারি করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এতে ১৫ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে বলা হয়, উক্ত সময়ে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বিধি নিশ্চিত করে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল করতে পারে। তবে সব অবস্থায় মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া বিমান কর্তৃপক্ষ ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত নিজ ব্যবস্থাপনায় বিমান চলাচলের বিষয়টি বিবেচনা করবে। বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে শুধু ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট চলবে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরেও ফ্লাইট চলাচল চালুর চিন্তা-ভাবনা চলছে। আপাতত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে ডমেস্টিক ফ্লাইট চলাচল শুরু হবে।
রাজশাহী, যশোর, বরিশাল, কক্সবাজার বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচলের বিষয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যান বলেন, এক সপ্তাহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরে অন্য সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হবে। এছাড়া সপ্তাহখানেকের মধ্যে যদি এই চারটি বিমানবন্দর স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী ও ফ্লাইটের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে পারে তাহলে সেসব বন্দরগুলোকেও ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেয়া হবে।
নিষেধাজ্ঞাকালীন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না। তবে অনলাইন পাঠদান অব্যাহত থাকবে। ১ এপ্রিল থেকে নির্ধারিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত হয়ে গেছে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে।
বৈশ্বিক মহামারী রূপ নেওয়া ছোঁয়াচে রোগ কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ আটকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ দেশের অফিস-আদালত; তখন থেকে গণপরিবহনও রয়েছে বন্ধ। ঘরবন্দি থাকার এই সময়ে কিছু বিধি-নিষেধ শিথিলের পর যখন সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে সবচেয়ে বেশি; তখন ঈদ কাটিয়ে অফিস ও গণপরিবহন চালু হতে যাচ্ছে ৩১ মে থেকে।
১৫ জুনের পর কী হবে, সেই প্রশ্নে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ১৫ জুন পর্যন্ত আমরা এসব নিয়মকানুন কতটুকু মানতে পারলাম সেটা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মানতে হবে যে ১৫ শর্ত
# ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। ৫, ৬, ১২ ও ১৩ জুনের সাপ্তাহিক ছুটি এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
# নিষেধাজ্ঞাকালে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় জনসাধারণের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। প্রতিটি জেলার প্রবেশ ও বহির্গমন পথে চেকপোস্টের ব্যবস্থা থাকবে। জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় এ নিয়ন্ত্রণ সতর্কভাবে বাস্তবায়ন করবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে চলাচলে নিষেধাজ্ঞার সময়ে জনগণকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (প্রয়োজনীয় ক্রয়-বিক্রয়, কর্মস্থলে যাতায়াত, ওষধ কেনা, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। বাইরে গেলে চলাচলের সময় অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
# জনসাধারণ ও সব কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশমালা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
# হাট-বাজার, দোকানপাটে কেনাবেচার সময় পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি ‘কঠোরভাবে’ প্রতিপালন করতে হবে। শপিংমলের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও স্যানিটাইজার রাখতে হবে। শপিংমলে আসা যানবাহনগুলোকে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাটবাজার, দোকানপাট এবং শপিংমলগুলো বিকাল ৪টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে।
# আইনশৃঙ্খলা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কাজে নিয়োজিত সংস্থা এবং জরুরি পরিষেবা যেমন- ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (স্থল বন্দর, নদীবন্দর এবং সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
# সড়ক ও নৌপথে সকল প্রকার পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত যানবাহন (ট্রাক, লরি, কার্গো ভেসেল প্রভৃতি) চলাচল অব্যাহত থাকবে।
# কৃষিপণ্য, সার, বীজ, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্প পণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এসবের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
# চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মী এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম বহনকারী যানবাহন ও কর্মী, গণমাধ্যম (ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া) এবং কেবল টিভি নেটওয়ার্কে নিয়োজিত কর্মীরা এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবেন।
# ওষুধ শিল্প, কৃষি এবং উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো, উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্পসহ সকল কারখানা শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করে চালু রাখা যাবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রণীত ‘বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণে নির্দেশনা’ প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে।
# এই নিষেধার সময়ে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না। তবে অনলাইন কোর্স বা ডিসটেন্স লার্নিং অব্যাহত থাকবে।
# ব্যাংকিং ব্যবস্থা পূর্ণভাবে চালু করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
# সকল সরকারি/আধা-সরকারি/স্বায়ত্বশাসিত এবং বেসরকারি অফিস নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি, অসুস্থ কর্মচারী এবং সন্তানসম্ভবা নারীরা কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এক্ষেত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত তরার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে জারি করা ১৩ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। জরুরি অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্র ছাড়া সব সভা হবে ভার্চুয়াল।
# এই নিষেধাজ্ঞার সময় কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না। শর্ত সাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বিধি-নিষেধ নিশ্চিত করে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল করতে পারবে। তবে সব অবস্থায় মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
# বিমান কর্তৃপক্ষ নিজ ব্যবস্থাপনায় বিমান চলাচলের বিষয় বিবেচনা করবে।
# নিষেধাজ্ঞার সময় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত ও অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদগুলোতে জনসাধারণের জামাতে নামাজ আদায় এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা অব্যাহত থাকবে।