
মুসুলমানদের তাৎপর্যপূর্ণ একটি মাস হলো ‘মাহে রমজান’। ২ মার্চ (রবিবার) ছিল রমজানের ১ম দিন। চারিদিকে রমজানের স্নিগ্ধ সুবাস বইছিলো। তবে সেই সুবাস এসে পৌঁছায়নি ষাটোর্ধ্ব আলেয়া বেগমের বাড়িতে। ছোট্ট একটা ঝুপড়িতে প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে বসবাস করা আলেয়া বেগম ১ম রোজায় সেহরি করেছেন কর্জ (ধার) করা চাউল দিয়ে। পাশের বাড়ি থেকে এক কেজি চাল কর্জ করে ভাত রান্না করেন আলেয়া। আর তা দিয়েই করেন সেহরি। আলেয়া বেগম খুলনার পাইকগাছা উপজেলার শ্রীকন্ঠপুর গ্রামের বাসিন্দা। দুই বছর হয়েছে স্বামী মারা গেছে। তবে এখনও আলেয়ার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি বিধবা ভাতার নামের তালিকায়। ফলে বয়স ৬০ পার হলেও পাননি বয়ষ্ক ভাতার কার্ড। সুবিধাবঞ্চিত এই নারীর শরীর যেন আর চলেই না! তবুও জীবন-জীবিকার তাগিদে এখনও পরের ক্ষেতে দিনের অর্ধেক সময় পার করতে হয় তাকে। পাশাপাশি স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিষ্কার-পরিছন্নতার কাজ করেন আলেয়া বেগম। মাসিক ৩০০ টাকা বেতনের সেই চাকরিই তার রুটিরুজির শেষ ভরসা! কুড়ানো পাতা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছিলেন আলেয়া। আলেয়া জানান, ৬২ বছর বয়সেও সরকারি কোনো ভাতা পাই না। স্বামী মারা গেছে; তাও জোটেনি বিধবা ভাতার কার্ড। প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে দুমুঠো ভাতের জন্য সারাটা দিন পার হয়ে যায় পরের বাড়ি; আবার কখনও অন্যের জমিতে কাজ করতে করতে। রোজা রেখে তীব্র রোদে কাজ করা সম্ভব নয় বলে; পাতা কুড়াতে এসেছি এই বাগানে। কানতে কানতে চোখের পানি ভেসে গেলেও কারো মন গলে না। কেউ কোনো সাহায্যও করে না। আলেয়ার কুড়ানো পাতা নিয়ে যাচ্ছিলেন নসিমনচালক আসাদুল ঢালী। তিনি জানাচ্ছিলেন ‘আলেয়াদের দু:খের কাহিনী’। আসাদুল বলেন, গত তিন দিন ধরে আলেয়া, জামেলা এবং শুককলি তিনজন মিলে এই পাতার বস্তাগুলো ভরেছে। তারা মাঝেমধ্যে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় এভাবে পাতা কুড়ায়। আমি চেষ্টা করি আমার সুযোগ মতো শুধু তেল খরচের টাকা নিয়ে পাতাগুলো তাদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার। সত্যিই, আমার দেখা অভাবী মানুষ তারা! আমাদের সমাজে এই মানুষগুলো সকল ধরনের সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ সময় সমাজের বিত্তবানদের আলেয়াদের মতো হতদরিদ্র মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি।
লেখক: রিয়াদ হোসেন, শিক্ষার্থী।