
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একাধিক টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ভারতীয় জালরুপি পাচারকারী চক্রের ০৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। গত ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি ধারাবাহিক অভিযানে রাজধানীর ডেমরা ও হাজারীবাগ এলাকা হতে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, আমানুল্লাহ ভ‚ঁইয়া (৫২), কাজল রেখা (৩৭), ইয়াসিন আরাফাত কেরামত (৩৩) ও নোমানুর রহমান খান (৩১)। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত হতে ১৫ লক্ষ ভারতীয় রুপির জাল সুপার নোট এবং মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। উল্লেখ্য যে, গত ২০২১ সালের নভেম্বরে খিলক্ষেত থানায় দায়েরকৃত সাত কোটি ৩৫ লক্ষ ভারতীয় জাল রুপি পাচারসংক্রান্ত মামলাটি গোযেন্দা গুলশান বিভাগের কাছে হস্তান্তর হলে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ তদন্ত শুরু করে।
উক্ত মামলার তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে গত ৭ ফেব্রæয়ারি গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একাধিক টিম পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোড এলাকা থেকে নোমানুর রহমান খানকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত নোমান জানায় পাকিস্তানে অবস্থানকারী তার ভাই মোঃ ফজলুর রহমান ওরফে ফরিদ বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তান হতে আকাশ ও সমুদ্রপথে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ও ভারতীয় জাল রুপির সুপার নোট (৫০০/১০০০) বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রেরণ করে আসছে।
সাম্প্রতিক সময়ে পাচারকৃত জাল রুপির বড় একটি চালানের এক অংশসহ তার ভাই সাইদুর রহমান, ইম্পোর্টার তালেব, সমন্বয়কারী ফাতেমা আক্তার ও অন্যান্যরা ইতোপ‚র্বে গ্রেফতার হলেও বাকি অংশ হাজারীবাগে অবস্থানকারী কাজল এবং আমানদেরকে হেফাজতে রাখা হয়। গ্রেফতারকৃত নোমানের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ২১ নং মনেশ্বর রোড থেকে ইয়াসির আরাফাত ওরফে কেরামত এবং আমান উল্লাহ ভ‚ঁইয়াকে আটক করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে ৬ লক্ষ করে মোট ১২ লক্ষ জাল রুপি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্যে ভিত্তিতে কাজল রেখার বাসায় অভিযান পরিচালনা করে আরো ৩ লক্ষ ভারতীয় জাল রুপি উদ্ধারসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ পাকিস্তান হতে আন্তর্জাতিক চক্রের মাধ্যমে ভারতীয় জাল রুপির সুপার নোট কৌশলে সংগ্রহ করে বিভিন্ন পণ্যের ভিতর, ব্যক্তি বা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে রাজশাহী , চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকা দিয়ে পাচার করে আসছিল।
দীর্ঘদিন যাবৎ জাল রুপি পাচারকারী এ চক্রের কেন্দ্রে আছে ম‚লত দুইটি পরিবার। মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানাধীন একটি পরিবার। এই পরিবারের অধিকাংশ সদস্য একসময় পাকিস্তানের অবস্থান করতো। বর্তমানে এই পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য ফজলুর রহমান পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থান করে পাকিস্তান কেন্দ্রিক মাফিয়াদের কাছ থেকে উন্নত মানের জাল রুপি সংগ্রহ করে কখনো শুটকি মাছ, কখনো মোজাইক পাথর ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর বস্তার মধ্যে করে সমুদ্রপথে বাংলাদেশ প্রেরণ করতো।
এ কাজে তাকে সহযোগিতা করতো তার ভাই সাইদুর রহমান রহমান, নোমানুর রহমান এবং ভগ্নিপতি শফিকুর রহমান। ইম্পোর্টারদের সাথে মিলে পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে শ্রীলঙ্কা হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের মাধ্যমে আনা হতো। পরবর্তীতের উক্ত জাল রুপি খালাস করে গোডাউনে মজুদ করা, বিভিন্ন মাধ্যমে তা ডিলারদের মধ্যে ডিসট্রিবিউশন করা এবং বিক্রয়লব্ধ জাল রুপি বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে সংগ্রহ করে পরবর্তীতে হুন্ডিতে করে পাকিস্তানের পাচার করতো।
গ্রেফতারকৃত আমান উল্লাহ ভ‚ঁইয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর-এর সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সরকারি গাড়ি চালক। গ্রেফতারকৃত কাজলরেখা সরকারি গাড়ি চালক আমান উল্লাহ ভ‚ঁইয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে। ডিএমপি’র গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব মশিউর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম এর সার্বিক তত্ত¡াবধানে এডিসি মাহবুবুল হক সজীব ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।