
জাতীয় ডেস্ক:
দেশের অন্যতম গণমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলো’য় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনকে ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতা’ উল্লেখ করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
শুক্রবার (৩১ মার্চ) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে দেশের একটি দৈনিক পত্রিকায় মহান স্বাধীনতা দিবসে সংবাদ প্রকাশের নামে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা পরিচালিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এ ধরনের অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছে।
প্রতিবেদনটিতে একটি শিশুর ছবির নিচে ক্যাপশনের পরিবর্তে একজন দিনমজুরের যে বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে, তার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতাকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ক্যাপশনে একজন দিনমজুরের বক্তব্য হিসেবে উক্ত মন্তব্য প্রকাশ করা হলেও ছবিতে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে দেখা যাচ্ছে না। অন্য একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনসূত্রে জানা গেছে, ওই শিশুকে তার দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে উৎকোচের বিনিময়ে প্রলুব্ধ করে ছবিটি তোলা হয়েছে। সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে একাধিক পক্ষ থাকলে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের বক্তব্য না নেওয়া, অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া এবং অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির ছবি তোলা কিংবা তার বক্তব্য ধারণ করা সংবাদপত্রের নীতিমালা পরিপন্থী। একজনের ছবির সঙ্গে আরেকজনের উদ্ধৃতি প্রকাশ, ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর ছবি ও বক্তব্য প্রকাশ পাঠকের সাথে প্রতারণার শামিল। অথচ আলোচিত সংবাদটি প্রকাশের ক্ষেত্রে এ সকল রীতি-নীতি ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
তবে এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করায় নির্দিষ্ট কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ভুল তথ্য প্রচার করছে জানিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে বাসন্তী নামের একজনকে জাল পরিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। বাসন্তীকাণ্ড যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সাজানো হয়েছিল তা পরবর্তীকালে প্রমাণিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, উক্ত সংবাদপত্র ইতোপূর্বে ২০০৭ সালে সামরিক স্বৈরাচারের পক্ষ নিয়ে দেশকে রাজনীতিশূন্য করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ১৯৯৬-২০০১ সালে এক মেয়াদ এবং ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশকে তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহের কাছে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছে। করোনা পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলোও যখন নাস্তানাবুদ অবস্থার সম্মুখীন, পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ যখন দেউলিয়া অবস্থায় পতিত, এমন পরিস্থিতিতেও শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের সংকট মোকাবিলা করে যে মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সংবাদ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে, সেই মুহূর্তে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে সরকারের বিরোধিতার নামে রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার অপচেষ্টা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
এ ধরনের সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি এ ধরনের অপচেষ্টায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলো অনলাইনের একটি প্রতিবেদন ফেসবুকে প্রকাশের সময় জাকির হোসেন নামে এক দিনমজুরের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ‘কার্ড’ তৈরি করা হয়। বলা হয়, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কি করুম? বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’
সেখানে উদ্ধৃতিদাতা হিসেবে দিনমজুর জাকির হোসেনের নাম থাকলেও, ছবি দেয়া হয় একটি শিশুর। ১৭ মিনিটের মাথায় নিজেদের অবস্থান থেকে পিছু হটে প্রথম আলো। খবরটি সংশোধন করে তারা। কিন্তু ততক্ষণে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
স্বাধীনতা দিবসকে কটাক্ষ করে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত উদ্দেশ্যমূলক নেতিবাচক খবরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ফেসবুকে প্রথম আলোর সমালোচনা করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ লেখেন, স্বাধীনতা দিবসকে কটাক্ষ করার মতো প্রথম আলোর এই ‘মিস্টেক’ এর দায় কে নেবেন? কোনও পত্রিকাই ধর্মগ্রন্থ নয়, সত্য। ভুলভ্রান্তি থাকে। কিন্তু ‘স্বাধীনতা দিবস’কে উপহাস? তাও আবার অসত্য তথ্য ও ছবিযুক্ত করে?
ছেলেটার নাম, সবুজ, জাকির নয়। ক্লাস ওয়ানের ছাত্র, দিনমজুর নন। সৌখিন ফুল বিক্রোতা। এ্যটাচ বাথরুমের বাসাও আছে তাদের। ঘরে দামি খাট। মাত্র ১০টাকা গুঁজে দিয়ে তার ছবি তুলে বানানো হল স্টোরি। মুহূর্তে ভাইরাল! খুব ব্যাথা পেয়েছি, প্রথম আলোর মতো ওয়েল এডিটেড কাগজের এমন জঘন্য ক্যাপশন স্টোরিতে।
আতাউর রহমান আজাদ নামে একজন মন্তব্য করেন, বাজারে খাদ্যদ্রব্যের দামের সাথে স্বাধীনতা দিবসের কি সম্পর্ক !!!
শিমুল খান নামে আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা সব সময়ই একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে।
এরপরই একটি বেসরকারি টেলিভিশন বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদনটিতে যা পরিবেশন করা হয়েছে, সেটি ভুল। শিশু জাকির হোসেন আসলে দিনমজুর নয়, একটি স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী, আর তার নাম সবুজ। টাকার বিনিময়ে তার ছবি তোলা হয়েছে।
বহুল আলোচিত ওই ছবি প্রকাশের দুদিন পর বুধবার (২৯ মার্চ) রাতে শামসের বিরুদ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মামলা করেন যুবলীগের এক নেতা। রমনা থানায় একই অভিযোগে আরেকটি মামলা হয়। এ মামলাতেও প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামস ও পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমানসহ তিনজনকে আসামি করা হয়।