- দরিদ্র পরিবারের সর্বস্ব লুটে কোটিপতি বনে
- গড়ে তুলেছেন আলিশান বহুতল ভবন
- মানবেতর জীবনযাপন করছে পরিবারগুলো
- সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে বিদ্যালয়ের
সাতনদী ডেস্ক: বিদেশে পাঠানোর কথা বলে অর্ধশতাধিক পরিবারের সর্বস্ব লুটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী মুজিবুর রহমান হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জামিলুজ্জামানের বিরুদ্ধে। মানব পাচারকারী খ্যাত শিক্ষক জামিলুজ্জামানের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হয়ে নি:স্ব ও সবশান্ত হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে পরিবারগুলো। গ্রামের সহজ-সরল এসব মানুষ ভাগ্যের পরিবর্তন করতে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য ভিটেবাড়ি বিক্রি করে, ব্যাংক ও সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে জনপ্রতি চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা ও পাসপোর্ট তুলে দিয়েছে মানবপাচারী চক্রের সাতক্ষীরা অঞ্চলের হোতা বল্লী মুজিবুর রহমান হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জামিলুজ্জামানের কাছে।
প্রতিদিন তার কর্মস্থল বল্লী মুজিবুর রহমান হাইস্কুল ও আখড়াখোলা বাজার সংলগ্ন তার আলিশান বাড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ টাকা ফেরত নিতে ভিড় করে। মানবপাচারী দালাল হিসেবে পরিচিত এই শিক্ষকের প্রতারণামূলক কাজের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। সাতক্ষীরার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও অন্যান্য সরকারি দপ্তরে এবং জনপ্রতিনিধিদর কাছে ভুক্তভোগীদের দায়েরকৃত অভিযোগে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক মানুষ লোভনীয় বেতনে কাজের জন্য সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য আলিমুজ্জামানের কাছে ২০২১ সালে জনপ্রতি নগদ চার লাখ টাকা জমা দেন। এর মধ্যে সদর উপজেলার নারায়নজোল (সাতানী) গ্রামের কৃষক সাইফুল সরদারের ছেলে মোস্তফা সরদার, মৃত রউফ মোল্লার ছেলে জাকির হোসেন, আকবর আলী সরদারের ছেলে সাইফুল ইসলাম, আহাদ আলীর ছেলে সজীব হোসেন, বাউকোলা গ্রামের আহাদ গানের ছেলে সবুর হোসেন, ইয়ামিন সরদারের ছেলে হযরত আলী আলিমুজ্জামানের কাছে ২০২১ সালে জনপ্রতি নগদ চার লাখ টাকা জমা দেন। এ সময় করোনার টাকা গ্রহণের সনদ বাবদ প্রত্যেকের নিকট থেকে আরও ৩০ করে টাকা নেন জামিলুজ্জামান। এক পর্যায়ে ২০২২ সালের মার্চ মাসে চট্রগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে তাদেরকে তিন মাসের টুরিস্ট ভিসায় সৌদি আরবে পাঠায়। সেখানে মেয়ে তারা জানতে পারে তাদেরকে টুরিস্ট ভিসায় পাঠানো হয়েছে। যে কারণে তাদের আকামা (বৈধ ওয়াক পারমিট) পাওয়া সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে তারা বাড়ি (বাংলাদেশ) থেকে টাকা নিয়ে খাবারের সংস্থান করে। এক পর্যায়ে তারা অবৈধ হওয়ায় সৌদি পুলিশ তাদেরকে আটক করে জেলখানায় বন্দী করে রাখে। পরে দূতাবাসের মাধ্যমে তারা দেশে ফিরে আসে। এদিকে, দেশে এসে এই পাঁচজনসহ অন্যরা জামিলুজ্জামানের নিকট টাকা ফেরত চাইলে এবার জামিলুজ্জামান তাদেরকে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। এজন্য পাসপোর্ট ও ভিসার জন্য আবারও জনপ্রতি দেড় লাখ টাকা গ্রহণ করে। শিক্ষক জামিলুজ্জামান অসহায় দরিদ্র মানুষের টাকা হাতিয়ে নিয়ে আখড়াখোলা বাজার সংলগ্ন এলাকায় আলিশান বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় জমি কিনে বাড়ি নিমাণ করেছেন। সর্বশেষ পলাশপোল এলাকায় সম্প্রতি নতুন একটি প্লট কিনছেন। যা একজন স্কুল শিক্ষকের বেতনের টাকায় সম্ভব না। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য পরপর তিনদিন শিক্ষক জামিলুজ্জামানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ব্যস্ত আছি, পরে ফোন দিচ্ছি’। এক পর্যায়ে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পাসপোর্ট ফেরত দিয়েছি, টাকার বিষয়ে মোবাইলে কথা বলতে পারো না’। তবে, বিদেশে লোক পাঠানোর দালালির বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।