
মোঃ আকবর হোসেন,তালা: শীতের শেষে ফাগুনের হাওয়ায় গাছে গাছে ফুটছে আমের মুকুল। মুকুলে মুকুলে ছেয়ে আছে গাছের প্রতিটি ডালপালা। এ যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। বাগান জুড়ে মৌমাছির গুঞ্জন আর ফাগুনের হাওয়ায় চারদিকে ছড়িয়ে পড়া এ মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ একদিকে যেমন প্রকৃতি প্রেমিদের মুগ্ধ করছে, পাশাপাশি জানান দিচ্ছে মধুমাসের আগমনী বার্তা। এবছর শীতের প্রভাব কম থাকায় সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় আম গাছে আগাম ধরেছে মুকুল ।
সাতক্ষীরার তালার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, সদ্য মুকুল ফোটার দৃশ্য, ইট পাথরের শহর থেকে শুরুকরে বিস্তৃত তালার গ্রাম্য জনপদ গুলো। উপজেলার প্রায় সকল ইউনিয়নের আম বাগান গুলোতে মুকুলে ছেয়ে গেছে। আম গাছে মুকুল আশার আগে থেকে পরিচর্যা করলেও বর্তমানে চাষী ও বাগান মালিকরা বাগানের পরিচর্যা নিয়ে বেশ কিছুটা ব্যস্তসময় পার করছেন।
এ ব্যাপারে কথাহয় কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা ও বাগান মালিকদের সাথে। তারা জানান,পূর্বে তালায় আমের মৌসুমে “অফ ইয়ার” এবং “অন ইয়ার” থাকত। এর কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন পরিচর্যার অভাব ও মাটিতে গাছের পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবকে। চলতি বছরজুড়ে নিয়মিত পরিচর্যা,গাছের গোড়ায় বাঁধ দিয়ে পানি সেচের ফলে সব বাগানের গাছগুলোতে নিয়মিত খাদ্য পাচ্ছে এবং চাষীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে পূর্বের রেওয়াজ গুলো ভেঙ্গেছে। যে কারণে আশানুরূপ ফলন বেড়েছে। উপজেলার খেশরা, তালা সদর, ইসলামকাটি, কুমিরা, তেতুলিয়া, খলিলনগরসহ বিভিন্ন এলাকা পর্যবেক্ষণে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
ইসলামকাটি ইউনিয়নের সফল আম চাষী আসাদুজ্জামান জানান, বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। বাগানের মুকুল আসা শুরু করেছে। আমরা কৃষি বিভাগের বিভিন্ন পরামর্শ গ্রহণ করছি। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও বাগানে এসে আমের ভাল ফলন পাওয়ার বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করছেন। তবে অনেকে চাষি শঙ্কার কথা উল্লেখ করে বলেন, পুরোপুরিভাবে শীত বিদায়ের আগেই মুকুল আসা ভাল না,ঘন কুয়াশায় মুকুল ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। যদিও ফাগুনে কুয়াশার আশংকা কম, তারপরও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতির বিরূপ আচরণে আমের মুকুল ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
এ বিষয়ে,তালা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ শুভ্রাংশু শেখর দাশ জানান, এ বছর উপজেলায় মোট ৭১৫ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে।যার প্রায় ৭০-৮০ ভাগ গাছে মুকুল চলে এসেছে,তাই চাষীদেরকে বলেছি ফুল ফোটা অবস্থায় কোন ঔষধ বা কীটনাশক ব্যবহার না করার জন্য। তবে ফুল ফোটার সময় মেঘলা ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকলে পুষ্প মঞ্জুরিতে পাউডারি মিলডিউ ও অ্যানত্রাকনোজ রোগের আক্রমন হতে পারে,যদিও এখন পর্যন্ত তেমন কোন পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। এ সময়ে বাগানে হপার এবং ফুদকী পোকা গাছের বাকলে লুকিয়ে থাকে। তিনি অনুমোদিত কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেন।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও বড় ধরণের কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে চলতি মৌসুমে তালায় ১১ হাজার ৩৬০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া আশানুরূপ ফলন পাওয়ায় তালায় প্রতি বছর আম বাগানের সংখ্যা বাড়ছে বলেও জানান কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা।