আর মাসখানেক পরেই ঘরে উঠবে আমনধান। ঘরে ঘরে শুরু হবে নবান্ন উৎসব। সেইলক্ষ্যে ধানের যতœনিতে দিনভর পরিশ্রম করছেন কৃষক। এরইমধ্যে কৃষকের কপালে পড়েছে ভাজ। হঠাৎ করেই ধানের আগা পুড়ে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। যশোর মনিরামপুর উপজেলায় বেশিরভাগ মাঠে এই রোগ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করেও মিলছে না আশানুরূপ কোন ফল। কৃষকরা এমন হতাশায় দিন কাটালেও উপজেলা কৃষি অফিস তাদের কোন খবর রাখে না বলেই অভিযোগ।
রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক সুলতান আহম্মদ বলেন, পাঁচবিঘা জমির ধানগাছ কমবেশি আগা পুড়ে যাচ্ছে। বেশি আক্রান্ত হয়েছে একবিঘা। দুইবার স্প্রে করেও ফল মিলছে না। দিনদিন আক্রান্তের মাত্রা বাড়ছে। রোহিতা মাঠের কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, আট শতক জমিতে গুটিস্বর্ণা ধান চাষ করেছি। ধানের থোড় আসার মত হয়েছে। ১৫-২০ দিন আগে এক কোনায় কিছু ধানগাছের পাতা পোড়া দেখা দেছে। পরে এক সার দোকানির পরামর্শে তিন প্রকারের কীটনাশক একসাথে মিশিয়ে স্প্রে করিছি। এখন দেখছি পুরোজমি ধরা করেছে। ওই মাঠের অসিত দাস ও দেবাশীষ বিশ্বাসের দেড় বিঘা করে জমিতে ধানের আড়াপোড়া রোগ দেখা দিয়েছে। তারাও কীটনাশক ব্যবহার করে কোন ফল পাচ্ছেন না। বাগডোব মাঠের কৃষক ওয়াসিম আকরামও একই অভিযোগ করে বলেন, কৃষি অফিসাররা কোনদিন মাঠে উঁকি মেরেও দেখেন না।
চলতি মৌসুমে উপজেলার ২২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে গুটিস্বর্ণা, ব্রি-৫১, ব্রি-৮৭, ব্রি-৯০সহ নানা জাতের আমন চাষ হয়েছে। খোঁজনিয়ে জানা গেছে, উপজেলার মাহমুদকাটি, রঘুনাথপুর, জালালপুর, হেলাঞ্চি, কাশিপুর, ইত্যা, কাশিমনগর, রোহিতা, বাগডোব, পট্টি, সরণপুর, দেবিদাসপুর, কাঁকড়ের বিল, হানুয়ার, শাহাপুর, মোবারকপুর, হরিদাসকাঠি, ঢাকুরিয়া মাঠে বিক্ষিপ্তভাবে ধানে আড়াপোড়া রোগ দেখা গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা বলছেন, গত দুই বছর ধরে আমন মৌসুমে ধানে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তারা চিন্তায় থাকলেও স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা তাদের কোন খোঁজ নেননি। অনেক কৃষক তার এলাকায় কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে চেনেন না।
খেদাপাড়া ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন বলেন, ধানের আগা পোড়া রোধে নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। তাদেরকে ব্যাকটোবান, বেকট্রোল ও নেকসুমিন নামক কীটনাশকের যেকোন একটি পরিমাণমত ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার বলেন, উপজেলার বেশকিছু নিচু ও ছায়াযুক্ত জমির ধানে আগাপোড়া রোগ দেখা দিয়েছে। যেসব জমিতে বেশি ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়েছে সেসব জমিতে এই সমস্যা বেশি। জমির পানি সরিয়ে দিয়ে পটাশ ব্যবহার করলে এই সমস্যা দূর হবে। আমাদের উপসহকারীরা কৃষকদের
পরামর্শ দিচ্ছেন। কৃষকরা সেটা না শুনে বাকির আশায় কীটনাশকের দোকানে গিয়ে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করছেন। ফলে তারা প্র্রতিকার পাচ্ছেন না।
গতকাল দৈনিক সাতনদী পত্রিকায় একটি খবর সুত্রে উপরুক্ত তথ্য জানায়ায়। শেষ মৌসুমে এমন সমস্যা শুধু কৃষক নয় জাতীর জন্য বিপদ সৃষ্টি করবে। এখানে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্মের ঘার্তি উপলব্ধি করাা যাচ্ছে। গেয় কৃষকরা হতাশ হতে পারে কিন্তু বৃষিকর্মকর্তাদের উচিত মাঠ পর্যায়ে খেয়াল রাখা। তাদের সাথে সমন্ময় বজায় রাখা। তাছাড়া সরকারি কর্মচারী হিসেবে এটা তাদের দায়িত্ব। মৌসুমের শেষ মুহূর্তে এসে কৃষক যেন কোন সমস্যায় পরে ক্ষতির শিকার না হয় সেদিকে কৃষি অধিদপ্তর সজাক দৃষ্টি রাখবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
মণিরামপুরে ধানে পোড়া রোগ!
পূর্ববর্তী পোস্ট