
হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ প্রতিনিধি: জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে রাতের আধারে এক যুবকের গায়ে প্রতিপক্ষের ছোড়া এসিড দিয়ে ঝলসানোর ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকে এনে ২জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে কালিগঞ্জ উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের গোয়ালপোতা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এসিডদগ্ধ রফিকুল ইসলামকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখান থেকে খুলনা ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।আহত রফিকুল ইসলাম (২৬) কালিগঞ্জ উপজেলার গোয়ালপোতা গ্রামের আব্দুল গফফার মোল্যার ছেলে। উক্ত ঘটনায় মঙ্গলবার বেলা ১টার সময় সাতক্ষীরার পদোন্নতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার ইলতিুৎ মিশ, কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার হোসেন, ওসি তদন্ত আজিজুর রহমান সহ পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল তদন্ত করেন। ওই সময় সন্দেহ ভাজন হিসাবে জিজ্ঞাসা বাদের জন্য থানায় ডেকে নিয়ে বাবু গাজী ওরফে বাবু মেম্বর এবং সিরাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তাকৃত সিরাজুল মেম্বর (৩৫) উপজেলার গোয়ালপোতা গ্রামের আব্দুল গফ্ফারের পুত্র এবং রতনপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য অপরজন একই গ্রামের ইমান আলী সরদারের পুত্র সিরাজুল ইসলাম (৩২)। উক্ত ঘটনায় এডিস দগ্ধ রফিকুল ইসলামের স্ত্রী আরিফা খাতুন বাদীয় হয়ে গতকাল মঙ্গলবার এডিস নিক্ষেপ আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে। সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১টার সময় ঘটনাস্থলে গেলে রতনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান জানান, তার বাবা মাষ্টার কওছার আলী দীর্ঘ ৫০ বছর আগে তার নামে ১৯ বিঘা জমি কেনেন। ওই জমি বর্তমানে তার মামাতো ভাই ইউপি সদস্য বাবু গাজীকে দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই জমির অর্ধেক অংশ দাবি করে আসছিলেন তার চাচা মাষ্টার আশরাফ আলী। জমি নিতে চাচা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বেশ কিছু কাগজপত্রও তৈরি করে। সম্প্রতি চাচার পক্ষে রফিকুল, শফিকুলসহ চারটি পরিবারের লোকজন ভূমিহীন সেজে তাদের জমির সামনে কিছুটা খাস জমিতে বসবাস শুরু করে। ভূমিহীনদের সহায়তায় চাচা প্রায় ছয় বিঘা জমি দখলে নেন। জমির দখল সংক্রান্ত বিষয়ে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত তাদের পক্ষে রায় দিলে গত ২মাস আগে মামা আব্দুল গফফারের ছেলে ইউপি সদস্য বাবু গাজী, ইমান আলী সরদারের ছেলে সিরাজুল ইসলাম, লিয়াকত আলীর ছেলে টুটুল ও শাহীন দখল করতে গেলে তাদের সঙ্গে চাচাত ভাই সাইফুলদের মারামারি হয়। এতে উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকে। এ ঘটনায় তাদের পক্ষে ভাই সাইফুল ইসলাম বাদি হয়ে চাচা আশরাফ মাষ্টারের ছেলে ছোটন, তাদের ভাগ্নে শরিফুল, শফিকুল ও মুকুলসহ ২১ জনের নামে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ছোটন, শরিফুল, শফিকুল ও মুকুল দীর্ঘদিন জেল হাজতে থাকে। জেল থেকে বের হয়ে অক্টোবর মাসের শেষের দিকে ছোটন বাদি হয়ে ১৮ জনের নামে আদালতে একটি মামলা করে। আদালত মামলার তদন্তভার কালিগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দেন। এরপর থেকে চাচা আশরাফ ও তার ছেলেরা জমি দখলে রাখতে নানা ফন্দি আটছিল। এরই