জাতীয় ডেস্ক:
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে পালাতে পারে পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান ওরফে রবিউল ওরফে হৃদয় ওরফে সোহাগ। এমন শঙ্কার কথা বাংলাদেশ পুলিশ এরইমধ্যে ইন্টারপোলকে অবহিত করেছে। এছাড়া, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এসব বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছে। বাড়িয়েছে বাড়তি নজরদারি। পুলিশ হত্যা মামলার আসামি আরাভকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের এনসিবি শাখা।
পুলিশ কর্মকর্তা খুনের এই পলাতক আসামি আলোচনায় আসেন দুবাইয়ে তার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সেলিব্রিটিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে। আরাভের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, হিরো আলমসহ অনেকে সে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। বিশেষ করে সাকিব আল হাসানের মতো তারকা ক্রিকেটার সেখানে অংশ নেওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি মিডিয়া মনজুর রহমান বলেন, ‘পলাতক আসামি আরাভ ওরফে রবিউল ওরফে হৃদয়কে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের মুখোমুখি করার জন্য পুলিশ সদর দফতরের এনসিবি শাখা কাজ করছে। সে যাতে অন্য কোথাও যেতে না পারে সে বিষয়টিও ইন্টারপোলকে অবহিত করা হয়েছে।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আরাভের বিষয়ে বাংলাদেশে অবস্থিত দুবাই দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ চলমান রয়েছে। আরাভের পেছনে কারা জড়িত রয়েছে এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের প্রয়োজনে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।’
২০১৮ সালের ৮ জুলাই বনানীতে আরাভের অফিসে পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মামুন ইমরান খানকে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহ পুড়িয়ে দেয় তারা। লাশ উদ্ধার করা হয় গাজীপুর থেকে। এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয় আরাভ খান ওরফে রবিউল ওরফে হৃদয়কে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার এই পলাতক আসামির নাম রবিউল ইসলাম ওরফে আপন। তার বাড়ি গোপালগঞ্জে। কখনও সে নাম ধারণ করে সোহাগ, কখনও বা শেখ হৃদয়। তাকে খোঁজা হচ্ছিল। ইতোমধ্যে মামলাটি তদন্ত করে তাকে অভিযুক্ত করে চার্জশিটও দিয়েছে ডিবি। সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনাটি ঘটিয়ে আরাভ পাসপোর্ট ছাড়া ভারতে চলে যায়। তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে তদন্তে ওঠে আসে রবিউল ইসলাম আপন নামের একজন কোর্টে আত্মসমর্পণ করেছে। তারপর তাকে জেলখানায় নেওয়া হয়। কিন্তু এটা একটা ফেক ঘটনা ছিল। যে আত্মসমর্পণ করেছে সে ভুয়া। আসল আপনের সঙ্গে তার একটা যোগসূত্র বা কমিটমেন্ট হয়েছিল।
জানা যায়, টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি রবিউলের পরিবর্তে জেলে যান চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার আবু ইউসুফ লিমন। যখনই তিনি জেলে গেলেন আসল আপন তাকে আর টাকা দিচ্ছিল না। তখন তিনি কোর্টে সত্য কথা বলে দেন। জানান, আমি আপন না। আপন হচ্ছে ওনি, যিনি ভারতে আছেন। আমি ভুল করেছি। তখন কোর্ট আবার ডিবিকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তে দেখা যায়, এই আপন আসল আপন নয়। ওই আপন অবৈধভাবে ভারতে চলে গেছে। পরে সেখান থেকে সে দুবাই চলে যায়।
সাবেক একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে আরাভ খানের সঙ্গে এমন গুঞ্জনের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার (১৮ মার্চ) নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ। এতে তিনি জানান, আরাভ খানকে চেনেন না। এমনকি তার সঙ্গে প্রাথমিক পরিচয়ও ছিল না বলে স্ট্যাটাসে দাবি করেন তিনি।