
অনলাইন ডেস্ক :
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৪৩০ জনে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে চার লাখ ৭৫ হাজার ২৭১ জন। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে এক লাখ ১০ হাজার ৪৯৮ জন। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বার্তা সংস্থা বিএনও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে, করোনার কারণে তৈরি হওয়া বৈশ্বিক মহামারির পরবর্তী কেন্দ্র হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বেড়ে যাওয়ার কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ২৬৫ জনের। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে একদিনেই ১৪ হাজার ২৪ জন আক্রান্ত হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার ৩৪৭ জনে।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের চিন্তা বাড়াচ্ছে নিউইয়র্ক শহর। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা অন্য সব অঙ্গরাজ্যের তুলনায় অন্তত পাঁচগুণ বেশি। এর মধ্যে করোনা মোকাবিলার প্রণোদনা বাজেট পাস করানো নিয়েও রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যকার বিরোধ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য যথেষ্ট স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম তাদের হাতে নেই।
এদিকে ইউরোপে করোনাভাইরাসে ক্রমাগত বাড়ছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। এর মধ্যে ইতালি ও স্পেনের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। ইতালিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৮৩ জনের মৃত্যু হওয়ায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৫০৩ জনে। এ ছাড়া সেখানে আক্রান্ত হয়েছে মোট ৭৪ হাজার ৩৮৬ জন।
ইতালির নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার প্রধানের দাবি, আক্রান্তের সংখ্যা যতটা জানা যাচ্ছে, আসলটা হয়তো তার চেয়েও ১০ গুণ বেশি।
অন্যদিকে, স্পেনে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৫৬ জনের মৃত্যু হওয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৬৪৭ জনে। এ ছাড়া সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার।
স্পেনে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক মানুষের মৃত্যু রুটিনে পরিণত হয়েছে। বুধবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্পেনে সার্বিকভাবে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ২৩ শতাংশ। করোনা মোকাবিলায় ন্যাটোর সহায়তা চেয়েছে দেশটি।
স্পেনের মাদ্রিদের সেভেরো ওচোয়া হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে ভয়াবহ আকারে। চিকিৎসকরা বলছেন, রোগীর চাপ সামাল দিতে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন।
সেভেরো ওচোয়া হাসপাতালের চিকিৎসক লুইস এজকুয়ারদো বলেছেন, ‘আমি রাজনীতির বাইরে থাকতে চাই। আমি শুধু চিকিৎসার বিষয়টিই বলব। এখানে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তিন লাখ টেস্ট কিট থাকার পরও হচ্ছে না। চিকিৎসার জন্য প্রতিদিন যা যা দরকার পড়ছে, তাও নেই।’
এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছেলে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লস। তবে ৭১ বছর বয়সী চার্লসের স্ত্রী ডাচেস অব কর্নওয়েল ক্যামেলিয়া সুস্থ আছেন। তাঁরা বর্তমানে স্কটল্যান্ডের বাড়িতে স্বেচ্ছায় সঙ্গ-নিরোধে (সেলফ আইসোলেশন) রয়েছেন। গত ১২ মার্চ রানি এলিজাবেথের সঙ্গে তাঁর সর্বশেষ দেখা হয়।
যুক্তরাজ্যে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৪৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে সাড়ে নয় হাজারেরও বেশি মানুষ।
ইরান, ফ্রান্স ও জার্মানিতেও থেমে নেই কোভিড ১৯-এর প্রকোপ। অস্ট্রেলিয়া সরকার নাগরিকদের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অন্যদিকে, ২৬ মার্চ থেকে সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান।
এদিকে, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে গত মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে ২১ দিনের জন্য গোটা ভারতে লকডাউন জারি করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এতে ১৩০ মিলিয়ন মানুষ ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কার্যত অবরুদ্ধ। ভারতে ২১ দিনের লকডাউনের প্রথম দিনে সাধারণ মানুষদের অসচেতনতার জেরে রাস্তাঘাটে পুলিশকে লাঠিপেটা ও কান ধরে উঠবস করাতে দেখা গেছে। ভারতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০৬ জনে।
এরই মধ্যে ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনের হুবেই প্রদেশ মহামারি মুক্ত হওয়ায় সেখানে আজ থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন। তবে দেশটির নাগরিকরা করোনায় আক্রান্ত না হলেও এবার বাইরের দেশ থেকে সেখানে আমদানি হচ্ছে ভাইরাসটি। চীনজুড়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১১৪ জন। আক্রান্তের সংখ্যা এর আগে অনেক নামিয়ে এনেছিল চীন। কিন্তু আবারও ধীরে ধীরে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে চীন সরকারকে।
সূত্র-এনটিভি