
অনলাইন রিপোর্ট: বাবার প্রতিষ্ঠা করা সংগঠনের কাণ্ডারি হয়ে ফিরে এসেছেন ছেলে। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হলেও রাজনীতির মাঠে খুব একটা দেখা যেত না তাকে। যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি নেওয়ার পর দেশে ফিরে ব্র্যাক ও ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। বলছিলাম বাংলাদেশ যুবলীগের বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ-এর কথা। দেশের যুব সমাজের নতুন এই কাণ্ডারির বেড়ে ওঠা এবং নতুন প্রজন্মকে নিয়ে তার ভবিষ্যৎ ভাবনার কথা নিয়ে এ আয়োজন।
পঁচাত্তরের ট্র্যাজেডির পর স্বজনদের কাছেই বেড়ে ওঠা
‘বাবা-মাকে যখন হারিয়েছি, তখন আমার বয়স মাত্র পাঁচ। আর ছোট ভাই শেখ ফজলে নূর তাপসের বয়স সাড়ে তিন বছরের মতো। এরপর দুই চাচা ও চাচি, দাদি ও ফুফুরাই আমাদের বড়ো করেন। আমার ফুফু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন আমাদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে। এমনকি তারা আমাদের কখনোই বুঝতে দেননি যে আমাদের এমন একটি বড়ো ক্ষতি হয়ে গেছে।’ শুরুতে নিজের বেড়ে ওঠা সম্পর্কে এমনটাই বলছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি ও যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির বড়ো ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে বাবা শেখ ফজলুল হক মণি ও মা আরজু মণিকে হারান তিনি। পঁচাত্তরের ট্র্যাজেডির পর দুই ভাইয়ের বেড়ে ওঠা তাদের দুই চাচার কাছে। রাজধানীর ধানমন্ডি সরকারি বালক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি নেওয়ার পর পর পরশ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের লক্ষ্যে পড়তে যান যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে থেকে আরেকটি এমএ ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে প্রথমে ব্র্যাক ও পরে ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় মনোনিবেশ করেন তিনি।
তারুণ্য কেটেছে ক্রিকেট কিংবা গিটারে
শৈশবেই জীবনের সবচেয়ে বড়ো ক্ষতির সম্মুখীন হলেও একটি ঝলমলে তরুণবেলা ছিল শেখ ফজলে শামস পরশের। ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সময় শেখ পরশের তরুণবেলা ছিল আর দশটা শহুরে তরুণের মতোই। বন্ধুদের সঙ্গে কফি হাউস কিংবা এলিফেন্ট রোডের রেইনবোর গলিতে আড্ডায় কেটেছে অনেকটা সময়। একসঙ্গে বেড়ে ওঠা সেই বন্ধুরা অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয়। আড্ডার পাশাপাশি প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল মিউজিক আর খেলাধুলার দিকেও। তিনি বলেন, ‘আমাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট কিংবা ক্রিকেটের একজন নিয়মিত দর্শক বলতে পারেন। দিনের যেকোনো সময়, এমনকি ভোরবেলা হলেও অ্যালার্ম দিয়ে ঘুম থেকে উঠে খেলা দেখা আমার নিয়মিত অভ্যাস। তারুণ্যের একটা বড়ো সময় দিয়েছি এখানে।’ খেলাধুলার পাশাপাশি অন্তপ্রাণ ছিলেন রক মিউজিকে। এলিফেন্ট রোডের সেই আড্ডাই বড়ো একটি ভূমিকা রেখেছিল বাংলাদেশের আধুনিক রক মিউজিকে। আশির দশকের শেষের দিক বা নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে বাংলাদেশের আধুনিক রক মিউজিকের যে বৈপ্লবিক- পরিবর্তন আসে, সেখানেও নেপথ্যে থেকে ভূমিকা রাখেন পরশ। এর পাশাপাশি পশুপাখির প্রতি অদম্য ভালোবাসা ছিল তার, পশুপাখির অধিকার সংরক্ষণের বিষয়েও সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন তিনি।
তরুণদের মাঝেই খুঁজে ফেরেন নিজেকে
শিক্ষকতায় যুক্ত থাকার ফলে সব সময়ই তরুণদের কাছাকাছি ছিলেন শেখ ফজলে শামস পরশ। আর তাই বর্তমান তরুণদের চালচলন অভ্যাস সবই তার নখদর্পণে। তিনি বর্তমান প্রজন্মকে মেধাবী ও সৃজনশীল মনে করেন। তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষক হিসেবে আমি তরুণদের নিয়েই কাজ করি। যখন তাদের মাঝে যাই, তখন নিজের তরুণবেলায় চলে যাই। আমাদের সময় হাতের নাগালে এত তথ্য কিংবা প্রযুক্তি কোনোটাই ছিল না। এখনকার প্রজন্মের হাতের নাগালেই সবকিছু চলে এসেছে, ওরা নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তবে আমি মনে করি, হয়তো পরিবেশ-পরিস্থিতি কিংবা যথাযথ সুযোগের অভাবে ওরা ঘরের বাইরে একটু কম সক্রিয়। বর্তমান প্রজন্মের মেধা আছে, সৃজনশীলতা আছে, হাতে কলমে শিক্ষা আছে, দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোয় অনেকে পড়তে যাচ্ছে, যেটা আগে এত ছিল না। ওদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি সত্যিই আশাবাদী।’
রাজনীতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে
বর্তমান প্রজন্মকে দেশের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে নিয়ে আসার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ ফজলে শামস পরশ। তিনি চান দেশের রাজনীতিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলতে। কেননা, তরুণসমাজ যদি দেশের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে দেশ কখনোই খুব বেশি দূর এগোবে না। দেশের অগ্রগতির পথে এটাকে একটি প্রধান বাধা বলে মনে করেন তিনি। পরশ বলেন, ‘আমার হাতে এখন যে সংগঠনের দায়িত্ব আছে, সেই জায়গা থেকে তরুণদের রাজনীতিতে আসার মতো একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। আমি তাদের মধ্যে যে মেধা, সৃজনশীলতা, উদ্দীপনা দেখি, তারা যেন এখানে সেটা ব্যবহারের পরিবেশ পায়। নতুন প্রজন্মের কাছে রাজনীতিকে দেশ গড়ার একটি মঞ্চ হিসেবে তুলে ধরে, তাদের সামনে এখন যে নেগেটিভ ইমেজটা আছে, তা পরিবর্তন করতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি করলেই হবে না, যদি তারা দেশ গড়ার কাজে অবদান না রাখে। সবাই রাজনীতি করবে না, সেটাই স্বাভাবিক। তাই আমাদের দায়িত্বশীল শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে হবে। তারা যেন নিজেদের জায়গা থেকে দেশ গড়ার কাজে অবদান রাখতে পারে।’
নতুন প্রজন্মের জন্য পরামর্শ
বর্তমান প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছতার জায়গাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে সততা আর বিশ্বাসের জায়গায় অটল থাকতে হবে। নীতির ব্যাপারে আপস করা যাবে না। এর বড়ো একটি উদাহরণ বঙ্গবন্ধু নিজেই। তরুণবেলায় কাজের ক্ষেত্রে তিনিও নিজের নীতির ব্যাপারে আপস করেননি। শুধু বঙ্গবন্ধু নন, বিশ্বের ইতিহাসে যারা আজ স্মরণীয়, সবার ক্ষেত্রেই নীতিতে অটল থাকার বিষয়টি দেখা যায়। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শৃঙ্খলা। যা নতুন প্রজন্মের জন্য অপরিহার্য।’