
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এক প্রবাসীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তার বাড়ী ঘর ভাঙচুর করে উল্টা মামলা দায়ের করে প্রতিপক্ষ হাসিনা খাতুন। প্রবাসীর স্ত্রী ও তার পক্ষীয় লোকজনের মারপিটে হাসিনা খাতুন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বলে দাবী করা হয়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত প্রতিবেদনে এই দাবী অসত্য বলে সাব্যস্ত হয়েছে। তথাপি প্রতিপক্ষের ভয়-ভীতি, হুমকি-ধামকি এবং হামলা, মামলার শিকার হয়ে সন্ত্রাসীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে প্রবাসীর স্ত্রী ফাতেমা খাতুন।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের দাবী, শ্যামনগর উপজেলা সদরের জাওয়াখালী গ্রামের সৌদি প্রবাসী আজাদ হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন ও তার প্রতিবেশি মৃত জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী হাসিনা খাতুনের মধ্যকার বিরোধের মূল কেন্দ্রবিন্দু জায়গা জমি। এই জায়গা জমির বিরোধ কাগজ পত্রের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে কিন্তু তার আগেই বাঁকা পথে নিত্য নতুন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সর্বশান্ত করা হচ্ছে একটি পরিবারকে।
ভূক্তভোগী ফাতেমা খাতুন সহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, জায়গা জমি নিয়ে বিরোধের সূত্র ধরে গত ৫ ফেব্রুয়ারী’২১ তারিখে মারপিট ও বাড়ীঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ফাতেমা মামলা করতে গেলেও তার মামলা রেকর্ড হয়নি থানায়। অথচ ঐ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে ভিন্ন একটি তারিখ দেখিয়ে মামলা দায়ের করেছে হাসিনা খাতুন। মামলার এজহারে হাসিনা খাতুন উল্লেখ করেন যে তিনি আহত হয়ে শ্যামনগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় থানায় এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হয়। অথচ সেখানে তার মারামারির ইতিহাস নিয়ে চিকিৎসা গ্রহনের কোন রেকর্ড নাই মর্মে শ্যামনগর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত হাসিনার জখমি সনদে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রবাসীর স্ত্রী ফাতেমার লিখিত অভিযোগে (এজহারের কপিতে, যা মামলা হিসেব গন্য হয়নি) উল্লেখ করা হয় যে হাসিনা খাতুন সহ শ্যামনগর থানাধীন ৭ জন ও অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১৫ জন, গত ৫ ফেব্রুয়ারী রাত আনুমানিক ১২.১০ ঘটিকার সময় দা, কুড়াল, করাত দিয়ে তার বাড়ীর গাছপালা কাটতে থাকে। শব্দ শুনে ঘুম থেকে জেগে টর্চ লাইটের আলোয় তাদের চিনতে পেরে বাঁধা দিতে গেলে তারা তাকে মারপিট করে জখম করে ও তার শ্লীলতাহানী ঘটায়। এ সময় তারা তাকে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে তার বসত ঘরের পেছনের ঘেরা বেড়া, নেট, পাটা, বাঁশ ও ৮০টি পাকা সীমানা পিলার ভাঙচুর করে, বিভিন্ন ধরনের গাছপালা কেটে ক্ষতি করে এবং তার ব্যবহৃত স্বর্নালঙ্কার ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
ফাতেমা খাতুন জানান, এজহারের এই কপি নিয়ে তিনি শ্যামনগর থানায় গেলেও কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তারা তার অভিযোগ আমলে নেয়নি।
অপরদিকে হাসিনা খাতুন লিখিত অভিযোগে (এজহারের কপিতে, যা মামলা হিসেব গন্য হয়েছে) উল্লেখ করা হয় যে, ফাতেমা খাতুন ও দেবালয় গ্রামের মিজান খাঁ (৫০) সহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন গত ২৯ জানুয়ারী’২১ তারিখ সকাল আনুমানিক ১০.১০ ঘটিকার সময় দা, লোহার রড, লাঠি-সোঠা নিয়ে বেআইনিভাতে তার বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। তিনি প্রতিবাদ করলে তারা তাকে মারপিট করে মারাত্মক হাড়কাটা রক্তাক্ত জখম করে ও তার শ্লীলতাহানী ঘটায়। এ সময় তারা তার ব্যবহৃত স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ঘটনার স্বাক্ষী সহ লোকজন তাকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় এবং এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে জানিয়ে থানায় এজাহার দায়ের করতে তার বিলম্ব হয়।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, শ্যামনগর থানা পুলিশ হাসিনা খাতুনের উক্ত এজাহার আমলে নেয়ায় ফাতেমা গংদের বিরুদ্ধে গত ৫ ফেব্রুয়ারী-২০২১ তারিখে ৮নং একটি মামলা রুজু হয়।
উক্ত মামলার ঘটনার চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অফিসার ইনচার্জ, শ্যমিনগর থানা বরাবার প্রেরিত শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত স্মারক নং উস্বাক/শ্যাম/২১/৩৯০ তারিখ ১০/০২/২১ জখমী সনদ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “আপনার দপ্তরের চাহিদা মোতাবেক জখমী মোছাঃ হাসিনা খাতুন, স্বামী মৃতঃ জাহাঙ্গীর আলম, সাং জাওয়াখালী, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা গত ২৯/০১/২১ তারিখ
অত্র হাসপাতালে মারামারির ইতিহাস নিয়ে চিকিৎসা গ্রহনের কোন রেকর্ড নাই, বিধায় উক্ত জখমীর জখমী সনদ ইস্যু করা সম্ভব নয়।”
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ২৯ জানুয়ারী’২১ তারিখে এমন কোন ঘটনা ঘটেছে কি না আামাদের জানা নেই। তবে ফাতেমার বাড়ীতে ভাঙচুর ও গাছপালা কর্তন সহ নানাবিধ ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে যা সরেজমিনে গেলে দেখা যাবে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় কয়েক আওয়ামী লীগ নেতা সহ আরো অনেকেই দাবী করেন যে, ফাতেমার বাড়ীতে ভাংচুর ও মারপিটের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে এটি উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর মতোই। আর এই ওলট পালটের পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা। ঐ যুবলীগ নেতার চাচাতো ফুফু হন হাসিনা খাতুন। তারা বলেন, বিভিন্ন মামলার আসামী ঐ যুবলীগ নেতার ছত্রছায়ায় নির্বিগ্নে প্রবাসীর স্ত্রীর জায়গা জমি দখল, বাড়ীঘর ভাংচুর, গাছপালা কর্তন, মামলা দায়ের করে চলেছেন তার প্রতিপক্ষ। তাই এ ব্যাপারে আশু ব্যবস্থা গ্রহনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবন যাপনের নিশ্চয়তা পেতে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন প্রবাসীর স্ত্রী ফাতেমা।