রুবেল হোসেন : উপকূলীয় এবং প্রান্তিক জনপদ হিসাবে সাতক্ষীরার উঠতি বয়সী কিশোর কিশোরীরা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। উপকূলীয় উষ্ণ জলবায়ু ও ভূ-প্রকৃতিগত কারনে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় উপকূলের ছেলে মেয়েদের একটু আগেই বয়সন্ধিকাল শুরু হয়। এসময় তাদের শারীরীক ও আচরণগত পরিবর্তনের পাশাপাশি মানষিক স্বাস্থেও প্রভাব পড়ে। কিন্তু এ সময়ে কিশোর কিশোরীদের যে ধরণের সেবার আওতায় আনা দরকার সে সম্পর্কে অনেকে অজ্ঞ। কিশোর কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার জন্য জেলায় পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব রয়েছে। অনেক সময় কিশোর কিশোরীরা বয়সন্ধিকালে যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে সে বিষয়ে পরিবারের সদস্যরাও ওয়াকিবহাল থাকে না। ফলে তারা স্মরণাপন্ন হচ্ছে না প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে। দীর্ঘদিন মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভোগার পরে কাঙ্খিত সেবা না পাওয়ার ফলে পরবর্তীতে স্বাস্থ্য জটিলতায় ভোগে তারা। ফলে তৈরি হয় দীর্ঘ্য মেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুকি। বিশেষ করে শ্যামনগর ও আশাশুনির প্রত্যান্ত অঞ্চলের কিশোর কিশোরীরা এ ধরণের সমস্যায় বেশি ভোগে। সাম্প্রতিক সময়ে জেলার বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ তড়িৎ কান্তি ঘোষ সাতনদীকে বলেন, “প্রতিনিয়ত আমাদের কাছে বিভিন্ন বয়সী রোগী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে আসছে। বিশ্লেষনে দেখা যায় এ ধরনের সমস্যার সূচনা বয়সন্ধিকালে। প্রারম্ভে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট করা গেলে এ ধরণের সমস্যার বিস্তার কমিয়ে আনা যেত।
স্বাস্থ্য খাত এবং বিদ্যালয় পর্যায়ে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার মতো দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে বলে মনে করেন সাতক্ষীরার সচেতন মহল।
উন্নয়নকর্মী ও প্রেরণা নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সম্পা গোস্বামী বলেন, সরকারের অপ্রতুল তহবিল বরাদ্দের কারণে দেশে কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিশোর-কিশোরী বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা এবং ওষুধ ও স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ কার্যক্রমে আরও তহবিল বরাদ্দ করা প্রয়োজন।
এনজিও কর্মী মাধব দত্তের মতে সরকারি বিভিন্ন বিভাগ, “বাস্তবায়নকারী সংস্থার মাঝে পর্যাপ্ত সমন্বয় ও সহযোগিতার অভাবের কারণে কিশোর কিশোরীদের বয়সন্ধিকালীন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার যথাযথ সমাধান সম্ভব হচ্ছে না। অনেক সময় পিতা-মাতা ও সমাজ কিশোর কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে স্বীকার করতে নারাজ।”
কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য কার্যক্রমটি সরকার, এনজিও এবং সিভিল সোসাইটির অধিকতর অংশগ্রহণে দেশের সর্বত্র প্রসারিত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সজিবুর রহমান বলেন, “সাম্প্রতিক কালে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে আসছে। স্কুল পর্যায়ে কিশোর কিশোরীদের সচেতন করে গড়ে তোলা সম্ভব হলে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা অনেকাংশে লাঘব হত। সেক্ষেত্রে পরিবারের সদিচ্ছার অভাব ও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষদের স্বাস্থ্য সচেতন করে গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য সেক্টরে এবং বিদ্যালয় পর্যায়ে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার মতো দক্ষ জনবল নিয়োগ
, শোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিশেষ করে সমাজের অংশগ্রহণ, কিশোর-কিশোরী বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা এবং ওষুধ ও স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ ইত্যাদি কার্যক্রমে আরও তহবিল বরাদ্দ করা, প্রতিটি বিদ্যালয়ে ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনায় কিশোর-কিশোরী বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সাতক্ষীরার সচেতন মহল।