
অনলাইন ডেস্ক :
পুরুষের ক্ষমতা ভেঙে হোক সমতা’, ‘নারী থেকে নারীতে বিদ্রোহ ছুঁয়ে যাক’, ‘ফুলে নয় গানে নয় বিদ্রোহে কাটবে ভয়’- পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পরাধীনতার শেকল ভাঙার প্রত্যয়ে এমন সব শ্লোগান দিয়েই রাজপথ প্রকম্পিত করছিলেন একদল স্বাধীনচেতা নারী। নানা ধরনের বাধা-নিষেধে নারীরা যখন সমাজের বেড়াজালে বন্দি, তখন মধ্যরাতে রাজধানীর পথে পথে মশাল হাতে পদযাত্রায় নামেন তারা।
মঙ্গলবার ঠিক রাত ১১ টা ৫৯ মিনিটে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে ‘শেকল ভাঙার পদযাত্রা’ ব্যানারে মশাল নিয়ে এই কর্মসূচি শুরু করেন বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীসহ একদল তরুণী। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পদযাত্রা করে ভোর চারটায় মানিক মিয়া এভিনিউতে গিয়ে শেষ হয় এই কর্মসূচি।
পদযাত্রায় ‘দিনে হোক রাতে হোক সামলিয়ে রাখো চোখ’, ‘আমি নির্দোষ আমি নারী, আসল দোষী ধর্ষণকারী’, ‘শোক নয় শক্তি তবেই হবে মুক্তি’, ‘ধর্ষকের কালো হাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘আর কত অনাচার হাত ভেঙে দাও তার’, ‘প্রীতিলতার বাংলায় ধর্ষণের ঠাঁই নাই’, ‘ইলা মিত্রের বাংলায় ধর্ষকের ঠাঁই নাই’, ‘বিলাপে না হলে হবে তা বিদ্রোহে’, ‘গলা ছেড়ে গাও গান পুরুষতন্ত্র হবে খানখান’, ‘ধর্ষণহীন রাষ্ট্র চাই, নিপীড়কের শাস্তি চাই’ ইত্যাদি স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করেন তারা।
পদযাত্রায় অংশ নেওয়া নারীরা বলেন, একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে, মানুষ হিসেবে নারীদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার যে অধিকার, তা কার্যকরী প্রয়োগ না করার প্রতিবাদে এবং নাগরিক হিসেবে নারীদের নিরাপত্তা রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে না পারার প্রতিবাদে ১২টি দাবি নিয়ে আমাদের এ পদযাত্রা। দেশের ঘুমন্ত বিচারব্যবস্থাকে জাগাতে আমাদের এই পদযাত্রা। শেকল ভেঙে সামনে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আমাদের এই পদযাত্রা। রাতের আঁধারে আমরা হাঁটব, গলা উঁচিয়ে প্রতিবাদ করব, রাতের অন্ধকার ভেদ করে সবাইকে জানিয়ে দেব আমাদের দাবির কথা।
পদযাত্রা থেকে তারা ১২ দফা দাবি তুলে ধরেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাপস্বী দে প্রাপ্তি। দাবিগুলো হলো- আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইনে ও সামাজিকভাবে ধর্ষণের সংজ্ঞায়ন সংস্কার করা, পাহাড় ও সমতলের সকল নারীদের ওপর সামরিক ও বেসামরিক সকল প্রকার যৌন এবং সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করা, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-বয়স-লৈঙ্গিক পরিচয় নির্বিশেষে যৌন সহিংসতার ক্ষেত্রে যেকোনোভাবেই ‘ভিক্টিম ব্লেমিং’ বন্ধ করা ও গ্রামীণ সালিশ/পঞ্চায়েতের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা, প্রাথমিক লেভেল থেকেই পাঠ্যপুস্তকে যৌন শিক্ষা (গুড টাচ ব্যাড টাচের শিক্ষা, সম্মতি বা কন্সেন্ট এর গুরুত্ব, প্রাইভেট পার্টস সম্পর্কে অবহিত করা) যোগ করা, ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ১৫৫(৪) ধারা বিলোপ করতে হবে এবং মামলার ডিএনএ আইনকে সাক্ষ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে কার্যকর করা, হাইকোর্টের নির্দেশানুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি,
বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতন বিরোধী সেল কার্যকর ও পূর্ণ বাস্তবায়ন করা, সিডো সনদে বাংলাদেশকে স্বাক্ষর ও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন ও নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল আইন ও প্রথা বিলোপ করা, মাদ্রাসার শিশুসহ সকল শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও কোন শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হলে ৯০ দিনের মাঝে দ্রুততম ট্রাইব্যুনালে অভিযোগের সষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা, জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুমোদিত পাঠ্যপুস্তকে নারী অবমাননাকর বার্তা প্রকাশ ও প্রচার করা নিষিদ্ধ করা, রাস্তাঘাটে নারীদের অযথা পুলিশি ও অন্যান্য হয়রানি বন্ধ করা ও গণপরিবহনে নারীদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা, ধর্মীয় বক্তব্যের নামে অনলাইনে ও অফলাইনে নারী অবমাননাকর বক্তব্য প্রচার বন্ধ করা এবং যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে প্রান্তিক অঞ্চলের নারীদের সুবিধার্থে হটলাইনের ব্যবস্থা চালু করা।