নিজস্ব প্রতিবেদক :
দুই সন্তানের জননী ফাতেমা খাতুন সাত বছর ধরে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার বিয়ের হয় পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের বাগালী গ্রামের জিয়ারুল গাজীর সাথে দাম্পত্য জীবনে ঘর আলোকিত করে আসে একটি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তান। বিয়ের ১১ বছরের মাথায় স্বামী মারা যায়। জীবনের দুঃখ নেমে আসে। তার শ্বশুরবাড়িতে কোন কাজ কাম না পাওয়ায় সন্তানদের নিয়ে পিতার বাড়ি আমাদী ইউনিয়নের বালিয়াডাংগা গ্রামে চলে আসে। এখানে ও এসে একই অবস্থা সৃষ্টি হয়। না খেয়ে সন্তানদের নিয়ে থাকতে হতো। কোন উপায় না পেয়ে সন্তানদের ও নিজে বাঁচার জন্য বাড়ির সামনে নদীতে নেট দিয়ে মাছ মারা শুরু করি। এতিম ছেলেটাকে হেফজ মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয়। আর মেয়েটা কে বাড়ির পাশে একটা মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেই। পিতার ও কোন জায়গা জমি নেই। পিতার বেধে দেওয়া ঘরে নদীর চরে বসবাস করছি। ৭ বছর ধরে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছি।২ টা সন্তান লেখা পড়া করে। কাক ডাকা ভোরের আগে উঠে নদীতে মাছ ধরতে যায়। আগে নেটের জাল দিয়ে পানিতে নেমে জাল টানা দিয়ে মাছ ধরতাম জীবনটা হাতে নিয়ে। ভাবতাম হয়তো আর আমার ছেলে মেয়ের সাথে দেখা হবে না।এ জীবনে শুধু দুঃখ। প্রায় ১ বছরের মতো নৌকা নিয়ে মাছ ধরছি।যা আয় হয় তাতে সংসার ঠিক মতো চলে না। খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। ঠান্ডার সময় নদীতে মাছ ধরতে খুবই কষ্ট হয়। ঝড়, রোদ্র,বৃষ্টি আমার মাথার উপর দিয়ে যায়। কি করবো? মাছ না ধরলে কি খাবো? কিভাবে সংসার চালাবো? এসব চিন্তায় আমার ঘুম হয় না। আমাদের তো কোন জায়গা জমি নেই। নদীর চরে আমাদের বসবাস। দ্রব্য মূল্যের বাজারে আমরা ঠিক মতো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারি না। তারমধ্যে আমার ছেলে মেয়ের লেখা পড়ার কিছু খরচ দিতে হয়। মাসে মাছ ধরে তার ২ হাজার টাকা মতো আয় হয়।
তিনি বলেন, ছেলেটা হেফজ মাদ্রাসায় লোজিং এ থাকে। মেয়েটা আর আমি খায়। তাদের লেখা পড়ার খরচ দিতে হয়। এ জীবন টা শুধু কষ্টের দেখার কেউ নেই। দুপুরে প্রচন্ড রোদ্র নৌকায় মাছ ধরার সময় এসব কথা বলেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় তিনি নদীতে মাছ ধরে জীবন যাপন করছেন। তার পিতার বেধে দেওয়া নদীর চরে গোলপাতার ঘরে তিনি বসাবস করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ হাসানুর বলেন, তিনি নদীতে মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহ করছেন এটা সম্পূর্ণ সত্য। ওনার স্বামী মারা গেছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন সাহায্য দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফাতেমা খাতুন এই এলাকার স্থানীয় ভোটার না হওয়ায় তাকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন সাহায্য করা হয়নি। কয়রা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেশমা আক্তার বলেন,আমি তার সম্পর্কে জানতাম না। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের পক্ষ থেকে যা যা সহযোগিতা করা সম্ভব আমি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।