
হাফিজুর রহমান: ভাইয়ে ভাইয়ে জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে মা’কে পুজি করে ছোট ভাই কর্তৃক বড় ভাই ভাবী সহ দুই কোমলমতী শিশু শিক্ষার্থীর নামে থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৬ জুলাই বেলা সাড়ে ১০টার সময় সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার চাম্পাফুল গ্রামে। বিষয়টি নিয়ে এ পর্যন্ত থানায় অভিযোগের ভিত্তিতে ১৩ বার বসাবসি করে মিমাংসা করে দিলেও ছোট ভাই একাধিক সহিংস মামলার আসামী, জামাত নেতা আহ্ছান উল্লাহ একের পর এক মিথ্যা মামলায় সর্বশান্ত করতে চলেছে বড় ভাই আসাদুল্লাহ’র পরিবারকে।
শনিবার সকাল ১০টার সময় সরজমিনে চাম্পাফুল গ্রামে গেলে চাম্পাফুল গ্রামের মাওলা ঢালী, হাফিজুল ঢালী, মনো সহ একাধিক ব্যক্তি জানান, কালিগঞ্জ উপজেলার চাম্পাফুল গ্রামের মৃত আব্দুল কাদের মোল্লার পুত্র আসাদুল এবং আব্দুল্লাহ’র সঙ্গে দীর্ঘতিন ৫কাটা জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। ছোট ভাই আহ্ছান উল্লাহ নিজে ৫কাটা জমি বড় ভাই আসাদুলের নিকট বিক্রয় করার নামে ১লক্ষ টাকা নিয়ে জমি দখল দিলেও রেজিষ্ট্রি করা নিয়ে তালবাহানা করতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে থানায় একাধিকবার অভিযোগের ভিত্তিতে মিমাংসা করে দিলেও জমি লিখে না দিয়ে উল্টো আদালতে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করতে থাকে।
গত ১৬ জুলাই বড় ভাই আসাদুলের কন্যা আশাশুনি সরকারি কলেজের একাদ্বশ শ্রেণির ছাত্রী মুক্তা পারভীন, ছোট চাচা আহ্ছানুলের বাড়ীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দাদী সালেহা খাতুন মুক্তাকে শাবল, কচা দিয়ে মারপিট করতে থাকে। তার ডাক-চিৎকারে মা হোসনেয়ারা এবং ছোট ভাই অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মুন্না এগিয়ে গেলে তাদেরকেও চাচা আহ্ছানুল এবং তার স্ত্রী আয়েশা খাতুন এসে মারপিট করে জখম করে। ঐ সময় ঈদের গরু কিনতে যাওয়া মৌতলা গ্রামের জনৈক কোহিনুর দেখতে পেয়ে সালেহা এবং আহ্ছানুলের নিকট হইতে শাবল ও লাঠি কেড়ে নেয়। বিষয়টি নিয়ে গত ২৪ জুলাই কলেজ ছাত্রী মুক্তা বাদী হয়ে চাচা, চাচী এবং দাদীর নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করে।
বিষয়টি আমলে না নিয়ে ছোট ভাই আহ্ছানুলের অভিযোগ নিয়ে থানার উপ-পরিদর্শক ইমরান হোসেন তদন্তে যেয়ে ম্যানেজ হয়ে গত ২৫ জুলাই বড় ভাই, ভাবী সহ তাদের কোমলমতী শিশু শিক্ষার্থীর নামে মামলা দায়ের করে। মামলা নং-১৯। উক্ত মামলায় এস.আই ইমরান হোসেন ঐ রাতেই বড় ভাই আসাদুলকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। বিজ্ঞ আদালত গত ২৯ জুলাই আটক বড় ভাই আসাদুল সহ তার স্ত্রী এবং শিশু দুই শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করে।
এ ব্যাপারে এস.আই ইমরান হোসনের নিকট জিজ্ঞাসা করলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
এর আগে একাধিক সহিংস মামলার আসামী আহ্ছান উল্লাহ, স্ত্রী আয়েশাকে বাদী করে জমি লিখে না দেওয়ার জন্য গত ১০/১১/২০১৬ ইং তারিখে সাতক্ষীরা বিজ্ঞ আদালতে স্বামী আহ্ছান উল্লাহ, ভাসুর আসাদুল্লাহ এবং শ্বাশুড়ী সালেহা খাতুনকে আসামী করে যৌতুক আইনে মামলা করে। মামলা নং- সি.আর ৫৫৬/১৬ (৭)। উক্ত মামলায় বিজ্ঞ আদালত স্বামী আহ্ছানুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারী করলে মামলা তুলে নিয়ে পুনরায় স্ত্রী আয়েশা খাতুনকে বাদী করে গত ৩০/১১/২০১৭ ইং তারিখে আবারো স্বামী, ভাসুর, শ্বাশুড়ী এবং জা হোসনেয়ারা খাতুনের নামে যৌতুকের মামলা করে মামলাটি সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তার নিকট তদন্ত দেন উক্ত আদালত। তদন্তে প্রভাবিত হয়ে স্বামীকে বাদ দিয়ে শ্বাশুড়ী সালেহা খাতুন, ভাসুর আসাদুল ইসলাম এবং জা হোসনেয়ারা খাতুনের নামে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারী হলে আদালতে আত্মসমার্পন করলে বিজ্ঞ আদালত জেল হাজতে প্রেরণ করে। পরে উক্ত মামলায় মা’কে কবজায় এনে একের পর এক বড় ভাই আসাদুল এবং তার পরিবারের উপর মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে।
থানার মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায় এজাহারে চার জন স্বাক্ষীর মধ্যে তিন জন স্বাক্ষী চাম্পাফুলের না হয়ে আহ্ছানুলের শ্বশুর বাড়ী সাতক্ষীরা শৈল্যাগ্রামের লোকজনকে স্বাক্ষী করা হয়েছে অথচ ঘটনাস্থলের কোনো ব্যক্তিকে স্বাক্ষী করা হয়নি। তার পরও ঘটনা তদন্ত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইমরান হোসেন মামলা দায়ের করে দুই শিক্ষার্থীকে জড়িয়ে নানান বিতর্ক শুরু হয়েছে।