
জিয়াউর রহমান, শ্যামনগর: শ্যামনগর উপজেলা ভুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ও ভুরুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শোকাবহ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫আগস্ট) সকাল ১০টায় সময় ভুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে সকলের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করের হাফেজ মো. আলাউদ্দীন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভুরুলিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর আলম লাভলু। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভুরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও কালিগঞ্জ রোকেয়া মুনছুর মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম জাফরুল আলম বাবু। আরও উপস্থিত ছিলেন ভুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. আবুল হোসেন, ইউনিয়ন পরিষদের সকল সদস্য/ সদস্যাগণ, ভুরুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৭নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মুজিবর রহমান, ভুরুলিয়া নাগবাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাফিজুর রহমান, দরগাহপুর এন.ডি.এস. ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষক তৈয়েবুর রহমান, কুয়েত প্রবাসী মো. গাজিয়ার রহমান, পুলিশিং কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার জালাল উদ্দিন সরদার, বিশিষ্ট সমাজসেবক আলমগীর সরদার, সমাজসেবক ব্রজেন্দ্র নাথ, গনমাধ্যমকর্মী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাক প্রধানরা, ছাত্র-ছাত্রী সহ ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষ ও আওয়ামীলীগের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি এ কে এম জাফরুল আলম বাবু বলেন বাঙালি জাতির আজ শোকের দিন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে সংঘটিত হয়েছিল ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। ৪৮ বছর আগে এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করেছিল ক্ষমতালোভী নরপিশাচ কুচক্রী মহল। আজ যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যে জাতীয় শোক দিবস ও বঙ্গবন্ধুর ৪৮ তম শাহাদতবার্ষিকী পালনের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বঙ্গবন্ধু ছাড়াও ১৫ আগস্ট রাতে ধানমণ্ডির বাড়িতে তার সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়ে তার জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল, এসবির কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ও সেনাসদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মনিরের বাসায় হামলা চালিয়ে তাকে, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনিকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার এবং নিকটাত্মীয়সহ মোট ২৬ জনকে ওই রাতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় তারা প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রাবস্থায় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন সংগ্রামী নেতা। শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির মুক্তি সনদ ৬ দফার প্রণেতাও ছিলেন। সত্তরের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে এ দেশের গণমানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতীকে পরিণত করেন। পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলে ষাটের দশক থেকেই তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়কে পরিণত হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার উত্তাল সমুদ্রে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এ ঘোষণায় উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত জাতি পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছিনিয়ে আনে দেশের স্বাধীনতা। জাতির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ পুরুষ বঙ্গবন্ধুর অমর কীর্তি এই স্বাধীন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর গোটা বিশ্বে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। হত্যাকারীদের প্রতি ছড়িয়ে পড়েছিল ঘৃণার বিষবাষ্প। পশ্চিম জার্মানির নেতা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী উইলি ব্রানডিট বলেছিলেন, বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যে কোনো জঘন্য কাজ করতে পারে। বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর স্বাধীনতাবিরোধীরা এ দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পুনর্বাসিত হতে থাকে। তারা এ দেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে নানা উদ্যোগ নেয়। শাসকদের রোষানলে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণও যেন নিষিদ্ধ হয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ঠেকাতে কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করেছিল মোশতাক সরকার। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হলে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত করা হয়। বিচার শুরু হয় ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ললাটে যে কলঙ্কতিলক পরিয়ে দেয়া হয়েছিল, ৩৫ বছরেরও বেশি সময় পর ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি সেই কলঙ্ক থেকে জাতির মুক্তি ঘটে। বঙ্গবন্ধু হত্যার চূড়ান্ত বিচারের রায় অনুযায়ী ওই দিন মধ্যরাতের পর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তবে বিভিন্ন দেশে পলাতক থাকায় আরও ছয় খুনির সাজা এখনও কার্যকর করা যায়নি। এত উন্নয়ন এ দেশে হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার হাত দিয়ে। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টার্নেল, দেশের প্রতিটি জেলায় মেডিকেল কলেজ, রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, সাইক্লোন শেল্টার, কালবাড- ব্রীজ, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, শিশু কার্ড, প্রতিবন্ধী ভাতা, ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি, শিক্ষা বৃত্তি, সহ উপকূলীয় মানুষের জীবনমান উন্নয়নে মেগা প্রকল্প সহ নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এত উন্নয়ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করেছেন যা বলে শেষ করা যাবেনা। দেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে এই উন্নয়নের দিকে তাকিয়ে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রধানমন্ত্রীকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবারও স্বাধীনতার স্বপক্ষে সরকার গঠন করতে হবে। পরিশেষে দোয়া অনুষ্টানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন ভূরুলিয়া ইউনিয়ন আ’লীগের সহ-সভাপতি শিক্ষক শঙ্কর তরফদার।