- নির্দোষ পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া দুঃখজনক। শুধুমাত্র দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে- বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মনোয়ার হোসেন;
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অকেজো লিফট থেকে মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরা শহর। অকেজো লিফটে পড়ে মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুর ঘটনা কেন্দ্র করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্বাবধায়ক সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, বিগত ৯ অক্টোবর রবিবার বেলা ১২টার দিকে মেডিকেল কলেজের একটি অকেজো লিফট থেকে গন্ধ ছড়াতে থাকে। দুর্গন্ধ পেয়ে পুলিশে খবর দেয় হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। পরে অকেজো লিফট থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আলী মন্ডল(৮৭) এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার দুইদিন পর মঙ্গলবার সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফটের নিচ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়েদ আলী মন্ডলের মরদেহ উদ্ধারের প্রকৃত ঘটনা তদন্ত ও জড়িতদের বিচারের দাবিতে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয়। মানববন্ধন শেষে নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে আব্দুল্লাহ বাদি হয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। এ দূর্ঘটনায় মামলার আসামী করা হয় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্বাবধায়ক সহ আরও ৪জনকে। ৩০৪(ক)/ ৩৪ ধারায় মামলার বলা হয়েছে পরষ্পর যোগসাজস ও দায়িত্বে অবহেলা করে মৃত্যু ঘটানো।
বর্তমান সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্বাবধায়ক অত্যন্ত সৎ, নিষ্ঠাবান ও সজ্জন মানুষ। দুর্নীতির আশ্রয় প্রশ্রয় না দেয়ার সুনাম তার বহুদিনের। অন্যদিকে লিফটে ঘটে যাওয়া এ ঘটনা লিফট পরিচালনা সংক্রান্ত দায়িত্বরতদের মামলার আসামি না করে পুরো কলেজের দায়িত্বে থাকা তত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে মামলা করে নিহতে ছেলে। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দূর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেয়া ও অনিয়ম রুখে দেয়ায় একটি চক্র উদ্দেশ্যমূলক ভাবে তত্বাবধায়ককে সরিয়ে দিতে বহুদিন ধরে তৎপর। তবে এ ঘটনায় হালে পানি পায়। তত্বাবধায়ককে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সরিয়ে দিতে, দূর্নীতিবাজ ও ঘুষখোরকে পদায়ন করাতে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এ মামলা করানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদকর্মী জহুরুল কবীর জানান, দীর্ঘদিন ধরে লিফটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। মূল লিফটি ৪তলায় অবস্থান করছিলো। লিফটের ১ অর্থৎ দুই তলায় লিফটের সম্মুখে দায়সারা গোছের সোফা দিয়ে আটকানো ছিলো। এই দুই তলা থেকেই প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা লিফটে প্রবেশ করে পড়ে যায়। কারণ বাকি দরজাগুলো লক ছিলো।
সাতক্ষীরা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মনোয়ার হোসেন সাতনদীকে জানান, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অকেজো লিফটে পড়ে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আলী মন্ডল এর মৃত্যু মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে, মরহুম মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আব্দুল্লাহ কর্তৃক গতকাল সাতক্ষীরা সদর থানায় যে এজাহার দেয়া হয় তা কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। মেডিকলে কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড এর ঘটনা দুঃখজনক। রাষ্ট্রের একজন পদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দেয়া এজাহার তদন্ত ছাড়াই রেকর্ড করার বিষয়ে সাতক্ষীরার চিকিৎসক সমাজ গভীর ভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। খুব শ্রিঘ্রই এ ঘটনার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে বিএমএ’র পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তিনি যোগ করে বলেন, পরিচালক ডাঃ কুদরতই-খোদা একজন আপাদ মস্তক সৎ ব্যক্তি। অনিয়ম, দূর্নীতি তাকে স্পর্শ করতে পারেনি।
তিনি এও বলেন, অকেজো লিফট কেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্থায়ীভাবে বন্ধ করে রাখেনি তার যথাযথ তদন্ত পূর্বক দায়ীদের বিরুদ্ধে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। পাশাপাশি নির্দোষ পরিচালকের বিরুদ্ধে রেকর্ড হওয়া মামলার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক তাকে মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দিতে হবে।
অন্যদিকে এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা এবং সর্বস্তরের মানুষের আয়োজনে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে উক্ত মানববন্ধন পালিত হয়।
সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শফিক আম্মেদের সভাপতিত্বে ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফুরের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন,সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা বি এম আব্দুর রাজ্জাক, বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান বাবু, সিনিয়র সাংবাদিক কল্যাণ ব্যানার্জি প্রমূখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মত প্রতিষ্ঠানে মাসের পর মাস লিফট নষ্ট থাকলেও কর্তৃপক্ষ নিরব থাকার কারন কি? এছাড়া লিফট নষ্ট থাকলে সেটি স্থায়ীভাবে কেন বন্ধ রাখা হয়নি? এই মৃত্যুকান্ডের সাথে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জড়িত উল্লেখ করে বক্তরা বলেন, লিফট তদারকিতে যারা যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। বক্তারা আরো বলেন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাইকেল শেডে বর্তমানে মোটর সাইকেল প্রতি ১০ টাকার পরিবর্তে ২৫ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের এই উর্দ্ধগতির বাজারে একটি সরকারী হাসপাতালে রুগীসহ তার স্বজনদের কাছ থেকে এই টাকা জোর করে আদায় করা হচ্ছে যা খুবই দুঃখ জনক। বক্তারা এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়েদ আলী মন্ডলের মরদেহ উদ্ধারের প্রকৃত ঘটনা তদন্তসহ এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের জোর দাবি জানান।