
জাতীয় ডেস্ক:
দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নবীন এক ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি)
থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
শনিবার (৪ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির মিটিং শেষে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. অধ্যাপক শাহাদাৎ হোসেন আজাদ এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাময়িক বহিষ্কৃত পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান, একই শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম এবং চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, এই বিষয়ে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমরা প্রায় দুই ঘণ্টা মিটিংয়ে ছিলাম। আমরা হাইকোর্টের যে নির্দেশনা গুলো ছিলো সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রক্টর এবং আইন প্রশাসক এই বিষয়ে অবগত করবেন।
ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, আজকের সভায় দুইটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রথমত হাইকোর্ট যে নির্দেশনা প্রদান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় তা অনতিবিলম্বে কার্যকর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা কর্তৃপক্ষের গ্রহণ করা। অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে প্রসেডিং শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কেন চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না এই মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হবে ও সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাদের লিখিত জবাব দিতে হবে। তাদের কাছ থেকে জবাব প্রাপ্তির পর পরবর্তী ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থাপন করার পর সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।
এদিকে, অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তার পরিবারও অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানান। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও এ দাবি জানানো হয়।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, ‘ওই ছাত্রীরা যেভাবে নির্যাতন করেছে সিটি নিসন্দেহে ফৌজদারী অপরাধ। হাইকোর্ট থেকে তাদের অপরাধের প্রমাণ পেয়ে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর তাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার আর কোনো অধিকার থাকে না। তাদেরকে স্থায়ী বহিষ্কার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা প্রয়োজন।’
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের আবাসিক এক ছাত্রী বলেন, ওই মেয়ের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা শুনে গা শিউরে ওঠে। সভ্য সমাজে এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এমন ঘটনা মেনে নেওয়ার মতো নয়। অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার করলে অন্যদের জন্য বিষয়টি শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় তাদের জন্য যে পরিমাণ বিব্রত হয়েছে এই ক্যাম্পাসে বিচরণের কোন অধিকার তাদের নেই।’
হাইকোর্ট থেকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশের পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন বলেন, ‘আমার ওপর তারা যে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে, তাতে অস্থায়ী বহিষ্কার নয় আমি তাদের স্থায়ী বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল চাই। তা না হলে ক্যাম্পাসে ফিরলে আমাকে মেরে ফেলার আশঙ্কা থাকবে।’
অভিযুক্তরা আর ক্যাম্পাসে না আসুক এই দাবি ভুক্তভোগীর পরিবারেরও। ভুক্তভোগীর বাবা আতাউর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করতে পারবে কি-না এ বিষয়ে আমরা সন্দিহান। এ ধরনের অপরাধীরা ক্যাম্পাসে আর না থাকুক সেটাই চাই আমরা।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আচরণ বিধির দ্বিতীয় অধ্যায়ের বিধি-৮ অনুযায়ী, কোন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা বিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ পেলে উপাচার্য সর্বোচ্চ ১২ মাস পর্যন্ত সাময়িক বহিষ্কার করতে পারেন। অপরাধের মাত্রা আরো বেশি হলে উপাচার্য এটি শৃঙ্খলা কমিটিতে প্রেরণ করেন। সেখানে তদন্ত ও পর্যালোচনা করে সুপারিশসহ সিন্ডিকেটে প্রেরণ করা হয়। সিন্ডিকেট পর্যালোচনা করে সুপারিশ অনুযায়ী বা যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক আইন প্রশাসক ও আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. জহুরুল ইসলাম বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে এটি অবিশ্বাস্য এবং জঘন্য। এই অপরাধে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে স্থায়ীভাবে ছাত্রত্ব বাতিল ছাড়া অন্য কোনো শাস্তির প্রশ্নই আসে না। সেক্ষেত্রে সরাসরি ছাত্রত্ব বাতিলের আগে সাময়িক বহিষ্কার করতে হবে এবং একটি কমিটি করে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, শৃঙ্খলা কমিটি থেকে সুপারিশ করা হলে সিন্ডিকেট সর্বোচ্চ অথরিটি হিসেবে সেই সুপারিশ রাখতে পারেন। বা যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট তার এখতিয়ার অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার ও তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ বাতিল করতে পারেন।