
আব্রাহাম লিংকন, শ্যামনগর থেকে: উন্নয়নের ছোঁয়ায় মুখরিত চারিদিকে। ডিজিটালের ছোঁয়ায় সব কিছু পরিবর্তন হলেও এখনো ভাগ্য পরিবর্তন হলো না শ্যামনগরের রাজবংশী জনগোষ্ঠী আদি জেলেদের। ১৯ শতকের শেষ এবং ২০ শতকের শুরুর দিকে ভারতের আসাম থেকে রাজবংশী জনগোষ্ঠীর কিছু সংখ্যাক মানুষেরা শ্যামনগরের কয়েকটি জায়গায় জঙ্গল কেটে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে। রাজবংশীরা মূলত কৃষিজীবী, তবে মাছধরা এবং মাছ বিক্রয় এদের অন্যতম পেশা। এই জনগোষ্ঠীতে ৪ পদবির মানুষ হয়ে থাকে। মোড়ল, সানা, বারুই ও সরদার। এই জনগোষ্ঠীর শিক্ষিতর হার খুবই কম। ছেলেমেয়েদের প্রাইমারি শেষ করতে না করতেই ধরতে হয় সংসারের হাল। সহযোগিতা করতে হয় বাবা-মায়ের। চিকিৎসার জন্য এখনো তারা গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে গিয়ে থাকে। অন্য জনগোষ্ঠীর সাংগঠনিক প্রধান থাকলেও রাজবংশী জনগোষ্ঠীর কোন সাংগঠনিক প্রধান না থাকায় এখনো তারা পিছিয়ে রয়েছে সমাজ থেকে। উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগর সংলগ্ন মৃত সুধীর সরদারের ছেলে সন্যাসী সরদার বলেন, বাবা, কাকাদের রেখে যাওয়া নদীর পাড়ের ভিটাতে বসবাস করছি। নদীতে মাছ ধরে জীবন চলছে। মৃত নিমাই সানার ছেলেদেবেন সানা বলেন, ছেলেমেয়েদের ঠিক মত পড়াশোনা করাতে পারিনা। নিজেরাই তাই খেতে পারি না! সাথে থেকে সহযোগিতা করলেও তাও উপকার হয় অনেক। বসন্ত বারুউর ছেলে রবিন্দ্র বারুউ বলেন, একুই ঘরে ছেলে বৌমা আর আমরা থাকি। কোন জায়গা নেই সেখানে একটা ঘর বেঁধে থাকবো। মেম্বারকে বলেছিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটা ঘর দিতে! ৩ বছর টালিয়ে আসছে। উপজেলায় প্রায় দেড়শতাধীক রাজবংশী পরিবার রয়েছে। এখন তারা দারুণ মানবতার জীবন যাপন করছে। আর্থিক অনাটন যেন পিছু ছাড়ে না তাদের। নদীর পাড়ে বসবাস করে তাদের আয়ের একমাত্র উৎস নদীতে মাছ ধরা। শ্যামনগর উপজেলায় ২৩ হাজার ৪৫৩ জন নিবন্ধিত জেলের মধ্যে কয়েকটি রাজবংশী পরিবার জেলে কার্ডের আওতায় থাকলেও বাকিরা অবহেলিত। সাংগঠনিক নেতার অভাবে বঞ্চিত সরকারি বিভিন্ন সহযোগিতা থেকেও। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার বলেন, আদি জেলে হিসাবে আলাদা কোন তালিকা আমাদের করা নেই। তবে তথ্য দিলে আমরা বিষয়টি দেখবো।