
শেখ বাদশা: চলমান লকডাউনে ঘরবন্দী হয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন পার করছে আশাশুনির প্রত্যন্ত অঞ্চলের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। বিগত লকডাউনে তাদের বিষয়ে জেলা প্রশাসন সার্বিক খোঁজ খবর নিলেও এবারের লকডাউনে তাদের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে না কেউ। খোঁজ নেওয়ার যেন আসলেই কেউ নেই। এমনই দুঃখ প্রকাশ করেন আশাশুনি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘরবন্দী খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। এ উপজেলায় হিন্দু, মুসলিম সহ বিভিন্ন ধর্মের নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস। কেউ দোকানী, কেউ কর্মচারী, কেউ ভ্যান বা যানবাহন চালক আবার কেউবা শ্রমিক।
সরকার ঘোষিত লকডাউনে তাদের নিয়মিত আয়ের উৎস দোকান ও যানবাহন বন্দ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। চলমান লকডাউনে ত্রানের বাজেট না থাকায় ক্ষুধার তাড়নায় ক্ষুধার্ত পরিবারের মুখে এক মুঠো ভাত তুলে দিতে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছেন বিভিন্ন অপরাধকর্মে। রাত হলেই বাড়ছে চুরি, ছিনতাই সহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ। এছাড়া লকডাউনে কোন কাজ বা আয়ের উৎস না থাকায় বাধ্য হয়ে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে মাদক ব্যবসায়। আর এ সকল মাদকদ্রব্য মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পৌঁছে দিচ্ছে বিত্তবান মানুষের কাছে। ইতিমধ্যে আশাশুনি উপজেলার কুল্যা বায়তুন আমান জামে মসজিদের দানবাক্স ভেঙে অর্থ লুট, উপজেলার ভিন্ন এলাকার কয়েকটি বাড়িতে ঢুকে হাস মুরগী ও মুরগীর খামার থেকে ডিম চুরি সহ মৎস্য ঘেরের আটন থেকে মাছ চুরির ঘটনা ঘটেছে। এদিকে ক্ষুধার তাড়নায় বাজার ও গ্রাম অঞ্চলের ছোট-খাট দোকানপাট তারা কিছু সময়ের জন্য খুললেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মোটা অংকের জরিমানায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানার বিষয়টি প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ দেখে তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করতে দেখা গেছে। বর্তমানে তাদের ঘরে নেই খাদ্য, বাইরে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তারা যেন ঘরে বসেই মৃত্যুর প্রহর গুনছে। কান্না জড়িত কন্ঠে দৈনিক সাতনদীর কাছে এ ভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের দিন আনা দিন খাওয়া সাধারণ মানুষ। শ্রমজীবী, দিনমজুর, নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষের দাবি, সরকার লকডাউন দিলে আমরা ঘরে থাকবো তখনই যখন সরকার আমাদের পরিবারের খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করবে । তা না করলে পেটে ক্ষুধা নিয়ে লকডাউনের নামে আমাদেরকে ঘরবন্দি করে রাখা যাবে না।
এ দিকে ব্যবসায়ীরা সরকারী নির্দেশনা মেনে বাড়িতে বসে থাকায় লকডাউন চলাকালিন সময়ে দোকান ঘরের ভাড়া মওকুফের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন তারা। আশাশুনি উপজেলার অসহায় মানুষ মহামারী করোনার মরণ ছোবল থেকে রক্ষা এবং অনাহারের হাত থেকে নিজের পরিবারকে বাঁচাতে জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ।