
আশাশুনি ব্যুরো: সবায়কে কাঁদিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে চলে গেলেন বরেণ্য রাজনীতিবীদ আশাশুনি সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহজাহান আলী সরদার। শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি…রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। দীর্ঘদিন তিনি লিভার, কিডনি জনিত সমস্যা, ডায়াবেটিসসহ নানার রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ২ কন্যাসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনদিন তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বাদ জোহর আশাশুনি আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন আশাশুনি বাজার জামে মসজিদের ইমাম প্রভাষক হাফেজ বাকী বিল্লাহ। এরআগে বক্তব্য রাখেন রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম, পাইকগাছার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ, আশাশুনি সদর ইউপি চেয়ারম্যান হোসেনুজ্জামান হোসেন, আশাশুনি আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও. আবুল হাসান, মাদ্রাসা শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বুলবুল এবং পরিবারের পক্ষ থেকে উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি মরহুমের ভাই এড. শহিদুল ইসলাম পিন্টু ও উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মরহুমের একমাত্র পুত্র এসএম হুমায়ুন কবীর সুমন। বক্তারা মরহুমের বর্নাঢ্য জীবনের অংশ বিশেষ সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরেন এবং মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। নামাজে জানাজায় অংশ নেন সাবেক এমপি ডা. মোখলেছুর রহমান, আশাশুনি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ, খুলনা সরকারি মডেল কলেজের অধ্যক্ষ বদিউজ্জামান, দেবহাটা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, আশাশুনি উপজেলা বিএনপির আহবায়ক স,ম হেদায়াতুল ইসলাম, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হান্নান, লক্ষিখোলা কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ মিজবাহুল ইসলাম, শ্রীউলার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতি নুর মোহাম্মদ সরদার, উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারন সম্পাদক প্রভাষক ইয়াহিয়া ইকবাল, আশাশুনি সদর ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতি আব্দুল্লাহেল বাকী বাচ্চু, বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যন প্রভাষক মাহবুবুল হক ডাবলু, ব্রক্ষরাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী, আশাশুনি উপজেলা আ.লীগের সহ সভাপতি ঢালী সামছুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ইউ পি চেয়ারম্যান সেলিম রেজা মিলন, ইউপি চেয়ারম্যান ওমর সাকী পলাশ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম, বয়রা সরকারী কলেজের প্রভাষক সাইমুম আমিন চৌধুরী, আশাশুনির আ.লীগ নেতা আছাদুল ইসলাম, সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা যুবলীগের সেক্রেটারী মহিতুর রহমান, উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি বদরুদ্দোজা, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এসএম সাহেব আলী, উপজেলা বিএনপি নেতা হাফিজুল ইসলাম, উপজেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক আবু জাহিদ সোহাগ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারী মনিরুজ্জামান বিপুলসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নের্তৃবৃন্দ এবং এলাকার সাধারন মুসল্লিবৃন্দ।
উল্লেখ্য, মরহুম শাহজাহান আলী সরদার আশাশুনি সদরের মৃত আব্দুল গফফার সরদারের বড় পুত্র এবং আশাশুনি উপজেলা আ.লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এড. শহিদুল ইসলাম পিন্টুর বড় ভাই ও উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি এসএম হুমায়ুন কবীর সুমন এর পিতা। মরহুম শাহজান আলী ছিলেন একজন বরেণ্য রাজনীতিবীদ, জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী। মরহুমের পারিবারিক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে এম শাহজাহান আলীর বর্নাঢ্য জীবনের চুম্বকাংশ পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো-মরহুম শাহজাহান আলী ছিলেন একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। সারা জীবন তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে আ.লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ বছর আশাশুনি উপজেলা আ.লীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আশাশুনিতে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ভীত গঠন ও সাংগঠনিক গতিশীলতা অর্জনে তার অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৭৫ পরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। সে নির্বাচনে সাতক্ষীরা ৩ আসন আশাশুনিতে নৌকা প্রতীকে এমপি নির্বাচিত হন ডা. এসএম মোকলেছুর রহমান। ঐ নির্বাচনের আশাশুনিতে বিজয়ের নেপথ্য নায়ক হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন তৎকালীন উপজেলা আ’লীগ সেক্রেটারী সদ্য প্রয়াত শাহজাহান আলী। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার গঠন করার পাশাপাশি আশাশুনিতেও এম পি পদে বিজয়ী হলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের আশ্রয়স্থল হয়ে ছিলেন শাহজাহান আলী। আওয়ামী লীগের দূর্দিনে নেতা কর্মীদের বড় ভরসার স্থল ছিলেন শাহজাহান আলী। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন নেতা। সেক্রেটারীর দায়িত্বপালনকালীন সময়ে হঠাৎ তিনি চোখের জ্যোতি হারান। তারপরও সম্পূর্ণ অন্ধ অবস্থায় তিনি দৃঢ়তার সাথে নিজ দায়িত্ব পালন করেছেন। তৎকালীন সময়ে বিরোধী পক্ষ আওয়ামী লীগের উপর কখনো চড়াও হতে চাইলেও শুধু সেক্রেটারী শাহজাহান আলীর কারনেই তারা বারবার ভাবতে ও পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। তার রাজনৈতিক দৃঢ়তা, অসীম সাহসিকতা, কর্মী বান্ধব মানসিকতা ও সেবামূলক মনোভাবের কারনেই তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। আ.লীগের তৃণমূলের নেতা কর্মীদের সাথে ছিল তার গভীর যোগসুত্র। তার মৃত্যুতে আ.লীগ একজন পরীক্ষিত নিবেদিতপ্রাণ বঙ্গবন্ধুর সৈনিককে হারালো। মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনায় আগামী ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বাদ জুম’আ আশাশুনি সদরের প্রত্যেক মসজিদে দোয়ানুষ্ঠান করা হবে বলে মরহুমের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।