রাশেদ আলী, যশোর থেকে: এ বছর ভয়াবহ করোনা ভাইরাসের কারনে লকডাউনে পড়ে দেশ স্থবির হয়ে যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই বিছিন্ন হয়ে পড়ে। যার প্রভাব পড়েছে মণিরামপুর উপজেলার ইট ভাটার উপর। ফলে ইট তৈরী হলেও বেচা বিক্রি হয়নি ইট। সিজন শেষ হলেও ভাটায় পড়ে রয়েছে কোটি কোটি টাকার ইট। ফলে দায়দেনা শোধ করতে না পারাই সর্বোচ্ছ বিপাকে রয়েছে ইট ভাটা মালিকরা। ভাটা মালিক সুত্রে জানা গেছে, লকডাউনের মাঝে বাইবের কাজকর্ম অনেকটা শিতীল হলেও ইটভাটার কাজ বন্ধ হয়নি। প্রতিটি ইট ভাটায় শত শত শ্রমিক খাটিয়ে ইট তৈরী করা হলেও লকডাউনের কারনে যানবাহন বন্ধ থাকায় ইট বিক্রি হয়নি। অপরদিকে প্রবাসীরা লকডাউনের কবলে পড়ায় অনেকটা অর্থের ঘাটতিতে পড়েছে ভাটা মালিকরা। কারন প্রবাসীদের কাছে ইট বিক্রি করে প্রতি বছর মোটা অংকের টাকা পেয়ে থাকতেন। শুধু এই নয় অনেক প্রবাসীদের কাছ থেকে ইট বাবদ অগ্রিম মোটা অংকের টাকা নিতেন ভাটা মালিকরা। লকডাউনের কারনে এ বছর সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ইট ভাটা মালিকরা। জানা গেছে উপজেলায় সব মিলিয়ে ৩৫টি ইট ভাটা রয়েছে। অধিকাংশ ইটভাটার মালিকরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ভাটার বিপরীতিতে লাখ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত সিসি লোন নিয়ে থাকেন। শুধু এই নয় এনজিও প্রতিষ্ঠান থেকেও ঋন নেন তারা। প্রতি বছর ইট বিক্রি করে ভাটা সিজন শেষে ঐ সকল টাকা পরিশোধ করে থাকেন তারা। পরের বছর আবারও সিসি লোন করেন। অনেক ভাটা মালিকরা এভাবে ইট ভাটা চালিয়ে আসছে। কিন্তু এ বছর লকডাউনের কারনে ইট বিক্রি করতে না পারাই সিসি লোন শোধ করা তো দুরের কথা অন্যন্য দেনা কাটিয়ে উঠতে পারছে না তারা। কিংবা আসছে সিজনে ভাটা চালু করা নিয়ে সর্বোচ্ছ বিপাকে পড়েছে ইট ভাটা মালিকরা। উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন ভাটা ঘুরে দেখা গেছে, ইট ভাটা গুলোতে কোটি কোটি টাকার ইট পড়ে রয়েছে। এর মধ্েয একতা ব্রিকস, সততা ব্রিকস, ঢালী ব্রিকস, বিশ্বাস ব্রিকস, নিউ সততা ব্রিকস, সিদ্দিকীয়া ব্রিকসসহ অধিকাংশ ভাটায় প্রচুর পরিমান ইট রয়েছে। এর মধ্েয বেশি ইট রয়েছে ষোলখাদা গ্রামের একতা ব্রিকস এ। এ ভাটার মালিক আহাদ আলী ও তার ভাই, ইনছান আলী ও খোকা হোসেন। গত কয়েকদিন পুর্বে ভাটাই গেলে ভেঙ্গে পড়েন ভাটা মালিকদ্বয়। তারা বলেন লকডাউনে কোন বেচা বিক্রি নেই। প্রায় কোটি টাকার ইট ভাটায় পড়ে রয়েছে। আমরা শ্রমিকদের বেতন পর্যন্ত দিতে পারছিনা। এদিকে এনায়েতপুর গ্রামের সততা ইট ভাটায় যেয়ে একই অবস্থা দেখা গেছে। ইট বিক্রি না হওয়ায় ভাটা ক্লিনারের ভীতরে ও বাইরে কোটি টাকার মত ইট পড়ে রয়েছে। সততা ব্রিকস এর মালিক কামাল হোসেন, সিরাজুল ইসলাম ও শফিক রহমান। মালিক কামাল হোসেন বলেন লকডাউনের কারনে প্রায় দুই কোটি টাকার ইট পড়ে রয়েছে। এখনও কোন কেনাবেচা নেই।
আগামীতে কি করে ভাটা চালু করবো চিন্এতাই রয়েছি। একই সুরে কথা বলেন ঢালী ব্রিকস মালিক আব্দুল হক ঢালী। তিনি আরো বলেন লকডাউনের মধ্েয ইট তৈরী করা গেলেও কোন প্রকার বিক্রি হয়নি ইট। কারন গাড়ী বন্ধ ছিল তাই। কথা হয় নিউ সততা ব্রিকস এর মালিক আক্তারুজ্জামানের সাথে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, এ বছর ইট খুব কম বিক্রি হয়েছে। বহু ইট ভাটায় পড়ে রয়েছে। আগামী সিজনে কি ভাবে ভাটা চালাবো চিন্তাই রয়েছি। শুধু পশ্চিমাঞ্চল নয় পুরো মণিরামপুরে একই অবস্থা। একদিকে শোধ করতে পারছে না সিসি লোন অপরদিকে দিতে পারছেনা শ্রমিকদের অগ্রিম টাকা। সব মিলিয়ে এবারে মণিরামপুরের ভাটা মালিকরা রয়েছে চরম বিপাকে।