
নিজস্ব প্রতিবেদক: আশাশুনি উপজেলার কুল্যায় ব্রীজের উপর থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া নবজাতকের পরিচয় মিলেছে। নবজাতকটি আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের ফকরাবাদ গ্রামের মিলনময় মন্ডল ও তার স্ত্রী দিপিকা মন্ডলের কন্যা। মিলনময় মন্ডল ফকরাবাদ গ্রামের কার্ত্তিক মন্ডলের পুত্র। চরম ধিক্কার জনক এ ঘটনার সাথে জড়িত নবজাতকের মাতৃকূল, পিতৃকূল ও বহিরাগত সদস্যরা বলে জানাগেছে।
স্থানীয় সূত্রে ও সরেজমিন গিয়ে জানাগেছে, গত সোমবার রাতে বুধহাটা বাজারের জনসেবা ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য ভর্তি করা হয় দিপিকা মন্ডলকে এবং ঐ রাতেই সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কন্যা সন্তানের জন্ম হয় তার। তবে অপারেশনের আগেই পরীক্ষায় তার বিকলঙ্গ কন্যা পেটে আছে বলে দিপিকা ছাড়া অনেকেই জানতো। অপারেশনের পর বিকলঙ্গ সন্তানকে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে শিশুর মা অচেতন থাকার সুযোগে গোপন যোগসাজোসের মাধ্যমে মায়ের কোল থেকে শিশুটিকে নিয়ে গুনাকরকাটি ব্রীজের উপর থেকে ছুড়ে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। পরদিন সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে রক্তাক্ত মৃতপ্রায় শিশুটি বেতনা নদীর চর থেকে কুল্যা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছেত আল হারুণ চৌধুরী আহত নবজাতককে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মৃত্যু বরণ করায় তার পরিচয় সনাক্ত না হওয়ায় নবজাতকের পোস্টমর্টেম ও ডিএনএ পরীক্ষা শেষে মঙ্গলবার রাত ১১টায় গুনাকরকাটি দরবার শরীফে নামাজে জানাজা শেষে দরবার শরীফের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এমন হৃদয় বেদনা দায়ক ঘটনায় ব্যাথিত হয়ে আশাশুনি প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা সেই থেকে শিশু হত্যার সাথে জড়িতদের সন্ধানে মাঠে নামেন। অনুসন্ধানকালে মৃত নবজাতকের মা দিপিকা মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক সাতনদীকে বলেন, আমার জ্ঞান ফেরার পর আমি জানতে পারি উন্নত চিকিৎসার জন্য আমার সন্তানকে সাতক্ষীরায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই ছাড়া তো কিছুই জানিনা। ক্লিনিকেই অবস্থানরত নবজাতকের নানী ও দিপিকা মন্ডলের মাতা উর্মি রানী সরকার বলেন তার স্বামীর মাথা খারাপ। তার কাছে অসুস্থ শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরার পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বাচ্চা কেমন আছে, কোথায় আছে বলতে না পারলেও তার স্বামী বর্তমানে নিজ বাড়ীতে আছে সেটা পারিস্কার ভাবে জানান তিনি। এবিষয়ে জনসেবা ক্লিনিকের পরিচালক ডাঃ শাহিনুর সাংবাদিকদের জানান, তিনি ৭/৮ দিন অসুস্থ। নার্স রোগিকে ভর্তি নেয়। জনৈক ডাঃ কৃষ্ণ’র পাঠানো রোগী ছিল সে। আল্ট্রাস্নো রিপোর্টে বাচ্চা বিকলঙ্গ বলে জানাছিল। জেনেবুঝেই সিজার করা হয়। বাচ্চা অসুস্থ থাকায় সাতক্ষীরা হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু হাসপাতালে না নিয়ে মেরে ফেলানোর ঘটনা তার জানানেই। বাচ্চা কোথায় ও কেমন আছে সে খবর কেন নেননি তিনি (ক্লিনিক পরিচালক)। একই সময় একটি বাচ্চা নদীর চরে ফেলানোর ঘটনা জানার পরও কেন খোজ খবর নেননি, পুলিশকে রিপোর্ট করেনি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।
এদিকে শিশুটির পরিচয় মিললেও তার হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল। এবিষয়ে জানতে চাইলে আশাশুনি থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ গোলাম কবীর সাতনদীকে বলেন, এব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।