
সচ্চিদানন্দদেসদয়: বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আজ শুক্রবার শুরু হচ্ছে। এবার দেবীর ঘটকে আগমন।প্রতিবারই কোনও না কোনও বাহনে মর্ত্যে আগমন ও মর্ত্য থেকে গমন হয় মা দুর্গার। এমনই মত শাস্ত্রজ্ঞদের। আর ঐতিহ্য পরম্পরা মেনে সেই বাহনের বিচারে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় যে মায়ের গমন ও আগমনে কী ফল উঠে আসতে চলেছে। ঘটকে মায়ের আগমন মানেই হল ফল ছত্রভঙ্গ। তাতে সমস্ত কিছু ওলট পালট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৮ অক্টোবর বিজয়া দশমী। আর মায়ের গমনও এবার ঘোটকে, অর্থাৎ ঘোড়ায়। ঘোডায় এই গমন মোটেও ভালো ফল নয় বলে দাবি শাস্ত্রজ্ঞদের। এতে সামাজিক অস্থিরতা ও সাংসারিক সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজার প্রথম দিন আজ ষষ্ঠীতে মাতৃরূপে আজ শুক্রবার মন্ডপে মন্ডপে ঠাঁই নেবেন দেবী। ঢাকে পড়বে কাঠি, ধুপের ধোঁয়া আর ঢাক-ঢোলের সঙ্গে ভক্তিমন্ত্রে মেতে উঠবে পূজা মন্ডপ। খড়গ-কৃপাণ, চক্র, গদা, তীর-ধনুক, ত্রিশুল আর কল্যাণ নিয়ে উপস্থিত হবেন, মহিষাসুর বধ করে হেসে উঠবেন দেবী। আসুরিক শক্তির বিনাশ আর শান্তি কল্যাণ ও সমৃদ্ধি লাভের জন্য হিন্দু সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে মা দুর্গার আরাধনা করে আসছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে শান্তি সংহতি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য এবং দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনে বিশ্বব্যাপী মঙ্গল ধ্বনি দিয়ে মা দুর্গা এ সময় কৈলাশ ছেড়ে লোকালয়ে আসেন। দুর্গাপূজা হয় আশ্বিনের শুকা¬ ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত। ষষ্ঠীর সন্ধ্যাকালে হয় বোধন। বোধন মানে জাগানো। মানুষের ছয় মাসে দেবতাদের একদিন এক রাত। শরৎকালে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। রাবণ বধের জন্য শ্রীরামচন্দ্র অসময়ে এই শরৎকালে মা দুর্গাকে জাগিয়ে তুলতে আরাধনা করেছিলেন। এই ঐতিহ্য স্মরণ করে এখনও শরৎকালে ষষ্ঠীর সন্ধ্যাকালে বোধন হয়। পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম বসন্তকালে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। পরে রামচন্দ্র তার পতœী সীতাদেবীকে রাবণের হাত থেকে উদ্ধারের জন্য শরৎকালে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। তাই শরৎকালের এই পূজাকে অকাল বোধন বলা হয়। বোধন হয় বেল গাছের তলায়। দেবতারাও বেল গাছের তলায় বোধন করেছিলেন। বেল গাছের অন্য নাম শ্রীবৃক্ষ। শ্রী অর্থ সম্পদ বা সৌন্দর্য। তাই, পূজারী সম্পদ বা সৌন্দর্য বা সংসারের উন্নতির জন্য জ্ঞান ভক্তি লাভের জন্য বিল্ববৃক্ষের মূলে দুর্গাপূজার বোধন করেন। বোধনে ঘট স্থাপন করা হয়। ঘট হল হৃদয়ের প্রতীক। ঘটের জলে যেমন প্রতিবিম্ব পড়ে, সেরকম ভক্তের হৃদয়েও মায়ের ভাব বা স্বরূপের ধারণা হয়। সেই ধারণা অনুযায়ী প্রতিমা তৈরী হয়। অন্যদিকে, আবার এই প্রতিমা দেখেই ভক্তের মনের ভাব প্রকাশিত হয়। তাই, ভক্ত নিজের হৃদয়ে, ঘটে এবং প্রতিমায় মায়ের পূজা করে থাকেন। আজ কল্পারম্ভ। কল্পারম্ভ হলো পূজার পরিকল্পনা শুরু। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী এই তিনদিন মায়ের বিশেষ পূজার সংকল্প বা পরিকল্পনা হয় এই কল্পারম্ভে। কল্পারম্ভ হতেই শ্রী শ্রী চন্ডীপাঠ হয়ে থাকে। চন্ডী গ্রন্থ মার্কন্ডেয় পুরানের অন্তগত। এ চন্ডীতে মায়ের পূজার দার্শনিক ভাব ও প্রতিমায় বিশেষ করে মাটির প্রতিমায় পূজার মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। এরপর রয়েছে দেবীর বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাস। দুর্গাপূজার অধিবাস হলো বিভিন্ন সুগন্ধি ও মাঙ্গঁলিক দ্রব্য স্পর্শ করে অতিথি বরণ করে নেয়ার মত মা দুর্গাকে প্রতিমায় এবং নব পত্রিকায় বরণ করে নেওয়া। বোধনের পরেই প্রতিমায় মায়ের অধিবাস করার নিয়ম। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শনিবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব।সাতক্ষীরা জেলার প্রতিটি পূজা মন্ডবে উৎসব চলাকালে পূজার প্রতিদিনই অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতির আয়োজন করা হবে। এছাড়া মন্ডপে মন্ডপে আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়েছে।