
আব্দুর রহিম, কালিগঞ্জ থেকে: কালিগঞ্জে জি-৩ জাতের রুই চাষে সম্ভাবনা দেখছেন মৎস্যচাষীরা। ওয়ার্ল্ড ফিশ উদ্ভাবিত দ্রুত বর্ধনশীল জি-৩ জাতের রুই মাছ চাষে সম্ভাবনা দেখছেন সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ মৎস্য চাষীরা। অন্যান্য প্রজাতির রুই মাছের তুলনায় এটি যেমন দ্রুত বর্ধনশীল, তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। ফলে এ প্রজাতির রুই মাছ চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষীদের মাঝে। উপজেলার কয়েক জন মৎস্যচাষী জানান, গত মৌসুমে যশোর থেকে দুই হাজার পিস জি-৩ রুই মাছের পোনা সংগ্রহ করে ঘেরে অবমুক্ত করেন। ১৫০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি পোনা সাত-আট মাস পর ২ কেজি থেকে ২ কেজি ৫০০ পর্যন্ত ওজন হয়েছে। তিন মাস পর ওই মাছ বিক্রি করবেন বলে জানান তারা। তখন একেকটি রুই মাছ চার কেজির মতো ওজন হতে পারে বলে আশা করছেন। তাদের হিসাব অনুযায়ী পুরো এক বছরে তিন হাজার রুই মাছের উৎপাদন খরচ হবে ৬-৭ লাখ টাকা। আর বাজারে ১৫-১৬ লাখ বিক্রি হবে বলে ধারণা করছেন তাদের। মৎস্যচাষী আব্দুল সেলিম বলেন, এর আগে এত দ্রুত বর্ধনশীল কোনো প্রজাতির রুই মাছ তিনি পাননি। মৎস্য চাষের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এটি। তবে এ প্রজাতির রুই মাছের পোনা দেশে সরবরাহ খুবই কম। পোনার পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে ব্যাপকভাবে লাভবান হতে পারবেন মৎস্যচাষীরা। কারণ বাজারে সব সময় বড় রুই মাছের চাহিদা বেশি এবং দামও ভালো পাওয়া যায়।
হিরারচক গ্রামের খুকু ফিশ অ্যান্ড এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী হাফিজুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে যশোর থেকে জি-৩ জাতের রুই মাছের রেণু পোনা সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলক ঘেরে নার্সিং করেন। তিনি বলেন, দুই মাসের মধ্যে অবিশ্বাস্য গ্রোথ এসেছে ওই পোনার। মাত্র দুই কেজি রেণু পোনা নার্সিং করে এরই মধ্যেই প্রায় ৩০ মণ বিক্রি করেছেন। এখনো তার ঘেরে যে পরিমাণ পোনা মজুদ রয়েছে তা হয়তো আরো ২০-২৫ মণ হতে পারে। মাত্র দুই মাসে রেণু থেকে প্রতিটি পোনা ৪৫-৫০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ফিশের দায়িত্বরত যশোর অঞ্চলের মার্কেটিং স্পেশালিস্ট মো. হাসনাল আলম জানান, রুই মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য বিখ্যাত দেশের তিনটি প্রধান নদী হালদা, পদ্মা ও যমুনা। এসব নদীর রুই থেকে ওয়ার্ল্ড ফিশের বিজ্ঞানীদের ১০ বছরের গবেষণার ফলে উদ্ভাবিত জেনেটিক্যালি ইমপ্রুভড জি-৩ রুই। গবেষণার প্রতিটি স্তরে ওয়ার্ল্ড ফিশের বিজ্ঞানীরা এ রুইয়ের জিনগত বৈশিষ্ট্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন করেছেন আমেরিকায় অবস্থিত তাদের ল্যাবরেটরিতে। গবেষণাকালীন রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ১৯টি খামারের বিভিন্ন পুকুরে এ রুই নদীর রুইয়ের চেয়ে ৩৭ শতাংশ এবং হ্যাচারির সবচেয়ে ভালোমানের রুইয়ের চেয়েও ৫০-৫৫ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দেখা গিয়েছে।
তিনি আরো জানান, জি-৩ রুই কোনো হাইব্রিড রুই নয়। এটি সম্পূর্ণভাবে আমাদের দেশীয় রুই। হালদা-পদ্মা ও যমুনা নদীর রুইয়ের মধ্য থেকে জিনগতভাবে সর্বোৎকৃষ্ট মাছের প্রজননের মাধ্যমে এ রুই উদ্ভাবন করা হয়েছে। আর এ কারণে জি-৩ রুইয়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণ রুইয়ের চেয়ে বেশি। এটি প্রতিকূল পরিবেশেও ভালো বাড়ে। সাধারণ রুই যেখানে এক বছরে ১ থেকে দেড় কেজির বেশি বড় হয় না, সেখানে ভালোভাবে যত্ন নিলে একেকটি জি-৩ রুই ৩ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। এ রুই দেখতে অত্যন্ত সুন্দর এবং খেতেও সুস্বাদু।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান জানান, ওয়ার্ল্ড ফিশ উদ্ভাবিত জি-৩ জাতের রুই এ জেলার মৎস্য চাষীদের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, গত বছর থেকে সাতক্ষীরার কিছু কিছু এলাকায় জি-৩ জাতের রুই মাছ বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে। এ প্রজাতির রুই মাছ চাষে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে চাষীদের মাঝে। বেশি পরিসরে এটি চাষ করতে হলে পোনার সরবরাহ বাড়াতে হবে।