
আহাদুর রহমান: মানবেতর জীবন যাপন করছেন আমাদের চির চেনা বইয়ের দোকান বা লাইব্রেরির সাথে জড়িত প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ। কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে জেলাব্যাপী বই বেচা-কেনা শূণ্যের কোটায় নেমে গেছে। জীবন ধারণ ও চলতি খরচ যোগাতে কেউ কেউ আবার বইয়ের সাথে বিভিন্ন কসমেটিকস ও স্যানিটাইজার সামগ্রীও বিক্রি করছেন।
ডিসেম্বর থেকে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ বা করোনার থাবায় অচল হয়ে পড়ে বিশ্ব অর্থনীতি। বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়তে শুরু করে মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই। মার্চ মাসের ১৮ তারিখ দেশের সকল স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই সাথে বন্ধ হয় সকল পাবলিক পরীক্ষাও। এর মধ্যেই আঘাত হানে আম্ফান। সেই থেকে বেচা-বিক্রী কমে গেছে বইয়ের দোকান বা লাইব্রেরি গুলোতে। সোজা কথায় শিক্ষা উপকরণ বিক্রি প্রায় শূন্যের কোটায়। এ অবস্থাতে বিপাকে পড়েছেন জেলার ২২৫টি লাইব্রেরির মালিক-কর্মচারী। তারা নিজেদের স্টলের খরচ তুলতেই হিমসিম খাচ্ছেন। বাকি থাকছে কর্মচারীদের বেতন। অনেকে আবার কর্মচারী ছাঁটাইও করছেন। সেই সাথে শুরু করেছেন স্যানিটাইজার সহ কসমেটিকসের ব্যবসা। এর মধ্যে চলতি বছর নোট ও গাইড বই কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করে সরকার। ফলে জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারীতেও ব্যবসা ভাল হয়নি তাদের। এর মাঝে অভিযান চললে প্রায় কোটি টাকার বই জব্দ করা হয় কয়েকটি দোকান থেকে। কিন্তু স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে নোট গাইড সংগ্রহ করে। ফলে যশোর-খুলনার বইয়ের দোকানে নোট গাইডের ব্যবসা রমরমা হলেও মার খায় সাতক্ষীরার লাইব্রেরী গুলো। ফলে পুরো বছরই চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে আছেন তারা। প্রতি বছর পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতিতে লাইসেন্স রিনিউ করতে হয়। কিন্তু এ বছর রিনিউ করেছেন ২২৫ টি লাইব্রেরি থেকে মাত্র ৬০টি। এরকম অচলাবস্থায় হুমকির মুখে পড়েছেন জেলায় লাইব্রেরির সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ। বাংলাদেশে বর্তামানে প্রায় ৩ লাখ পরিবারের প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষ এই ব্যবসার উপর নির্ভরশীল।
বই মেলার স্বত্ত্বধীকারী মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বেচাকেনা একদমই নেই। সারাদিনে হাতেগোনা কয়েকজন বই কিনতে আসে। বেশির ভাগই চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতির বই কেনে। ব্যবসা এতটা খারাপ হতে পারে এটা আমাদের কল্পনার বাইরে ছিল। এখন ঘর ভাড়া, স্টাফদের বেতন কি দিব আর নিজের হাত খরচই বা কি রাখব? এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই।
জেলা পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু সালেক জানান, বই বিক্রি যে ভাবে কমে গেছে তাতে বইয়ের ব্যবসা বাদ দিয়ে হয়তো অন্য ব্যবসা শুরু করতে হবে। তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হলে আর কোন পথ খোলা নেই। কোন বেচা-কেনা নেই বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধের কারণে। অল্প কিছু বই বিক্রি হচ্ছে শুধু মাত্র এ্যাডমিশন ও চাকুরীর পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য। গ্রামাঞ্চলগুলোর লাইব্রেরির অবস্থা আরও খারাপ। শহরে চাকুরী ও ভর্তি পরীক্ষার বই বিক্রী হলেও গ্রামে মোটেও এগুলো বিক্রি হয় না।
এক প্রশ্নের জবাবে আবু সালেক জানান, আমরা পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এখনও কোন রকম সরকারি সহায়তা বা সহায়তার আশ্বাস পাই নাই। খরচ নির্বাহ না করতে পেরে লাইব্রেরি গুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তারা বিকল্প ব্যবসা খুঁজছেন। তিনি আরও বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে লাইব্রেরী গুলো কসমেটিকস ও স্যানিটাইজার বিক্রি করে চলতি খরচ ওঠানোর চেষ্টা করছে।
সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করে আবু সালেক জানান, পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে সহযোগীতার আবেদন করে এখনও সাড়া পাননি। পুস্তক শিল্পটা বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমরা সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। সেই সাথে সরকার যদি বিশেষ কোন লোনের ব্যবস্থা করে তাহলে আমরা ব্যবসাটা টিকিয়ে রাখতে পারব।