
হাবিবুর রহমান/ লিটন ঘোষ বাপি: দেবহাটা উপজেলা পরিষদ উপ-নির্বাচনের তফসিল এখনও ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন কিন্তু উপ-নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।
অনেকেই শুরু করেছেন গণসংযোগ। উপনির্বাচন নিয়ে নানা মুখি বিতর্কের মধ্যেও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতা মুলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে অনেকেই মনে করেন। আর সে ক্ষেত্রে নির্ভয়ে ভোট প্রদানের নিশ্চয়তাও আশা করেন তারা।
তথ্য মতে, দেবহাটা উপজেলা ৫ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। মোট ভোটার সংখ্যা ৯৮ হাজার। গত ২৪ মার্চ ২০১৯ তারিখে উপজেলা নির্বাচনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল গনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন। উক্ত নির্বাচনে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। কিন্তু গত ৬ আগস্ট ২০২০ তারিখে উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল গইি মহামারী করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য হয়।
এরপর পরই শুরু হয় সম্ভাব্য প্রার্থী ও উপ-নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জল্পনা-কল্পনা। অনেকে শুরু করেন গণসংযোগ। বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে গিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশা করে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। এর মধ্যে বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড স ম গোলাম মোস্তফা, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সবুজ।
অন্যদিকে উপজেলা উপ-নির্বাচনকে সামনে রেখে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ শুরু করেছে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী-সমাজ সেবক ও সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য আলহাজ্ব আল ফৈরদাউস আলফা।
এদিকে উপ-নির্বাচনে বিএনপি ভোটযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে চায় বলে দলীয় একাধিক সুত্রের মাধ্যমে বিষয়টি জানা গেছে। মামলা জটে পলাতক থাকায় দেবহাটা উপজেলা জামায়াতের দায়িত্বশীল কারোর সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে উপজেলা জুড়ে আছে জামায়াতের বড় অংকের ভোট। জামায়াত ভোটে অংশ না নিলেও তাদের ভোট জয়পরাজয় নির্ধারন করতে পারে।
দেবহাটা উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচন নিয়ে নিজের প্রার্থিতা বিষয় আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মজিবর রহমান বলেন, দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে শত ভাগ নিশ্চিত যে, আমি নৌকার টিকিট পাব। কারণ আমি দুইবার উপজেলা আ’লীগের নির্বাচিত সভাপতি। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মনে আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। উপজেলার বিদ্যুৎ, রাস্তা- ঘাট, স্কুল-কলেজ সহ বিভিন্ন স্তরে আমার অবদান রয়েছে। আমি আশাবাদী নৌকা প্রতীক পাব। আর উপজেলা চেয়ারম্যান হতে পারলে দেবহাটা উপজেলা কে আধুনিকায়ন করে সাতক্ষীরা জেলার মধ্যে রোল মডেল তৈরি করব।
উপ-নির্বাচনে নিজের প্রার্থিতা বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে দলীয় প্রার্থী ক্ষেত্রে আমি খুবই আশাবাদী। আমি মনে করি নৌকার টিকিট পাব। দেবহাটার রাজনীতির মাটি ও মানুষের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। আমি দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের পর পর তিনবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
২০১৯ সালের ২৪ মার্চ দেবহাটা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন উপলক্ষে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ভোটে যে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় সেখানে কাউন্সিলদের বিপুল ভোটে একক প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচিত হই। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করিনি। তাই মনে করি তৃণমূল নেতাকর্মীদের মত অনুযায়ী কেন্দ্র যদি সঠিক ভাবে নির্বাচিত করে তাহলে উপনির্বাচনে কেন্দ্র থেকে আমি নৌকার মাঝি হিসেবে নির্বাচিত হব। আর আমি উপজেলা পরিষদের উপ নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হতে পারলে উপজেলাকে সাতক্ষীরা জেলার ভিতরে মডেল উপজেলা হিসেবে রূপান্তরিত করব।
দেবহাটা উপজেলা পরিষদের আসন্ন উপ-নির্বাচনে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য আল ফেরদৌস আলফা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন বলে সাতনদীকে জানিয়েছেন। যোগ করে তিনি বলেছেন, নিরপেক্ষ ভোট হলে জনগন আমাকে বিজয়ী করবে। ব্যবসায়ীক জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানো শুরু করেছি আজও তা অব্যাহত আছে। জেলা পরিষদে নির্বাচিত হয়ে শততার মানদন্ডে পাশ করেছি যা উপজেলা জুড়ে প্রশাসন জনগন সবাই জানে।
ইপশভমধ্যে জেলা পরিষদ থেকে কোটি টাকার উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড করেছি মানুষের উন্নয়নে। বিভিন্ন উৎসবে-দূর্যোগে নিজস্ব তহবিল থেকে অসহায় মানুষের পাশে দাড়াই। দেবহাটা উপজেলার সাধারণ মানুষ চায় উপ-নির্বাচনে আমি প্রতিদ্বন্দিতা করি। মানুষের এ চাওয়াকে আমি সম্মান জানিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবো। আমি সকলের দোয়া আর্শিবাদ ও সমর্থন কামনা করি।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে নিজের প্রার্থিতা বিষয়ে উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সবুজ বলেন, জনগণের ভালোবাসার কারণেই আজ আমি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। যদি নৌকা প্রতীক পাই তবে বিপুল ভোটে জয়ী হব এবংদেবহাটা উপজেলা কে সন্ত্রাস দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলবো।
উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে নিজের প্রার্থীতা সম্পর্কে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান স ম গোলাম মোস্তফা বলেন, আমার বাবা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক। বাবার পথ ধরেই ৭৩ সালে আমি ছাত্র লীগে যোগদান করি। ৫ বছর দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে দেবহাটা উপজেলাকে আধুনিকায়নের চেষ্টা করেছি। বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও আদর্শ নিয়ে উপজেলা গড়ে তুলতে চাই। তাই দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারলে আমি জয়লাভ করবো আর উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে দেবহাটা উপজেলাকে আরো আধুনিকায়ন করে ডিজিটাল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলবো
এদিকে উপজেলা বিএনপিথর সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বাবু জানিয়েছেন, আমরা এ নির্বাচনের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে চিঠি পেয়েছি। দুই/এক দিনের মধ্যে আমরা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবো। যদি নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন তবে কাকে প্রার্থী দিবেন এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি বলেন, দলের ক্লিন ইমেজের প্রার্থী কে প্রাধান্য দেয়া হবে। তবে দল যাকে মনোনয়ন দিবে সেই প্রার্থী হবে।
তবে এলাকার সাধারণ জনগণ বলছে, যদি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তবে যে ব্যক্তি জনগণের উপকারে আসে আমরা তেমন প্রার্থীকেই বেছে নেবো। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর কে হবেন আগামী দিনের দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তার জন্য ভোট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।