আব্দুর রহিম, কালিগঞ্জ: কালিগঞ্জে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসাধু শিক্ষকদের কাছে রীতিমতো জিম্মি শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। সরকারীভাবে কোচিং বন্ধের নীতিমালা থাকার পরও তদারকির অভাবে দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে কোচিং। কোচিংয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভালো রেজাল্ট করে আর অন্যান্যরা পড়ে রোষানলে। সব মিলে কোচিং বন্ধে সরকারী ভাবে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন এখন সময়ের দাবী। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়ার চিন্তায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভর্তি করেন বিদ্যালয়ে। আশা থাকে, তাদের সন্তানেরা যথাযথ শিক্ষা লাভ করে পরিবারের তথা সমাজের একজন হবে। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষকরা অনিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকার কারণে এবং কোচিং বাণিজ্যে ঝুঁকে পড়ার কারণে শিক্ষার মান ব্যাহত হচ্ছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, শিক্ষকদের বর্তমানে নিজ বাসায় কোচিং বাণিজ্য চালানোর কারণে বিদ্যালয়ে আসেন ঠিকই তবে অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে। লক্ষ্য থাকে, কোচিং বাণিজ্যের জন্য বিদ্যালয় ত্যাগ করা। বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধি, অভিভাবকদের অভিযোগে জানা যায়, কোচিং না করলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা বার্ষিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য করানো হয়। তথাকথিত ঐ সকল শিক্ষকদের মাধ্যমে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় চলে বিভিন্ন কোডের চিহ্ন। এসবের সাথে সরাসরি জড়িত কিছু অসাধু শিক্ষক। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সরেজমিন তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। ম্যানেজিং কমিটি নেই দীর্ঘকাল। প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ শুন্য সাতটি পদ। যে কয়জন শিক্ষক আছেন তারমধ্যে চারজনই সময় পার করেন কোচিং বানিজ্যে। আর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামই হলো কৃষান মজদুর ইউনাইটেট ইন্সটিটিউট। ১৯৭৩ সালে স্থাপিত বিদ্যালয়টি কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র বেলেডাঙ্গা বাজারের পাশেই অবস্থিত। নতুন ভবন, পরিবেশ আর অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও দিনেরপর দিন অবনতি হচ্ছে লেখাপড়ার। সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষক দেবদাশ বাবু নিজ বাড়িতে পৃথক তিনটি ব্যাচে প্রায় ৫০/৫৫ জনকে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। শিক্ষক প্রশান্ত বাবু অনুরূপ ভাবে পৃথক তিন ব্যাচে ৩০/৩৫ জন করে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। স্কুলে আসেন দেরী করে। আবার বিভিন্ন অজুহাতে চলে যান সবার আগে। অপরদিকে শিক্ষক হাবিবুর রহমান এর স্ত্রী প্রাইভেট পড়ান ২০/৩০ জন শিক্ষার্থীকে। তবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাজিম বাহারের নানান অনিয়ম ও দুর্নীতি এলাকায় চাওর হয়ে উঠেছে। ২০১৭ সাল থেকে ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি নেই। ২০২০ সালে প্রধান শিক্ষক বিনয়কৃষ্ণ ঘোষ পরলোক গমন করার পর হতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে নাজিম বাহার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে আছেন জ্যেষ্টতা লঙ্ঘন করে। ধরাকে সরাজ্ঞান করে নানান অনিয়ম ও দুর্নীতি করে চলেছেন তিনি। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচারণ, অহেতুক বিল ভাউচার দাখিল আর নিজে ক্লাস না নেওয়া তার রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। সপ্তাহের বেশিরভাগই থাকেন স্কুলের বাহিরে। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি মহা বিপদে আছি স্কুল চালাতে গিয়ে, ১৭ সাল থেকে কমিটি নেই। শিক্ষকসহ স্টাফ নেই যথাযথ। তারপরে স্থানীয় রাজনীতি তো আছেই। তবে আমার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির কথাটি ঠিক নহে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান একাধিক জনপ্রতিনিধি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীন মনোভাবের কারণে বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। মানষিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অভিভাবক মহল। তদন্তপূর্বক দোষিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
কৃষাণমজদুর ইউনাইটেড ইন্সটিটিউটে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ সাতটি পদ শুণ্য
পূর্ববর্তী পোস্ট