রুবেল হোসেন: আশাশুনি উপজেলার অন্তর্গত খাজরা হাকিমীয়া দাখিল মাদ্রাসায় চলতে পিতা-পুত্রের রাজত্ব। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার আবু রায়হান ও তার পিতা উক্ত মাদ্রাসার সভাপতি জামায়াত নেতা রুহুল আমিনের সিদ্ধান্তে পরিচালিত হচ্ছে মাদ্রাসা টি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, খাজরা ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের মৃত বদনের পুত্র জামায়াত নেতা ও একাধিক নাশকতা মামলার আসামী রুহুল আমিন ইতিপূর্বে উক্ত মাদ্রাসার সুপার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। সুপার হিসাবে কর্মরত থাকায় প্রভাব কাটিয়ে নিজ পুত্র আবু রায়হানকে কম্পিউটার শিক্ষক, আবু রায়হানের স্ত্রী নাছিমা খাতুনকে সহকারী মৌলভী পদে মাদ্রাসায় নিয়োগ দেন। এছাড়াও তার পরিবারের ও নিকট আত্মীয়দের অনেকেই এই মাদ্রাসায় চাকুরিরত। অবসরে যাওয়ার পর রুহুল আমিন কৌশলে দখল করেন অত্র মাদ্রাসার সভাপতির চেয়ার। সভাপতি হওয়ার পর নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে স্বীয় পুত্র কম্পিউটার শিক্ষক আবু রায়হানকে ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসাবে দায়িত্ব দেন তিনি। বর্তমানে পিতা-পুত্র-পুত্রবধু সহ রুহুল আমিন পরিবারের একচ্ছত্র কতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে মাদ্রাসাটি। জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার চেতনায় তারা বিশ্বাসী নন। সরেজমিনে অনুসন্ধানে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
বুধবার (১৭ মে) দুপুরে খাজরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস.এম শাহনেওয়াজ ডালিমের উপস্থিতিতে খাজরা হাকিমীয়া দাখিল মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসার সুপারের কক্ষে সুপারের টেবিলের পিছনের দেয়ালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি। প্রধানমন্ত্রীর ছবির ডান পাশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানোর নিয়ম। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত সুপার জাতির জনকের প্রতি আক্রোশে তার ছবি অপসারণ করে পাশের দেয়ালে ছবিটি টাঙিয়েছেন। জাতীর জনকের ছবির জায়গায় প্রতিস্থাপন করেছে তার পিতা ও মাদ্রাসার কথিত সভাপতি নাশকতা মামলার আসামী রুহুল আমিনের ছবি। বিষয়টি প্রচার হওয়ার পর এলাকার সচেতন মহলে বইছে নিন্দার ঝড়। নাম প্রকাশে অনিচ্চুক মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষক জানান, “ইতিপূর্বে বঙ্গবন্ধুর ছবি অবমাননা ও সভাপতির ছবি সংযোজনের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত সুপারকে জানানো হলেও তিনি বিষয়টি আমলে নেন নি।”
এ বিষয়ে কাজরা ইউপি চেয়ারম্যান এস.এম শাহনেওয়াজ ডালিম জানান, “রুহুল আমিন একজন নাশকতা মামলার আসামী। সে আগে মাদ্রাসার সুপার ছিল। অবসরে যেয়ে কৌশলে মাদ্রাসার সভাপতি হয়েছেন। নিজের ছেলে, পুত্রবধু সহ ানেক নিকট আত্মীয়দের মাদ্রাসর বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন। সিনিয়র শিক্ষকদের ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসাবে নিয়োগ না দিয়ে নিজের পুত্র অপেক্ষাকৃত জুনিয়র কম্পিউটার শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন। সে একজন স্বাধীনতা বিরোধী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবিকে অবমাননা করে পিতা পুত্র মিলে বঙ্গবন্ধুর ছবির জায়গার রুহুল আমিনের ছবি টাঙিয়েছে। আমি মাদ্রাসায় এসে বিষয়টি দেখার পর আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ, জেলা পুলিশ সুপার, ও আমাদের এম.পি মহোদয়কে (অধ্যাপক ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হক) অবহিত করেছি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ভারপ্রাপ্ত সুপার আবু রায়হান চম্পট দেওয়ায় এবং মোবাইলে যোগাযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি।
পিতা পুত্রের এমন দুষ্কর্মে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে খাজরা ইউনিয়ন জুড়ে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি ও এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা পিতা-পুত্রের এমন রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকান্ডের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।