অংশ হিসেবে সোমবার রাতে এসডি মারার নাটক সাজানো হয়েছে বলে তারা জানান। শফিকুল ইসলাম বলেন, এক সময় তারা রতনপুর ইউনিয়নের কাশিশ্বরপুর গ্রামে বসবাস করতেন। সেখান থেকে উঠে এসে তার ফুফাত ভাই রফিকুলসহ চারটি পরিবার তাদের আত্মীয় আশরাফ মাষ্টার ও কওছার মাষ্টারের ১৯ বিঘা জমির সামনে থাকা সরকারি খাস জমিতে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করে আসছিলেন। তারা আশরাফ মাষ্টারের লোক ভেবে বাবু গাজীও তার লোকজন বিভিন্ন সময়ে হুমকি ধামকি ও তাদের নামে মামলা দিয়ে আসছে। ২ মাস আগে জমি নিয়ে মারপিটের সময় উভয়পক্ষকে নিয়ে বসাবসি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী। সেখানে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য উভয়পক্ষ মামলা করবেন না বলে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিবদ্ধ হন। এর পর হইতে আশরাফ মাষ্টার ৯ বিঘা এবং বাবুল মেম্বর ১৩ বিঘা জমি ভোগ দখল করে আসছে। এর দু’ দিন পর কওছার মাষ্টারের পক্ষে আদালতে দায়েরকৃত মামলায় তারা চারজন জেল খাটেন। তিনি আরো জানান, হুমকি ধামকির অংশ হিসেবে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে বাইরে এলে পিছন দিক থেকে রফিকুলকে এসিড মেরে ঝলসে দেয় বাবু গাজী, সিরাজুল ও টুটুল। ভাই এর চিৎকার শুনে তিনি হামলাকারিদের ধাওয়া করলে তাকেও ধাক্কা মেরে একটি পালচার মোটর সাইকেলে পালিয়ে যায় ওই তিনজন বলে জানান। এরপর খালা জাহিদাসহ কয়েকজন তাকে নিয়ে পানি ঢালার এক পর্যায়ে খালার ডান কাঁধও ঝলসে যায়। মারাত্মক জখম অবস্থায় রফিকুলকে প্রথমে কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করা হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়। আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় মঙ্গলবার সকালে রফিকুলকে খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা ১টার সময় সাতক্ষীলা পদোন্নতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার ইলতিুৎ মিশ ঘটনাস্থলে তদন্ত গেলে
রফিকুলের স্ত্রী আরিফা খাতুন জানান, বাবু মেম্বর ও সিরাজুলসহ কয়েকজন তার স্বামীকে এসিড মেরে ঝলসে দিয়েছে। খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ তরিবুল ইসলাম বলেন, রফিকুলের শরীরের ৩০ শতাংশ দাহ্য পদার্থ দিয়ে ঝলসে দেওয়া হয়েছে। এটা এসিড কিনা বা কি ধরণের এসিড তা পরীক্ষা না করে বলা যাবে না। রফিকুলকে ঢাকায় ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন বলেন, রফিকুল ইসলামের উপর এসডি নিক্ষেপের ঘটনায় সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইলতুৎ মিশ মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন। রফিকুলের স্ত্রী আরিফা, খালা জাহিদাসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং রফিকুলের স্ত্রী আরিফা বেগম বাদী হয়ে থানা একটি মামলা দায়ের করেছে এবং এই ঘটনায় বাবু মেম্বর এবং সিরাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন। তবে মামলায় তদন্তে প্রকৃত আসল সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে তিনি জানান। এ প্রসঙ্গে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদ মেহেদী এবং ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান সহ একাধিক ব্যাক্তি এ প্রতিবেদকে জানান ঘটনাটি একটি সাজানো ঘটনা আশরাফ মাষ্টার এবং তার পুত্র একাধিক মামলার আসামী আরিফুর রহমান ওরফে ছোটনের পরিকল্পনা মাফিক এই এসিড নাটক সাজানো হয়েছে। তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসবে।