সাতনদী অনলাইন ডেস্ক: রিক্রুটিং এজেন্সির আড়ালে থাকা প্রতারক চক্রের কারণে আকাশচুম্বী অর্থ গুনেও বিদেশে গিয়ে অবৈধ হয়ে যান বহু বাংলাদেশি। এতে একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে সুনাম, অন্যদিকে যোগ্যতা থাকলেও মিলছে না প্রত্যাশিত কাজ।
রাজধানীর গুলশানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনই অভিযোগ তুললেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন এনআরবি সিআইপি’র নেতারা। তারা বলছেন, বেশিরভাগ সময় জনবল চাইলে ভুয়া প্রশিক্ষণ সনদ দিয়ে লোক পাঠায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। এতে চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনবল না পেয়ে, অনেককেই কাজ দেন না, মালিকপক্ষ। বাধ্য হয়েই অবৈধ অভিবাসীর তকমা গায়ে মাখতে হয় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশিকে। আর এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে অভিবাসীদের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্য। দেড় কোটি প্রবাসীর প্রায় ৭০ ভাগই থাকেন এ অঞ্চলের সৌদি আরব, ওমান, কাতার, আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোতে।
ঢাকা থেকে এসব দেশের ওয়ান ওয়ে বিমান টিকিট কমবেশি ৫০ হাজার টাকার মধ্যেই। ভিসা ফি, মেডিকেল চেক-আপ মিলে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা অভিবাসন ব্যয়। কিন্তু বাস্তব চিত্র দেখে আঁৎকে উঠবেন যে কেউ। ক্ষেত্রবিশেষে জমিজমা কিংবা গহনা বিক্রি করে, মধ্যপ্রাচ্যে যেতে একেকজনকে গুনতে হয় কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। ইউরোপ অ্যামেরিকায় যা দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ। অথচ ভারত, নেপাল কিংবা পাকিস্তানেও এই খরচ চার ভাগের এক ভাগ।
সরকারি হিসেবে, বাংলাদেশ থেকে প্রশিক্ষণসহ সিঙ্গাপুরের অভিবাসন খরচ, দুই লাখ ৬২ হাজার ২৭০ টাকা, সৌদি আরবে একলাখ ৬৫ হাজার টাকা, মালয়েশিয়ায় একলাখ ৬০ হাজার টাকা, লিবিয়ায় একলাখ ৪৫ হাজার ৭৮০ টাকা, বাহরাইনে ৯৭ হাজার ৭৮০ টাকা, সংযুক্ত আরব আমিরাতে একলাখ সাত হাজার ৭৮০ টাকা, কুয়েতে একলাখ ছয় হাজার ৭৮০ টাকা, ওমানে একলাখ ৭৮০ টাকা, ইরাকে একলাখ ২৯ হাজার ৫৪০ টাকা, কাতারে একলাখ ৭৮০ টাকা, জর্ডানে একলাখ দুই হাজার ৭৮০ টাকা, মিশরে একলাখ ২০ হাজার ৭৮০ টাকা, রাশিয়ায় একলাখ ৬৬ হাজার ৬৪০ টাকা, মালদ্বীপে একলাখ ১৫ হাজার ৭৮০ টাকা, ব্রুনাইয়ে একলাখ ২০ হাজার ৭৮০ টাকা ও লেবাননে একলাখ ১৭ হাজার ৭৮০ টাকা। কিন্তু এই পরিসংখ্যান শুধু কাগজে কলমেই, বাস্তবে এই টাকায় বিদেশে পাড়ি দেয়ার কথা কল্পনাও করতে পারেন না অভিবাসীরা।
প্রবাসীরা বলছেন, দালালচক্রের অতিরিক্ত মুনাফার লোভের কারণেই খরচ কমে না বিদেশযাত্রার। সরকারি নীতি আর কঠোর পদক্ষেপের অভাবেই যা দিনদিন বাড়ছেই।
আবার, এতো অর্থ খরচ করেও কারো কারো কপালে জোটে অবৈধ তকমা। এসব দুরবস্থার কথা ই উঠে এলো ঐ সংবাদ সম্মেলনে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদেশমুখী শ্রমিকদের ব্যয় আর দক্ষতা ব্যবস্থাপনায় দরকার সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ। যৌক্তিক খরচে বিদেশে শ্রমিক পাঠাতে দক্ষতা এবং যে দেশে যাবেন ঐ দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা দুটোই বাড়াতে মুল ভুমিকা রাখতে হবে সরকারকেই।
সরকারি হিসেবে ১৬৫টি দেশে কর্মী পাঠায় বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত ভাগ্য ফেরাতে এসব দেশে গেছেন এককোটি ৪৮ লাখ বাংলাদেশি।
সংবাদ সম্মেলনে, প্রবাসীদের মরদেহ বিনা খরচে দেশে ফেরাতে বিমান বাংলাদেশের সহযোগিতা চাওয়া হয়। এসময়, বন্ডের বিপরীতে সমন্বিত বিনিয়োগের উর্ধ্বসীমা ১ কোটি টাকা নির্ধারণে সরকারি সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়েও সমালোচনা করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এছাড়া, বিভিন্ন দেশে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে অবৈধ হয়ে যাওয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিশেষ ব্যবস্থায় দেশে ফেরাতে সরকারের সহযোগিতা চান তারা।