
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার সুন্দরবন ঘেঁষা ভারত সীমান্তের ধার দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রফিকুল ইসলাম ওরফে বড় ছেলে ও তার বাহিনী। শতাধিক ক্যাডার এখন তাকে ঘিরে থাকে। লাঠিসোটা ধারালো অস্ত্র দিয়ে যেখানে প্রয়োজন সেখানে হানা দিয়ে আদায় করে চাঁদা। বারবার সন্ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে এলাকার মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে বাহিনী প্রধান রফিকুল ওরফে বড় ছেলে ও তার বাহিনী।
স্থানীয়রা বলছেন ভিন্ন এলাকা থেকে আসা রফিকুল তার মার সাথে থাকতো সরকারের খাসজমিতে। এখন কোটি টাকার মালিক রফিকুলের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলতে সাহস করে না। কারণ তার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক শক্তি। এলাকাবাসী বলছেন তার দাপট এতো বেশি যে একমাত্র আল্লাহ তার বিচার করতে পারে।
নানা অভিযোগ রফিকুল ওরফে বড়ছেলের বিরুদ্ধে। চোরাচালান, মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি তাদের প্রধান কাজ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন কয়েকজন অসাধু পুলিশ ও বিজিবি সদস্যের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আর ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় থাকায় কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না ।
এ ব্যাপারে বড় ছেলে বাহিনীর প্রধান রফিকুল ইসলাম ওরফে রড় ছেলে বলেন, তার দলে শতাধিক লোক রয়েছে। তারা ভারতীয় গরু কেনা বেচাকেনা করে। তার ও তার বিরুদ্ধে আনীত অন্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি আরো বলেন, এলাকায় রাজনৈতিক বিরোধের জেরে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে।
শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী নুরনগর ও কুলতলি এলাকার এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, বড় ছেলে বাহিনী তার কাছে আট লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছে। তিনি তা দিতে অস্বীকার করায় তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে তার ওপর।
এমন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে জানান, বড় ছেলে বাহিনীর অত্যাচারে তারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। বড়ছেলে বাহিনীতে রয়েছে আনার, সাইফুল, হযরত, আশরাফুলসহ শতাধিক ক্যাডার। এসব ক্যডাররা সব সময় হাতুড়ি, চাকু, হকস্টিক, লোহার রড নিয়ে চলাফেরা করে। সম্প্রতি কুলতলি গরুর খাটাল ও নুরনগর বাজার এলাকায় বোমাবাজি ঘটনাও ঘটায় ত্রাা। এখন খাটাল রয়েছে তাদের নিয়ন্ত্রনে। ভারত থেকে আসা গরুপ্রতি ৫শ’ ৫০ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও বড় ছেলে বাহিনী তাদের কাছ থেকে আদায় করে ১০ হাজার টাকা । চাঁদা না পেয়ে এরই মধ্যে তারা কয়েকজনকে মারপিট করেছে।
স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী আবদুস সামাদ জানান, তাদের দাবি অনুযায়ী টাকা না দেওয়ায় তিনিসহ অনেকে হামলা ও মামলার শিকার হয়ে সম্প্রতি জেলও খেটেছেন।
ভারতীয় গরুর খাটাল মালিক নির্মল পাল ওরফে মানা জানান, সরকারের অনুমতি নিয়ে তিনি খাটাল পরিচালনা করেন। এলাকায় খাটাল চালাতে গেলে অনেকের সাথে মিলে মিশে চলতে হয়। তবে গরু প্রতি কত টাকা আদায় করা হয় সেটা তিনি মোবাইল ফোনে বলতে রাজি হননি ।
এই এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য মোবারক হোসেন মন্টু জানান, বড় ছেলে বাহিনীর বিরুদ্ধে এলাকার কেউ কথা বলতে সাহস পায় না। এখানে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন দুইভাগে বিভক্ত। এদের বিরুদ্ধে কথা বললে হামলা মামলার শিকার হতে হয় ।
নূরনগর ইউপি চেয়ারম্যান বখতিয়ার আহম্মেদ জানান, বড় ছেলে ও তার দলের সদস্যরা বেপরোয়া গতিতে চলছে। পুলিশ এদের বাড়িতে এসে খাওয়া দাওয়া করে। উপজেলার ক্ষমতাসীন দলের লোকজন তাদের শেল্টার দেয়। দিন আনা দিন খাওয়া বড় ছেলে এখন অনেক টাকার মালিক। আল্লাহ ছাড়া এদের বিচার কেউ করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শ্যামনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আতাউল হক দোলন জানান, রফিকুল দলের কোন পদে আছে তিনি জানেন না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
বিজিবির দরমুজখালী ক্যাম্পের সুবেদার সাঈদ জানান, খাটালে এসে কিছু ছেলে ঝামেলা করে শুনেছি। এর পরে যদি অভিযোগ পাই তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
শ্যামনগর থানার ওসি নাজমুল হুদা রফিকুল ইসলাম ওরফে বড় ছেলে বাহিনী সম্পর্কে বলেন, তার রাজনৈতিক কানেকশন আছে। তবে চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অভিযোগ সম্পার্ক তার জানা নেই। তিনি এদের খোঁজ খবর নিয়ে আনিগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।