কমিটি ঘোষণার কয়েক ঘন্টা পর সংশোধনী দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা
কমিটি বাতিলের দাবিতে দফায় দফায় বিক্ষোভ সমাবেশ
এস কে সিরাজ, শ্যামনগর থেকে: শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির দুই দফা আহবায়ক কমিটি নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিতর্ক উঠেছে শ্যামনগর পৌর বিএনপির কমিটি নিয়েও। শ্যামনগর উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির নবগঠিত এসব কমিটি বাতিলের দাবিতে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপির পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। তাদের দাবী ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে কমিটি দেওয়া হয়েছে।
গত রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জেলা বিএনপির আহবায়ক এড. সৈয়দ ইফতেখার আলী ও সদস্য সচিব আব্দুল আলিম স্বাক্ষরিত পত্রে জি এম সোলায়মান কবির কে আহবায়ক ও গোলাম আলমগীর কে সদস্য সচিব করে ৪৩ সদস্য বিশিষ্ট শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির কমিটি ঘোষনা করা হয়। তার কয়েক ঘন্টা পর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব স্বাক্ষরিত সংশোধিত অপর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জি, এম সোলায়মান কবিরের পরিবর্তে মাষ্টার আব্দুল ওয়াহেদ কে আহবায়ক ও জি,এম সোলাইমান কবীর কে সদস্য সচিব ঘোষনা করা হয়।
একই দিন শেখ লিয়াকত আলীকে আহবায়ক ও সামছুজ্জোহা টুটুল কে সদস্য সচিব করে শ্যামনগর পৌর বিএনপির ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি প্রদান করা হয়। দুই দফা শ্যামনগর উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির কমিটি ঘোষণার খবর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন পদবঞ্চিতরা। নিজেদের দলের ত্যাগী নেতাকর্মী দাবি করে রবিবার রাতেই আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। দ্রুত উক্ত কমিটি বাতিলের দাবীও জানান তারা।
বিক্ষোভের অংশ হিসাবে সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকাল থেকে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। শ্যামনগর উপজেলার প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল শেষে উপজেলা প্রেসক্লাব চত্বরে সমাবেশে মিলিত হন নেতাকর্মীরা। এসময় বিক্ষোভকারীরা “অযোগ্য কমিটি মানি না,” “ত্যাগীদের বঞ্চনা চলবে না” ইত্যাদি স্লোগান দেন।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা অভিযোগ করেন, নবগঠিত কমিটিতে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দেয়া হয়েছে।
বিএনপির উক্ত কমিটির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে শ্যামনগর উপজেলা বিএনপি নেতা জহুরুল হক আপ্পু বলেন, আমরা ১৭ বছর ধরে জেল, জুলুম, হয়রানি ও নির্যাতন সহ্য করেছি। তখন আমরা দলের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলাম। অথচ এই কমিটিতে এমন অনেককেই রাখা হয়েছে, যারা গত ১৭ বছরে আমাদের পাশে ছিল না এবং আন্দোলনে তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না।
তিনি আরও বলেন, যারা দলের সংকটের সময় একবারের জন্যও মাঠে আসেনি, তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে আমাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। আমরা এই কমিটি মানি না। এটি বাতিল করতে হবে।
উপজেলা বিএনপির অন্যতম নেতা এডভোকেট আশিক ই এলাহী মুন্না বলেন, “আমরা এই কমিটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। দলীয় হাইকমান্ডের কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হবে। আমাদের দাবি না মানা হলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।”
পদ্মপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি মোঃ আমজাদুল ইসলাম বলেন, দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করার কথা ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি। আমরা এই কমিটি বাতিলের দাবি জানাই।
উপজেলা বিএনপির অন্যতম নেতা গাজী শাহ আলম বলেন, “বিগত সময়ে বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে আমরা মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। আমাদের অনেক নেতাকর্মী এখনো বিভিন্ন মামলায় হাজিরা দিচ্ছে। অথচ এসব ত্যাগের কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি। কমিটি গঠনে দুর্বৃত্তায়ন ও স্বজনপ্রীতি হয়েছে।
প্রতিবাদ সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন, যুবদল নেতা হাফিজ আল কল্লোল, নাজমুল হক, পৌর বিএনপি নেতা আব্দুল হামিদ, খান আব্দুস সবুর, মোঃ আব্দুর রশিদ কৈখালী বিএনপির সাধারন সম্পাদক সহ আরো অনেকে।