সাতনদী ডেস্ক: দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে নেতিবাচক সমালোচনার পরও বহাল তবিয়্যতে থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সাতক্ষীরা তালা উপজেলার রাজাপুর ইউনাইটেড বিল্ব রানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক সুব্রত কুমার দাশ। সম্প্রতি এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশে তালা উপজেলার রাজাপুর ইউনাইটেড বিল্ব রানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করে। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ঐ স্কুলের সহকারী শিক্ষক সুব্রত কুমার দাশ এসএসসি পরিক্ষার ফল প্রকাশের কপি দিয়ে “এত পাস কিভাবে সম্ভব?” লিখে নিজের ফেসবুক আইডিতে নেতিবাচক পোস্ট করেন এবং সাক্ষাতকারে তিনি শিক্ষামন্ত্রিকে সমালোচনা করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হলে ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে অত্র স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা মানববন্ধন করেন। উক্ত বিষয় ভোরের কাগজ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়।এবং গত ১০ই আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক ২) তরিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিক এক পত্রে এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর ১৮. ১(খ ও গ) উপধারা অনুযায়ী কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না এই মর্মে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে জবাব প্রেরণের নির্দেশ দেওয়া হয়। এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিমাই কৃষ্ণ মন্ডলসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়। এদিকে সমালোচিত শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়মিত স্কুল না করাসহ নানা অপকর্মের তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি প্রধান শিক্ষক নিমাই কৃষ্ণ মন্ডলের যোগসাজসে একই সাথে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি, বেতন উত্তোলন, নারী কেলেঙ্কারিসহ তার অন্যায় দাবি পুরণ না করায় প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে ছাগল রেখে পাশে প্রধান শিক্ষকের ছবিসহ ফেইসবুকে পোষ্ট দিয়ে বিদ্যালয়ের ভাবমুর্তি নষ্টও করেছেন এই শিক্ষক। তথ্যানুসন্ধানে সহকারি শিক্ষক সুব্রত কুমার দাশ এ বিদ্যালয়ে জীব বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকাকালিন ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল আশাশুনি উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মুনীর আহমেদ স্বাক্ষরিত (স্মারক নং জেপ্রাশিঅ/সাত/সা-প্র/২০১৬/১৫৪৯) আশাশুনি প্রতাপনগর পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হিসেবে নিয়ম বহির্ভুতভাবে যোগদান করেন। হাজিরা খাতা অনুযায়ি ওই বছরের ২১ জুলাই পর্যন্ত তিনি ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। একই সালের ২৩ জুলাই থেকে ২২ আগষ্ট পর্যন্ত তিনি এক মাসের চিকিৎসা ছুটি নেন। এ ছাড়া ২৩ আগষ্ট থেকে পরবর্তী বছরের ১১ এপ্রিল তিনি অনুমতিবিহিীন ছুটি ভোগ করেন। ছুটির সময়ে তিনি রাজাপুর ইউনাইটেড বিল্ব রানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছেন এবং বেতন তুলেছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের ছয় থেকে সাত মাস পর তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে ইস্তফা দেন। একইসাথে দুটি বিদ্যালয়ে কাজ করার অভিযোগে রাজাপুর ইউনাইটেড বিল্ব রাণী মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি নিমাই কুমার সানা তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শাণোর নোটিশ দেন।তার জবাবে সুব্রত কুমার দাশ লিখিতভাবে নি:শর্ত ক্ষমা চান। পরে কর্তৃপক্ষ তাকে মাফ করে দেন। স্কুলের শিক্ষার্থী রুদ্র মন্ডল, অরন্য মন্ডল,রবিন্দ্র নাথ ঢালি রবিসহ অনেকে জানান, আমাদের স্যাররা ক্লাস রুমে পাঠদান বাদে মোবাইলে ফেসবুক চালায়। এনিয়ে প্রতিবাদ করায় আমাদের সহকারি প্রধান শিক্ষক সজল সরকার টিসি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। সুব্রত স্যারের স্কুলের এক ম্যাডামের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, স্কুল চলাকালীন সময় আমরা একদিন তাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলি। এরপর থেকে প্রতিনিয়ত ওই শিক্ষক বিভিন্নভাবে আমাদেরকে হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা কিভাবে এসএসসি পাস করি সেটা আমি দেখে নেবো। স্যার আমাদের সাথে খুবই খারাপ ব্যাবহার করে। চোখ রাঙায়, তুই তুকারি করে কথা বলে, বলে জানায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে স্কুলের সভাপতি নিমাই সানা বলেন, আইনি জটিলতার কারনে আমি দায়িত্ব পালন করতে পারছি না।স্কুলের বাচ্চারা যে অভিযোগ করেছে সেটা সত্য। নারী কেলেঙ্কারি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন ঘটনাটি সত্য।
তালা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন অধিদপ্তর থেকে চিঠি এসেছে।আমি স্কুলে পাঠিয়ে দিয়েছি। এ ব্যাপারে সহকারি শিক্ষক সুব্রত কুমার দাশ জানান, এসএসসি পরীক্ষার ফল নিয়ে তিনি তার ফেইসবুকে যে স্টাটাস দিয়েছিলাম তা কয়েক ঘণ্টা পর রিমুভ করে দিয়েছি। একইসাথে দুটি বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় সই থাকলেও প্রতাপনগর পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদালয়ে কয়েকদিন গিয়েছিলেন এবং কয়েক মাস পরে ওই বিদ্যালয়ে ইস্তফা দিয়েছিলেন এই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের অনুরোধে। তবে তাকে নিয়ে চক্রান্ত চলছে দাবি করে তিনি বলেন, তিনি একটি স্থানীয় পত্রিকায় লেখালেখি করি। তবে চেয়ারে ছাগল রেখে প্রধান শিক্ষকের ছবিসহ ফেইসবুকে স্টাটাস ও নারী কেলেঙ্কারি নিয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ মামুন ভারপ্রাপ্ত) বলেন, সে যে কাজটি করেছে নি:সন্দেহে সরকার বিরোধী। এটা তার করা উচিত হয়নি। জবাব বা সাজা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন শিক্ষক নিজে অধিদপ্তরে তার জবাব পাঠিয়ে দিবে। আর আমরা কোন কপি পাইনি। দপ্তর যেটা ভালো মনে করবে বা যে আইনের আওতায় আসবে তিনি সেই সাজা পাবেন। উল্লেখ্য সম্প্রতি প্রকাশিত এসএসসি পরিক্ষার সাফল্যে ইষ্নান্নিত হয়ে গত ২৮ জুলাই নিজ ফেইসবুক আইডিতে আপত্তিকর স্টাটাস দেওয়ার অভিযোগে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার রাজাপুর ইউনাইটেড বিল্ব রাণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুব্রত কুমার দাশ তার নিজের ব্যবহৃত ফেসবুক আইডিতে ফল প্রকাশের কফি দিয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষা মন্ত্রিকে নিয়ে নেতিবাচক একটি পোস্ট করেন। ওই পোস্টে তিনি লেখেন “এত পাস কিভাবে সম্ভব?” মুহূর্তের মধ্যে ফেসবুকে পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। যেটি সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড বলে দাবি করেন অভিভাবক ও সচেতন মহল। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলে দাবি তাদের।
বহাল তবিয়্যতে সেই শিক্ষক
পূর্ববর্তী পোস্ট