
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার তালায় পেট্রোল জ্বালিয়ে গৃহবধু ফারহানা আক্তার রত্নাকে হত্যা করা হয়নি বরং দুর্ভাগ্যবশত সাজানো পরিকল্পনাটি হত্যাকাণ্ডে রুপ নিয়েছে। সাবেক স্বামীকে ফাঁসাতে নাটকীয় এ পরিকল্পনা করে রত্না ও বর্তমান স্বামী হাসিবুর রহমান সবুজ। দু’জনের পরিকল্পনা মতে তালা বাজার থেকে ক্রয় করা হয় চার লিটার পেট্রোল। এরপর তালা সদরের মোবারকপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় ঘটানো হয় এ মর্মান্তিক ঘটনা। সোমবার (৯মার্চ) বেলা সাড়ে ১০ টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
গৃহবধু ফারহানা আক্তার রত্না (২৬) পাইকগাছা থানার মালোত গ্রামের রোকনউদ্দীনের মেয়ে। বর্তমান স্বামী হাসিবুর রহমান সবুজ (২৭) কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার খাসমথুরাপুর গ্রামের মৃত. আব্দুস সাত্তারের ছেলে। তারা উভয়ে তালার মোবারকপুর গ্রামের বাবু সাধুর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
ঘটনার বিবরণ ও নাটকীয় হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার বিষয়ে পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত ২৪ ফেব্রুয়ারী তালা থানায় পেট্রোল জ্বালিয়ে মেয়ে রত্নাকে হত্যা চেষ্টার মামলা দায়ের করেন বাবা রোকনউদ্দীন সরদার। এ মামলায় আসামী করা হয় রত্নার দ্বিতীয় স্বামী, শ্বশুর, সালা, ভগ্নিপতিসহ চারজনকে। মামলার এজহারে বলা হয়, আসামীরা একত্রিত হয়ে ২১ ফেব্রুয়ারী রাত ১.৩০ মিনিটের দিকে রত্নার ঘরে ও গায়ে পেট্রোল জ্বালিয়ে আগুন দিয়ে রত্নাকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। রত্নাকে উদ্ধার করে তালা হাসপাতাল থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এরপর ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে নেওয়া হয়।
পুলিশ সুপার জানান, মামলার পরই ঘটনার রহস্য উৎঘাটনে মাঠে নামে পুলিশ। তদন্তকালে গত ৭ মার্চ তালার ভাড়া বাসা থেকে আটক করা হয় রত্নার বর্তমান স্বামী হাসিবুর রহমান সবুজকে। জিজ্ঞাসাবাদে সবুজ ঘটনা খুলে বলতে শুরু করে। রত্নার তিন বিয়ে। দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে তার বিরোধ রয়েছে। ১০-১২ বছর সেখানে সংসারও করেছে। সেই ঘরে ৮ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। মনোমালিন্য হওয়ায় তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। তাদের মধ্যে পারিবারিক ৩-৪টি মামলাও রয়েছে। পরবর্তীতে পাইকগাছায় থাকাকালীন সময়ে রত্নার সঙ্গে সবুজের পরিচয় ও এক পর্যায়ে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, দ্বিতীয় স্বামীকে ফাঁসাতে বর্তমান স্বামী সবুজ ও রত্না গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তালা বাজার থেকে চার লিটার পেট্রোল ক্রয় করে তার স্বামী। সেই পেট্রোল বাড়িতে রাখা হয়। এরপর রাতে ঘরে ও গায়ে পেট্রোল লাগায় রত্না। তারপর গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় স্বামী সবুজ। এরপর সবুজ বাইরে এসে চিৎকার করে স্থানীয়দের জড়ো করে। তবে আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রত্না বার বার তার দ্বিতীয় স্বামীসহ চারজনকে চিনতে পেরেছে বলে জানালেও সেটি আদৌ সঠিক নয়। পর্যাপ্ত আলামতসহ পর্যালোচনা করে ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত ও সাজানো তারই প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।
দুঃভাগ্যবসত রত্না মারা গেছে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, মেয়েটি ও তার স্বামী ভেবেছিল আহত হয়ে পরে আবার সুস্থ হয়ে যাবে। তবে মেয়েটি গত ৪ মার্চ ঢাকা মেডিকেল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এ ঘটনায় বর্তমান স্বামী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।