আহাদুর রহমান, প্রতাপনগর থেকে ফিরে:
সাতক্ষীরায় ত্রান বিতরণ নিয়ে গাফিলতি ও অমানবিকতার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের।
আমপান আঘাত হানার পর উপক‚লীয় জেলা সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার চারটি ইউনিয়ন আশাশুনি, শ্রীউলা, প্রতাপনগর ও খাজরা প্লাবিত হয় খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে। এর মধ্যে প্রতাপনগর ইউনিয়নটি পানির ওপর ভাসছে প্রায়। একটি বেসরকারি টেলিভিশনে খবর প্রচার হয় যে, প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামে আমপানের আঘাতে ৬ দিন পরও সরকারী ত্রান পৌছেনি। ঘটনাটি স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম রুহুল হক এমপির নজরে আসলে তিনি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেন এবং ২৬ মের মধ্যে চাকলাতে আমপান কবলিতদের মধ্যে ত্রান পৌছানোর জন্য নির্দেশনা দেন।
জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ২৬ মে বিকাল সাড়ে ৩টায় আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্থানীয় চেয়ারম্যান জাকির হোসেনকে নিয়ে চাকলাতে যান। ঘটনার সত্যতাও পান তিনি। আমপানের পর সেখানে ত্রান পৌছায়নি। এরপর স্থানীয় একটি এনজিও দেশীচারু’র সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলামের নিকট থেকে ১০টি ত্রানের প্যাকেট হাওলাত নেন ইউএনও এবং চেয়ারম্যান। পরে তা স্থানীয় চাকলা গ্রামের মুনতাজ, রফিকুল মিস্ত্রী, রেফাজউদ্দীন খান, আব্দুল্যাহ ঢালী, আবু সাইদ বিশ্বাস, মহিবুল্লাহ বিশ্বাস, মাওলানা তোহিদুর, নূর মোহাম্মদ, মনিরুজ্জামান ও আমিরুল বিশ্বাসের মধ্যে বিতরনের ফটোসেশন করেন। ইউএনও এর সাথে যাওয়া একজন সংবাদকর্মী ছবি তোলেন। এরপর ওই প্যাকেটগুলো ওই ব্যাক্তিদের থেকে ফেরৎ নিয়ে হাওলাত নেওয়া স্থানীয় সেই দেশীচারু এনজিওকে ফেরত দিয়ে দেয়া হয়। ফটোসেশন করেই ফিরে আসেন ইউএনও এবং চেয়ারম্যান।
এদিকে ত্রান দিয়ে ফেরৎ নেওয়ার মত অমানবিক ঘটনা জানাজানি হলে ২৭মে বিকাল সাড়ে ৪টায় ইউএনও আলিফ রোজা সামান্য কিছু ত্রানের প্যাকেট নিয়ে চাকলাতে যান তিনি মাওলানা তৌহিদুর, নূর মোহাম্মদ বিশ্বাস, মনিরুজ্জামান বিশ্বাস ও আবু সাঈদ বিশ্বাসের মধ্যে ১০ কেজি করে চালের প্যাকেট দেন। কিন্ত ত্রান দিয়ে ফেরৎ নেওয়া আমিরুল বিশ্বাসসহ অপর ৬জনকে ২৭ মে তারিখেও ত্রান দেওয়া হয়নি।
বিষয়টি চাকলা গ্রামের আমিরুল বিশ্বাসের সাথে কথা বল্লে তিনি প্রতিবেদনটির আদ্যোপান্ত স্বীকার করে বলেন, ২৬ মে আমাদের ১০ জনকে ত্রান দিয়ে ছবি তোলার পর তা ফেরৎ নেওয়া হয়। ২৭ মে ইউএনও এসে ১০ জনের মধ্যে ৪ জনকে ১০ কেজি করে চাল দেন। তবে আমিসহ ৬ জনকে এখনও কিছু দেওয়া হয়নি। ২৮ মে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানার জন্য আমিরুল বিশ্বাসের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আপনাকে সত্য কথা বলার জন্য আমি এখন হুমকির মুখে আছি। স্থানীয় মাতব্বররা বলে বেড়াচ্ছেন আমাকে আর কোন ত্রান দেওয়া হবে না।
এদিকে ২৬ মে সকাল ১১.৪৩ মিনিটে ডা: আ ফ ম রুহুল হক এমপি তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসটি হূবহূ তুলে ধরা হলো।
“প্রিয় সাতক্ষীরাবাসী, ঘূর্ণিঝড় আমপানে ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত আমার নির্বাচনী এলাকা আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগরের কিছু প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে এখনও সরকারি ত্রান সহায়তা পৌছেনি মর্মে জানতে পেরে আমি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে সরাসরি ফোনে কথা বলেছি এবং তাদেরকে জরুরী ভিত্তিতে আজই (২৬মে) সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দকৃত সরকারি ত্রান সহায়তা পৌছে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন আজই (২৬মে) সেখানে সরকারি ত্রান সহায়তা পৌছে দেয়া হবে। আমি আমার জনগনকে আশ্বস্ত করছি যে, যে-কোন বিষয়ে আমাকে অবহিত করলে আমি আমার সাধ্যমত চেষ্ট করবো তা সমাধান করার। মহান আল্লাহ আমাদেরকে এই ভয়াবহ দূর্যোগ মোকাবিলা করার ধৈয্য ও সাহস দিন। আমিন।
জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রাশাসনের আশ্বাসের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য এবং সংসদ সদস্য আ ফ ম রুহুল হক এমপি উপরোক্ত স্ট্যাটাসটি দেন।