
তালা অফিস থেকে নজরুল ইসলামঃ শরতের শেষ আর হেমন্তের আগমণ এই সময়টা এখন তালা উপজেলার কৃষকদের জন্য ব্যস্ততার মৌসুম। শীত আসার আগেই মাঠজুড়ে সবুজ সবজির সমারোহ। কেউ লাগাচ্ছেন ফুলকপি, কেউ বাঁধাকপি, আবার কেউবা মুলা, বেগুন, টমেটো কিংবা শিম। আগাম সবজি চাষ করে যেমন কৃষকের মুখে ফুটছে হাসি, তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও বইছে নবজাগরণের হাওয়া।
তালা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে বিস্তীর্ণ জমিতে আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। অনেকেই প্রথম দফার ফসল বিক্রি করে ফেলেছেন, আবার কেউ নতুন করে চারা লাগাতে ব্যস্ত। এক সময়ের অনুর্বর জমি এখন যেন সবুজের সমারোহে ভরে উঠেছে। তালার বিভিন্ন হাটবাজারে এখন প্রতিদিনই ভোর থেকে সবজির ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি ঢাকাসহ বড় শহরেও যাচ্ছে এসব সবজি। এতে মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াই কৃষকরা সরাসরি অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, তালা উপজেলায় আগাম সবজি চাষের পরিমাণ প্রতি বছরই বাড়ছে। গত দুই বছরে উপজেলায় আগাম সবজি চাষ বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।
মহান্দি গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম জানান, “১০ কাটা জমিতে আগে হলুদ ও পাট চাষ করেছিলাম। এবার সেই জমিতে মুলা লাগিয়েছেন। বিঘা প্রতি ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হয়, বিক্রি হবে প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা। এখন আগাম চাষে খরচ কম, লাভ বেশি।”
শুধু কৃষকরাই নয়, এই আগাম চাষে উপকৃত হচ্ছেন এলাকার নারী-পুরুষরাও। কেউ চারা রোপণে, কেউ আগাছা পরিষ্কারে, কেউবা সবজি তোলার কাজে যুক্ত হয়েছেন। এতে গ্রামীণ কর্মসংস্থান বেড়েছে, পরিবারের আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।
হাজরাকাটি গ্রামের কৃষক নজরুল বিশ্বাস বলেন, “১০ কাটা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছি। ইতিমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। একই জমিতে তিনি নতুন চারা লাগিয়েছেন।”
জেয়ালা নলতা গ্রামের শেখ শাহিনুর রহমান জানান, “এক বিঘা ১৬ কাটা জমি ইজারা নিয়ে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বিক্রি হবে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো আশা করছি।”
একই গ্রামের রোস্তম শেখ বলেন, “ আগাম কার্তিক ফুলকপি লাগিয়েছি। এখন প্রতিবিঘা ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ হাজার টাকা। বাজারে দাম ভালো থাকায় বেশ লাভ হচ্ছে।”
হাজরাকাটি গ্রামের রহমত গাজী জানান, “১০ কাটা জমিতে ৫-৬ হাজার টাকা খরচ করে ২০-২৫ হাজার টাকার সবজি বিক্রি হবে।”
এ বিষয়ে তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন বলেন,“আগাম সবজি চাষ এখন তালার কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে। আমরা কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত সহায়তা দিচ্ছি। সঠিক সময় চারা রোপণ, কীটনাশক ব্যবস্থাপনা ও রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছি। আগাম চাষে ঝুঁকি কিছুটা থাকলেও ফলন ও বাজারমূল্য দুই-ই ভালো হওয়ায় কৃষকরা ব্যাপকভাবে উৎসাহিত হচ্ছেন।”

